চিকিৎসকসহ বিভিন্ন শ্রেণির নারী কর্মচারীদের যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে গুরুদাসপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা চিকিৎসক মো. মুজাহিদুলের বিরুদ্ধে। চাকরি টিকিয়ে রাখা এবং সামাজিকতার ভয়ে মুখ বুজে এই কর্মকর্তার নির্যাতন সহ্য করেছেন নির্যাতিতরা।
সম্প্রতি যৌন হয়রানির শিকার হয়ে এক মেডিকেল অফিসার সিভিল সার্জনের কাছে মৌখিক অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করে সিভিল সার্জন ইত্তেফাককে জানান, স্বাস্থ্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ তিনি শুনেছেন। তিনি এ ব্যাপারে পরে কথা বলতে চান।
যৌন হয়রানির শিকার একাধিক ব্যক্তি ইত্তেফাককে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে ইত্তেফাকের পক্ষ থেকে দীর্ঘদিন অনুসন্ধান করা হয়। অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্যমতে, শুধু চিকিৎসক নন। দ্বিতীয়, তৃতীয় এবং চতুর্থ শ্রেণির নারী কর্মচারীদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের সময় হাসপাতালের একাধিক সূত্র ইত্তেফাককে জানিয়েছে, চিকিৎসক মুজাহিদুল এক তরুণীর সঙ্গে অবৈধভাবে মেলামেশা করায় ওই তরুণী অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। একপর্যায়ে টাকার বিনিময়ে বিষয়টি মীমাংসা করে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে ওই তরুণীকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চতুর্থ শ্রেণির চাকরি দেওয়া হয়। বিষয়টি জানাজানি হলে হাসপাতাল কমিটির সভাপতি প্রয়াত সংসদ সদস্য আব্দুল কুদ্দুস ওই তরুণীকে হাসপাতাল থেকে বের করে দেন। ওই সময় নিজের যৌন কেলেঙ্কারির কথা স্বীকার করে গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে ক্ষমাও চান এই কর্মকর্তা।
অনুসন্ধান বলছে, স্বাস্থ্য কর্মকর্তার সঙ্গে অনৈতিক কার্যকলাপের জন্য ওই তরুণীকে চাকুরিচ্যুত করা হলেও পরবর্তীতে হাসপাতালে কর্মরত একাধিক চিকিৎসককে জোরপূর্বক যৌন হয়রানি করেছেন এই কর্মকর্তা। স্বাস্থ্য কর্মকর্তার সঙ্গে অনৈতিক কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়ায় সবশেষ এ বছরের ১৪ আগস্ট আরও তিন তরুণীকে চাকুরিচ্যুত করেন প্রয়াত সংসদ সদস্য আব্দুল কুদ্দস।
যৌন হয়রানির শিকার একাধিক চিকিৎসক (বিসিএস স্বাস্থ্য) ইত্তেফাককে জানান, যেকোনো প্রয়োজনে স্বাস্থ্য কর্মকর্তার অফিস কক্ষে গেলে তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ট হতে চাইতেন এই কর্মকর্তা। বিভিন্ন অজুহাতে কাছে বসিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থানে হাত দিয়ে যৌন হয়রানি করতেন।
আরও কয়েকজন চিকিৎসক (বিসিএস স্বাস্থ্য) অভিযোগ করেন, বদলির জন্য ছাড়পত্র নিতে গেলে স্বাস্থ্য কর্মকর্তার কাছে ঘনিষ্ট হয়ে বসতে হতো। একান্ত সময় কাটাতে হতো। ইচ্ছা না থাকলেও স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জোরপূর্বক শরীরে হাত দিতেন। চাকরি বাঁচানো এবং সম্মানের ভয়ে এসব বিষয় চাপা রেখেছিলেন তারা।
হাসপাতালের এক সহকারী চিকিৎসক বলেন, ২০১৮ সালের দিকে এক তরুণীকে নিজের একান্ত সহকারী হিসেবে চাকরি দিয়েছিলেন চিকিৎসক মুজাহিদুল। সে সময় স্বাস্থ্য কর্মকর্তা তার অফিস কক্ষেই ওই তরুণীর সঙ্গে একাধিকবার শারীরিক সম্পর্কে জড়ান। ওই তরুণী এসব ঘটনার কথা সহকর্মীদের জানিয়েছেন বলে দাবি করেন এই চিকিৎসক।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে যৌন হয়রানির শিকার আরও দুই চিকিৎসক (বিসিএস স্বাস্থ্য) অভিযোগ করেন, বছর দুয়েক আগে তিনি গুরুদাসপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগদান করেন। সে সময় অফিস কক্ষের মধ্যে একা পেয়ে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা তার বুকে হাত দেন। এ সময় তিনি কাঁদতে কাঁদতে বেরিয়ে গিয়ে কয়েকজন সহকর্মীকে বিষয়টি অবগত করেন। একপর্যায়ে হাসপাতালের অভ্যন্তরে মিটিংয়ের মাধ্যমে ওই কর্মকর্তা তার কাছে ক্ষমা চান। ওই ঘটনার পরও একাধিক নারীর সঙ্গে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা এসব ঘটনা ঘটিয়েছেন। তারা এই কর্মকর্তার বিচার দাবি করেন।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মুজাহিদুল ইসলাম ইত্তেফাককে জানান, তার বিরুদ্ধে করা যৌন হয়রানির কথা ভিত্তিহীন। মূলত মানহানি করতেই তার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ করা হয়েছে।
নাটোর জেলা সিভিল সার্জন মশিউর রহমান বলেন, মৌখিক অভিযোগ পেয়েছি। লিখিত অভিযোগ পেলে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা হবে।
সুত্রঃ দৈনিকে ইত্তেফাক