নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন ‘আনসার আল ইসলাম’ এর ৩ জন সক্রিয় সদস্যকে আটক করেছে খুলনা র্যাব-৬। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বটিয়াঘাটা থানাধীন সাচিবুনিয়া এলাকা থেকে তাদেরকে আটক করা হয়। এ সময় বিভিন্ন উগ্রবাদী বই, লিফলেট ও মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।
আটককৃতরা হলেন- ঠাকুরগাঁও জেলার উওর ঠাকুরগাঁও এলাকার জিতেন দাসের ছেলে ইলিয়াস দাস আব্দুল্লাহ ওরফে হুজাইফা উসামা (২৭), পাবনা জেলার খয়েরসুতি গ্রামের মোঃ রবিউল ইসলামের ছেলে মোঃ সাব্বিরুল ইসলাম সাব্বির ওরফে আবু সাব্বির আল বাঙালি (২০) এবং গোপালগঞ্জ জেলার কোটালিপাড়ার কুলপাড়া গ্রামের ইলিয়াস লস্করের ছেলে শামিম লস্কর (১৯)। এ সময় অজ্ঞাত আরও ৩/৪ জন সদস্য পালিয়ে যায়।
র্যাব-৬ এক প্রেস বিজ্ঞপ্তি জানিয়েছে, শুক্রবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে র্যাব সদর দফতরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-৬ এর একটি আভিযানিক দল গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে জানতে পারে যে, খুলনা জেলার বটিয়াঘাটা থানাধীন সাচিবুনিয়া রেল ক্রসিং সংলগ্ন এলাকায় জঙ্গি সংগঠনের সদস্য একত্রে মিলিত হয়ে গোপন বৈঠক করছে। এরই প্রেক্ষিতে সাচিবুনিয়া রেল ক্রসিং সংলগ্ন একটি টিনসেড ঘরে অভিযান পরিচালনা করে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন ‘আনসার আল ইসলাম’ এর ওই ৩ জন সক্রিয় সদস্যকে আটক করা হয় এবং অজ্ঞাত আরও ৩ থেকে ৪ জন সদস্য পালিয়ে যায়। এ সময় তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন উগ্রবাদী বই, লিফলেট ও মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।
জানা যায়, আটককৃত ইলিয়াস দাস আব্দুল্লাহ ওরফে হুজাইফা উসামার বাড়ি ঠাকুরগাঁও হলেও সে মিরপুরে অবস্থান করে একটি পণ্যের মার্কেটিং এ চাকরি করতো। সে একজন নব্য মুসলিম ছিল। ২০১৮ সালে সে খ্রিস্টান ধর্ম ত্যাগ করে ধর্মান্তরিত হয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে। প্রথমে ইন্টারনেটে বিভিন্ন দেশের নির্যাতিত মুসলমানদের উপর নির্যাতনের ভিডিও দেখে সে জিহাদে উদ্ভূদ্ধ হয় এবং পরবর্তীতে পার্শ্ববর্তী দেশের সমমনা একজনের সাথে তার যোগাযোগ স্থাপিত হয়। পাশ্ববর্তী দেশের ওই ব্যক্তি তাকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে আনসার আল ইসলামের হয়ে সদস্য সংগ্রহ করে প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যে পার্শ্ববর্তী দেশে পাঠানোর জন্য সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করতে বলে। আব্দুল্লাহ তার নিজ এলাকা ঠাকুরগাঁওয়ে এর দাওয়াতি কাজ শুরু করে এবং বর্তমানে আটক হওয়ার আগ পর্যন্ত ঠাকুরগাঁও এর দাওয়াতি শাখার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিল। “কিতাল ফি ছাবিলিল্লাহ” নামে একটি মেসেঞ্জার গ্রুপের এ্যাডমিন এই আব্দুল্লাহ। এই গ্রুপে বিভিন্ন উগ্রবাদী ছবি, ভিডিও ও কন্টেন্ট শেয়ার করে সদস্যদের উগ্রবাদে উদ্ভূদ্ধ করা হত।
ঠাকুরগাঁও ছাড়াও সংগঠনের অন্যান্য জেলার সদস্যদের সাথে তার নিয়মিত যোগাযোগ ছিল এবং মাঝে মধ্যেই সে অন্য জেলার সদস্যদের সাথে গোপন বৈঠক করতো। সে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে এবং বাইরে গাজোয়া-তুল হিন্দ প্রতিষ্ঠার নামে হিংসা বিদ্বেষ ছাড়াতো। পার্শ্ববর্তী দেশের উগ্র জঙ্গিবাদী গোষ্ঠীর সাথে যোগাযোগের পাশাপাশি নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের জন্য সহমর্মিতা প্রকাশ করে বক্তব্য প্রদানকারী কয়েকজনের সাথে তার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে।
আটককৃত আরেকজন মোঃ সাবিরুল ইসলাম সাব্বির ওরফে আবু সাব্বির আল বাঙ্গালি একজন ছাত্র। তার বাড়ি পাবনা জেলায়। সে পূর্বে আটককৃত আনসার আল ইসলামের দাওয়াতি শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত মোঃ ইয়াকুব হুজুর এর মাধ্যমে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়। সে ইয়াকুব হুজুরের সাথে একাধিকবার দেশের বিভিন্ন স্থানে দাওয়াত ও বয়ান দেয়ার জন্য গমন করেছে। তার সাথে আনসার আল ইসলামের অন্য একটি দেশে অবস্থানরত মনিরুল ইসলামের যোগাযোগ রয়েছে। তাদের ভাষ্য মতে, গণতন্ত্র হচ্ছে কুফরি মতবাদ এবং এই গণতন্ত্রের নামে ভোটাভুটিও তাগুদের কাজ। তাই এই কুফরি কাজ নস্যাৎ করার জন্য তারা বদ্ধপরিকর ছিল।
অপরদিকে আটককৃত শামিম লস্করও একজন ছাত্র। সে আটক ইলিয়াস দাস আব্দুল্লাহ ওরফে হুজাইফা উসামা এর মাধ্যমে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে সংগঠনে যোগদান করে দাওয়াতী কার্যক্রম করতে থাকে। সে তার নিজ এলাকা-গোপালগঞ্জে দাওয়াতী কার্যক্রম পরিচালনা করত। এছাড়াও সে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে সংগঠনের প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে সাধারণ মানুষদের উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ করে আসছিল। এছাড়াও সে তার নিজ এলাকা গোপালগঞ্জে দাওয়াতী কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি সংগঠনে নিয়মিত চাঁদা প্রদান এবং সংগঠনের অন্যান্য সদস্যদের নিকট হতে চাঁদা সংগ্রহ করতো বলে জানা যায়।
প্রাথমিকভাবে জানা যায়, আটককৃত সকলের নামেই পূর্বে জঙ্গি ও সন্ত্রাস বিরোধী আইনে মামলা রয়েছে। এ কারণে তারা বিভিন্ন সময় স্থান পরিবর্তন করে আত্মগোপনে ছিল। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
সুত্রঃ সময়ের আলো