গ্রেফতার জঙ্গি ইমতিয়াজ সেলিম ওরফে ইমাদুল আমিন
নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হিজবুত তাহরীর বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নেতা ইমতিয়াজ সেলিম ওরফে ইমাদুল আমিনকে (৪১) গ্রেফতারের তথ্য জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিসিসি) ইন্টেলিজেন্স অ্যানালাইসিস বিভাগ। মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর) রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
সিটিটিসি জানায়, গ্রেফতার ইমতিয়াজ সেলিমের সাংগঠনিক ছদ্মনাম ইমাদুল আমিন। তিনি দেশের একটি বহুজাতিক কোম্পানির কর্মকর্তা, এই পরিচয়ের আড়ালে দীর্ঘদিন ধরে জঙ্গি সংগঠনটির শীর্ষ পর্যায়ে কাজ করছেন এবং নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। তিনি সমানতালে পেশাগত পরিচয়ে কাজ করার পাশাপাশি কাজ করে আসছেন হিজবুত তাহরীরের নীতিনির্ধারক হিসেবে। গত ৮ ডিসেম্বর ডিএমপির রমনা থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে দায়ের করা মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।
বুধবার (১৩ ডিসেম্বর) রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার ও সিটিটিসি প্রধান মো. আসাদুজ্জামান। তিনি বলেন, ২০০১ সালে প্রতিষ্ঠিত জঙ্গি সংগঠন হিজবুত তাহরীরকে বাংলাদেশে ২০০৯ সালে নিষিদ্ধ করে সরকার। সংগঠনটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে দেশে জঙ্গি ও মৌলবাদী কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল। এরই ধারাবাহিকতায় তারা গত কয়েক বছর ধরে অনলাইনে সম্মেলন আয়োজনের মাধ্যমে নিষিদ্ধ সংগঠনের কর্মকাণ্ড গতিশীল করতে বিভিন্ন প্রচার প্রচারণা চালিয়ে আসছিল।
সর্বশেষ চলতি বছরের এপ্রিলে এই সংগঠনের একটি অনলাইন সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনটি লেবাননভিত্তিক একটি ইউটিউব চ্যানেলে প্রচার করা হয়। এ সম্মেলনে অংশ নিতে সংগঠনের সদস্যরা রাজধানীসহ সারা বাংলাদেশে পোস্টারিং এবং অনলাইনে প্রচার-প্রচারণা চালায়। সম্মেলনে দুই জন বক্তা এবং একজন উপস্থাপক অংশ নেন এবং তারা প্রত্যেকেই ছদ্মনাম ব্যবহার করেন। এ সম্মেলনে বক্তারা সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সরকারের সম্পর্ক নিয়ে ভুল তথ্য উপস্থাপন করেন। ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়েও দেশের সাধারণ মানুষকে হিজবুত তাহরীরের নেতৃত্বে শাসন ব্যবস্থা কায়েমের মাধ্যমে ইসলামি রাষ্ট্র তথা খেলাফত প্রতিষ্ঠার জন্য উসকানি দেন। ওই সম্মেলনে দ্বিতীয় বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন ইমতিয়াজ সেলিম ওরফে ইমাদুল আমিন।
ইমতিয়াজ সেলিম ২০২১ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ও ৩ ডিসেম্বর আরও দুটি অনলাইন সম্মেলনে বক্তা হিসেবে গণতন্ত্র ও দেশের প্রচলিত আইনকে অস্বীকার করে বক্তব্য দেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে সিসিটিসি প্রধান জানান, ইমতিয়াজ সেলিম বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ ও ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজে মাস্টার্স ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। বর্তমানে তিনি রাজধানীর বনানীতে একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির বিক্রয় বিভাগের প্রধান হিসেবে কাজ করছিলেন। দীর্ঘদিন ধরে জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িত ইমতিয়াজ মার্শাল আর্টে ব্ল্যাক বেল্টধারী। বাংলাদেশ জাতীয় কারাতে ফেডারেশনের তালিকাভুক্ত প্রশিক্ষক ও আন্তর্জাতিক রেফারি।
এছাড়া তিনি জাপান কারাতে অ্যাসোসিয়েশনের লাইসেন্সধারী প্রশিক্ষক। বিশেষ অ্যাপ ও এনক্রিপ্টেড অ্যাপের মাধ্যমে হিজবুত তাহরীর সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন তিনি। পাশাপাশি বিভিন্ন কৌশলে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে সমন্বয় করে কার্যক্রম চালিয়ে আসছিলেন। সাম্প্রতিক সময়ে সরকার ও দেশবিরোধী পোস্টার, মসজিদে মসজিদে বয়ানসহ নানা কার্যক্রমে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ও অনলাইন সম্মেলনগুলোতে সমন্বয়ক হিসেবে বক্তব্য দিতেন তিনি।
আসাদুজ্জামান আরও জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ে ২০১০ সালে তার এক বন্ধুর মাধ্যমে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন হিযবুত তাহরীর সম্পর্কে জানেন এবং সদস্য হিসেবে যোগ দেন। একই বছরের ১২ মে হিজবুত তাহরীরের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতারও হন। তার বিরুদ্ধে বাড্ডা থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। এই মামলায় ছয় মাস কারাগারে থাকেন।
কারাগারে থাকার সময় ইমতিয়াজ সেলিম হিজবুত তাহরীর প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক ড. সৈয়দ গোলাম মাওলা ও প্রফেসর মহিউদ্দিনের সান্নিধ্য লাভ করে। কারাগারে বসে তাদের বয়ানে আরও বেশি অনুরক্ত হয়ে পড়েন তিনি। পরে জামিনে মুক্তি পেয়ে পরিবার নিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় চলে যান। সেখানে এক বছর থাকার পরে দেশে ফিরে আবারও হিজবুত তাহরীরের সদস্য হিসেবে কার্যক্রম চালিয়ে যেতে শুরু করেন।
সুত্রঃ বাংলা ট্রিবিউন