ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, গত মঙ্গলবার পাকিস্তানে তারা যে জঙ্গি গোষ্ঠীর ওপর ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে, সেই গোষ্ঠীর ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে।
ইরানের হামলার লক্ষ্যবস্তু হওয়া জইশ আল-আদল নামের ওই জঙ্গি গোষ্ঠী সম্পর্কে যেসব তথ্য জানা গেছে, সেগুলো তুলে ধরা হলো।
জইশ আল-আদল কারা
জইশ আল-আদল সুন্নি মুসলিমদের একটি চরমপন্থী গ্রুপ। তারা জুনদাল্লাহ নামের ইরানভিত্তিক একটি সংগঠনের শাখা। ২০০২ সালে জুনদাল্লাহ প্রতিষ্ঠা করেন আব্দোলমালেক রিগি। ২০১০ সালে ইরান সরকার তাঁর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা পর্যন্ত তিনি এই সংগঠনের নেতৃত্বে ছিলেন।
রিগির মৃত্যুর পর জুনদাল্লাহর মতাদর্শ নিয়ে বেশ কয়েকটি গোষ্ঠীর উদ্ভব ঘটে। সেগুলোর মধ্যে জইশ আল-আদল ২০১২ সালের দিকে সবচেয়ে প্রভাবশালী হয়ে ওঠে।
এই গোষ্ঠী ইরানের দক্ষিণাঞ্চল ও পাকিস্তানের পশ্চিমাঞ্চলীয় বেলুচিস্তান প্রদেশে কার্যক্রম পরিচালনা করে। বেলুচিস্তানের এই এলাকা পাকিস্তানের সঙ্গে ইরান ও আফগানিস্তান সীমান্তবর্তী। সেখানেই মঙ্গলবার বিকেলে হামলা চালিয়েছে ইরান।
জইশ আল-আদলের লক্ষ্য কী
জইশ আল-আদল ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী বেলুচের সদস্যদের আরও স্বাধীনতা ও ভালো জীবনযাপনের বন্দোবস্ত করার দাবি জানায়। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় ইরানের দক্ষিণাঞ্চলীয় সিস্তান–বেলুচিস্তান প্রদেশে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের ওপর সংঘটিত বেশ কয়েকটি হামলার দায় স্বীকার করেছে তারা।
জুনদাল্লাহর মতাদর্শ অনুসরণ করায় এই গোষ্ঠী ইরাক ও সিরিয়াভিত্তিক জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর জুনদাল্লাহ ও জইশ আল-আদল, দুই গোষ্ঠীকেই ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে সাব্যস্ত করেছে।
পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পাঞ্জগুরের পাশে মঙ্গলবার রাতে বিমান হামলা চালায় ইরান। এতে দুই শিশু নিহত ও তিনজন আহত হন।
ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যম নুরের খবরে বলা হয়, পাকিস্তানের ভূখণ্ডে হামলা চালিয়ে জঙ্গি গোষ্ঠী জইশ আল-আদলের সদর দপ্তর ধ্বংস করা হয়েছে। সেখানে আরও বলা হয়, সম্প্রতি ‘সন্ত্রাসীদের’ স্থাপনা ও তাদের ‘গোয়েন্দা সদর দপ্তর’–এ হামলা চালাচ্ছে ইরান। এ জন্য সিরিয়া ও ইরাকের কুর্দিস্তানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় পাকিস্তানের ভূখণ্ডে হামলা চালানো হয়েছে।
এ ঘটনায় ব্যাপক ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে পাকিস্তান সরকার। ইসলামাবাদে নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করেছে দেশটি। পাশাপাশি ইরান থেকে নিজেদের রাষ্ট্রদূতকে প্রত্যাহার করেছে। এ ছাড়া দুই দেশের মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের সব বৈঠক স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসলামাবাদ।
সুত্রঃ প্রথম আলো