মুসলিম বিশ্বে ব্যাপক নিন্দা ও প্রতিবাদ বিক্ষোভের ঝড় ওঠা সত্ত্বেও গাজায় হামলা বন্ধের পরিবর্তে আরো তীব্রতা বাড়িয়েছে ইসরায়েল। দফায় দফায় বিমান হামলায় গাজার বিস্তীর্ণ এলাকা ধূলিস্মাত্ করেছে তারা। গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি বেপরোয়া হামলায় আরো ২৬৬ জন নিহত হয়েছে। এদের মধ্যে শিশু ১১৭ জন। ধ্বংসস্তূপ থেকে হতাহতদের উদ্ধার চলছে। প্রতিনিয়তই হাসপাতালে আনা হচ্ছে হতাহতদের।
এদিকে গত ৮ অক্টোবর ইসরায়েলি হামলা শুরু হবার পর গাজায় এ পর্যন্ত মোট নিহত হয়েছে ৪ হাজার ৬৫১ জন, এবং আহত হয়েছে ১৪ হাজার ২৪৫ জন। অন্যদিকে হামাসের হামলায় এ পর্যন্ত ১ হাজার ৪০৫ জন ইসরায়েলি নিহত এবং ৫ হাজার ১৩২ জন আহত হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ইসরায়েলের সামরিক ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য নতুন ডিফেন্স সিস্টেম পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।
ধূলিস্মাত্ বিস্তীর্ণ এলাকা: গত এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে চলা বিমান হামলায় গাজার উত্তরাঞ্চল ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলো প্রায় মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। বিশাল বিশাল সুরম্য ভবন এখন কেবলই ধ্বংসস্তূপ। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, ইসরায়েলের বিমান হামলায় মারা যাওয়া মানুষের অর্ধেকের বেশি নারী ও শিশু। জাতিসংঘ বলছে, এখন পর্যন্ত গাজার ১৪ লাখের বেশি বাসিন্দা বাস্তুচ্যুত হয়েছে, যাদের মধ্যে ৫ লাখের বেশি মানুষ জাতিসংঘ নিয়ন্ত্রিত ১৪৭টি আশ্রয়কেন্দ্রে থাকছেন।
গাজায় উত্তরাঞ্চলের অধিকাংশ ভবন ইসরায়েলি বিমান হামলায় ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় জাতিসংঘের স্কুল ও হাসপাতালগুলোতে আশ্রয়ও নিয়েছেন অসংখ্য মানুষ। তবে সেসব হাসপাতালও এখন খালি করতে বলা হচ্ছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে। ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট জানিয়েছে, গাজার উত্তরের আল কুদস হাসপাতাল খালি করার নির্দেশ দিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। এই হাসপাতালে বর্তমানে ৪০০ রোগী এবং ১২ হাজার বাস্তুচ্যুত বেসামরিক নাগরিক রয়েছেন। তবে হাসপাতালের দায়িত্বে থাকা কর্তৃপক্ষ ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো শুরু থেকেই হাসপাতাল খালি করার নির্দেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে আসছে।
মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র: পেন্টাগন জানিয়েছে তারা মধ্যপ্রাচ্যে টার্মিনাল হাই আল্টিচিউড এরিয়া ডিফেন্স (টিএইচএএডি) সিস্টেম পাঠাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যে। এর সঙ্গে বিশেষ ধরনের বিমান প্রতিরক্ষা সিস্টেমও পাঠানো হচ্ছে ঐ অঞ্চলে। স্বল্প ও মধ্যম রেঞ্জের বালিস্টিক মিসাইল আঘাত করার কিছুক্ষণ আগে নিষ্ক্রিয় করতে সক্ষম এই সিস্টেম। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন জানিয়েছেন, এই সিস্টেমগুলোর পাশাপাশি ‘যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত’ অতিরিক্ত সৈন্যও পাঠানো হচ্ছে ঐ এলাকায়।
আরো ট্রাক প্রবেশের প্রত্যাশা: গাজার দক্ষিণাঞ্চলের রাফাহ ক্রসিং দিয়ে মিশর থেকে গাজার ভেতর শনিবার খাবার, পানি ও জরুরি ওষুধ নিয়ে ২০টি ট্রাক প্রবেশ করার অনুমতি দিয়েছিল ইসরায়েলি বাহিনী। জাতিসংঘ আশা করছে আরো কিছু ট্রাক প্রবেশ করার অনুমতি দেবে ইসরায়েল। জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থার প্রধান মার্টিন গ্রিফিথ আশা করছেন যে, আরো অন্তত ২০ থেকে ৩০টি ট্রাক গাজার ভেতর প্রবেশ করতে দেওয়া হবে। শনিবার গাজার ভেতর যে ২০টি ট্রাক প্রবেশ করতে দেওয়া হয়েছিল, সেগুলোতে যে পরিমাণ ত্রাণ ও খাবার গাজায় ঢুকেছে, তা প্রয়োজনের তুলনায় অতি সামান্য বলে মন্তব্য করেছিল জাতিসংঘ।
শরণার্থীশিবিরে হামলা: পশ্চিম তীরে একটি শরণার্থী-ক্যাম্পে ইসরায়েলের হামলায় ১৩ জন নিহত হবার খবর দিয়েছে জাতিসংঘ। নিহতদের মধ্যে পাঁচ জন শিশু রয়েছে। ইসরায়েলের দখলকৃত পশ্চিম তীরে প্রায় ৩০ লাখ ফিলিস্তিনি বসবাস করে। গত ৫০ বছরে ইসরায়েল পশ্চিম তীর এবং পূর্ব জেরুসালেমে বিপুল সংখ্যক বসতি স্থাপন করেছে, যেখানে এখন প্রায় ৭ লাখ ইহুদি বসবাস করে। যদিও আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী এ ধরনের বসতি বৈধ নয়।
হামলা বাড়ানোর ঘোষণা: ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারি বলেছেন, হামাসকে লক্ষ্য করে বিমান হামলা আরো জোরদার করা হবে। তিনি গাজার অধিবাসীদের মধ্যে এখনো যারা সেখানে অবস্থান করছেন, তাদেরকে গাজার দক্ষিণাঞ্চলে সরে যেতে বলেছেন। উত্তরাঞ্চলে লিফলেট ছেড়ে অধিবাসীদের দক্ষিণের দিকে সরে যেতে বলা হচ্ছে। যারা সরবে না তাদের ‘হামাস’ হিসেবে গণ্য করে হামলার হুমকি দিয়েছে তারা।
সাড়ে ৩৮ টন ত্রাণ পাঠাল ভারত: ফিলিস্তিনের যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার নাগরিকদের জন্য সাড়ে ৩৮ টন ত্রাণসহায়তা পাঠিয়েছে ভারত। মিশরের সিনাই অঞ্চল হয়ে এ মানবিক সহায়তা গাজাবাসীর কাছে পৌঁছানো হবে বলে জানিয়েছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি বলেন, ভারতের বিমানবাহিনীর একটি উড়োজাহাজে করে সাড়ে ৬ টন চিকিত্সাসরঞ্জাম ও ৩২ টন ত্রাণসহায়তা ফিলিস্তিনের জনগণের জন্য পাঠানো হচ্ছে। রবিবার উড়োজাহাজটি মিশরের আল আরিশ বিমানবন্দরের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে।
সুত্রঃ ইত্তেফাক