জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে স্বামীকে আটকে রেখে গৃহবধুকে জঙ্গলে নিয়ে গণধর্ষণ করেন ছাত্রলীগ নেতা। ধর্ষককে যারা পালিয়ে যেতে সাহায্য করেছে তারা সবাই ঐ ধর্ষকের ন্যায় ছাত্রলীগ রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। ধর্ষককে ধরে আইনের কাছে সোপর্দ না করে কেন তাকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করল! কারণ রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন। দেশে ছাত্রলীগ ছাড়া বাকি সংগঠনের ছাত্ররা নির্ভয়ে রাজনীতি করতে পারে না। আর যেকোনো উপায়ে ছাত্রলীগ বা আওয়ামী লীগের যেকোনো একটি পদ-পদবির জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে একটা প্রজন্ম। ,
ধর্ষককে পালাতে সাহায্য করে তারা জুতাপেটা খেয়ে এখন রিমান্ডে আছে। তারা যখন ধর্ষককে পালাতে সাহায্য করেছে তখন তাদের চিন্তায় এটা কাজ করেনি যে তারা একটি অন্যায় করছে। কারণ যে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন তৈরি করা হয়েছে সেখানে চিন্তার কোন জায়গা নেই,
পদ প্রাপ্তির জন্য সে তার সমস্ত মেধা, মনন ও চিন্তাকে বন্ধক রাখতে রাজি। হলের একটি সিটের জন্য ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের অনুগত হতে হয়। সে অনুসারে এখন ছাত্রলীগ করতে হয় অথবা ছাত্রলীগের অনুগত হতে হয়। হল প্রশাসন সব বিষয়ে অবগতের পরেও এই সিট দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয় না। হল দখলের পর তারা নজর দেয় চাঁদাবাজির দিকে। বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘটিত প্রায় সব চাঁদাবাজির সঙ্গেই তারা জড়িত। এমনকি ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসার অভিযোগও আছে। অপরাধক্রমে বেপরোয়া ছাত্ররা জড়িয়ে পড়ে ধর্ষণে, গণধর্ষণে। ক্ষমতার কাঠামো ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যোগসাজশ তাদের এতটাই বেপরোয়া করেছে যে, তারা কাউকে পরোয়া করে না। তাদের অপকর্মের বিরুদ্ধে আঙুল তোলার সাহস কারও নেই।
কারণ তাদের যেকোনো অন্যায়কে ডিফেন্স করার জন্য খোদ প্রক্টর ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দাঁড়িয়ে যায়। প্রশাসনের এমন এক পাক্ষিক অন্যায় অবস্থান তাদের আরও বেশি বেপরোয়া করে তোলে। ক্ষমতার রাজনীতির এই নিরঙ্কুশ চর্চা পুরো একটি প্রজন্মকে বিপদগ্রস্ত করছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিচারহীনতার সংস্কৃতি।
আজকে শুধু ধর্ষণের বিচারের দাবিতে সোচ্চার হলেই হবে না। ধর্ষণ থামাতে চাইলে এর সঙ্গে যে ক্ষমতার কাঠামো জড়িত তাকে চ্যালেঞ্জ করতে হবে। ক্ষমতাসীন হলেই, ক্ষমতা কাঠামোতে আরোহণ করলেই যে কেউ যেকোন অন্যায় করতে পারবে না, তাকে জবাবদিহিতা ও বিচারের মুখোমুখি দাঁড়াতে হবে- তা নিশ্চিত করতে হবে। যে মাস্তান তন্ত্র বিশ্বব্যিালয়ে গড়ে উঠেছে উপাচার্য, প্রক্টর ও প্রভোস্টের প্রত্যেক্ষ ও পরোক্ষ মদদে তাকে ভেঙে গুড়িয়ে দিতে হবে। বিচারহীনতার সংস্কৃতি রুখে দিতে হবে। প্রতিবাদ, প্রতিরোধে ভাঙতে নিপীড়কদের ক্ষমতার কাঠামো। তবেই থামানো যাবে ধর্ষণতন্ত্র।
