আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাইবার মনিটরিং ও অব্যাহত অভিযানের কারণে জঙ্গিরা এখন আর আগের মতো সংগঠিত হতে পারছে না। এমনকি সংঘবদ্ধ কোনো হামলা বা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালানোর মতো সক্ষমতাও তাদের নেই।
দেশ শিক্ষিতদের মধ্যে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ার হার ১৯.৫%। এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া ১৩.১%। এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ২০.৭%। আন্ডারগ্র্যাজুয়েট ৩০.৮% এবং পোস্ট গ্র্যাজুয়েটদের মধ্যে জঙ্গিবাদের জড়িয়ে পড়ার হার ১৫%। মাদ্রাসা ব্যাকগ্রাউন্ডের রয়েছে ২৩% এবং সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত ৭৪%।
২০১৬ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত গ্রেপ্তার ৫১২ জঙ্গির তথ্য পর্যালোচনা এই তথ্য জানিয়েছে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)।
৬৮.৭% জঙ্গির বয়স ১৫ থেকে ৩৪ বছরের মধ্যে। তাদের মধ্যে আবার ২৭.৫% এর বয়স ২০ থেকে ২৪ বছর। ২৫ থেকে ২৯ বছর বয়সী ২০.১%, ৩০ থেকে ৩৪ বছর বয়সী ১৩.৫%, ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী ৭.৬%।
গ্লোবাল টেরোরিজম ইনডেক্সে উন্নতি
গ্লোবাল টেরোরিজম ইনডেক্সের তালিকায় জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ বা নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশের পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। বেশ কয়েক বছরের তথ্যে দেখা গেছে, ২০১৬ সালে জঙ্গিবাদের ঘটনা বিশ্লেষণে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ২২, ২০১৭ সালে ২১, ২০১৮ সালে ২৫, ২০১৯ সালে ৩১, ২০২০ সালে ৩৩, ২০২২ সালে ৪০, ২০২৩ সালে ৪৩ তম অবস্থানে রয়েছে।
অনলাইনে সক্রিয় জঙ্গিরা
অনলাইনে মাধ্যমে এখনো জঙ্গিরা সক্রিয় রয়েছে। বিভিন্ন অ্যাপ ব্যবহার করে জঙ্গিরা সদস্য সংগ্রহ, প্রশিক্ষণসহ বিভিন্নভাবে তৎপরতা চালাচ্ছে।
সিটিটিসি জানিয়েছে, নিষিদ্ধ ঘোষিত আনসার আল ইসলাম ও হিজবুত তাহরীর, নিউ জেএমবির অনলাইন কর্মকাণ্ড নতুন করে আলোচনায় এসেছে। এছাড়া আনসারুল্লাহ বাংলা টিম থেকে গঠিত জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার নেতাদের সম্প্রতি গ্রেফতারের পর সংগঠনটি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, জঙ্গি সদস্যরা বর্তমানে অনলাইনে তৎপর রয়েছে। ৮২% জঙ্গি বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে র্যাডিকালাইজেশনের জন্য টার্গেট সংগ্রহ করছে। আর টার্গেট ব্যক্তিদের তথ্য ঘেঁটে দেখা গেছে, ১৫ থেকে ৩৪ বছর বয়সী তরুণরাই জঙ্গি সংগঠনগুলোর বেশি টার্গেট হয়ে থাকে। এই বয়সী তরুণ-তরুণীরা জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়েছে বেশি।
জঙ্গিদের ওপর গবেষণা
সিটিটিসি গবেষণা তথ্য বলছে, যখনই জঙ্গি সম্পৃক্ততার অভিযোগে কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়- একইসঙ্গে ওই জঙ্গির সামাজিক অবস্থান, জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ার প্রমাণাদিসহ যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করা হয়। পর সময়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার সময় গ্রেপ্তার জঙ্গি সম্পর্কে আদালতকে সুস্পষ্ট পরিচয়, ঠিকানা এবং বিভিন্ন বিষয় অবহিত করা হয়। বিভিন্ন সময় ৩৪টি গবেষণার ভিত্তিতে এসব তথ্য সংগ্রহ করেছে সিটিটিসি। জঙ্গিদের নিয়ে সংস্থাটির আরও ১০টি গবেষণা চলমান রয়েছে।
কমেছে জঙ্গি হামলার ঘটনা
সিটিটিসির তথ্য বলছে, জঙ্গি তৎপরতা আগের চেয়ে অনেকটাই কমেছে। তবে ২০১৫-১৬ সালে দেশে জঙ্গিবাদ যেভাবে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল, ২০২২ সালে এসে দেশে জঙ্গি হামলার ঘটনা থেমে যায়। ২০১৫ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ৭ বছরে দেশে জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটেছে ৫০টি। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি ২১টি হামলার ঘটনা ঘটে ২০১৬ সালে।
সিটিটিসি বলছে, ২০২২ সালে দেশে কোনো জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটেনি। ২০২১ সালে জঙ্গি হামলা হয়েছিল একটি। ২০২০ সালে দুটি, ২০১৯ সালে ছয়টি, ২০১৮ সালে দুইটি, ২০১৭ সালে তিনটি, ২০১৬ সালে সর্বোচ্চ ২১টি, ২০১৫ সালে ১৫টি জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটে।
নজর রাখছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী
কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যশনাল ক্রাইম ইউনিটের অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান এই প্রতিবেদককে বলেন, “বিভিন্ন দেশে উগ্রবাদ কিংবা জঙ্গিবাদের সমস্যা যেমন আমাদের দেশকে প্রভাবিত করে, তেমিই এদেশের কোনও ঘটনা সারাবিশ্বে আলোচিত বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। গুলশানের হলি আর্টিজনের হামলার ঘটনার পর বাংলাদেশকে একটি জঙ্গিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে প্রমাণ করার অপচেষ্টা শুরু হয়েছিল। বর্তমানে বাংলাদেশ সন্ত্রাসবাদ দমনে বিশ্বের কাছে রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে।”
তিনি বলেন, “জঙ্গিবাদ দমনে আগে হার্ড অ্যাপ্রোচ অপারেশনাল পদ্ধতির মাধ্যমে কাজ করা হতো। কিন্তু বর্তমানে সফট অ্যাপ্রোচের মাধ্যমেও সিটিটিসি কাজ করছে। আমরা যদি সন্ত্রাসবাদ দমন করতে চাই, তাহলে সন্ত্রাসবাদ উত্থানের উপাদান, সেগুলো নির্মূল করতে হবে। তাহলে আমাদের সমাজে সন্ত্রাসবাদ ও উগ্রবাদ নিয়ন্ত্রণ রাখা সম্ভব। তবে এত কিছুর পরেও আমরা আত্মতুষ্টিতে ভুগছি না। সব দিকেই নজর রাখা হচ্ছে।”
ঢাকা ট্রিবিউন