ঢাকার আদালত প্রাঙ্গণে পুলিশি হেফাজত থেকে ছিনিয়ে নেওয়া দুই জঙ্গি ১৫ মাসেও গ্রেপ্তার হননি। এ ঘটনায় করা মামলার তদন্ত করছে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। তারা বলছে, পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে ছিনিয়ে নেওয়া দুই জঙ্গি দেশেই রয়েছেন। তাঁদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
২০২২ সালের ২০ নভেম্বর ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (সিজেএম) আদালতের সামনে হামলা চালিয়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জঙ্গি মইনুল হাসান শামীম ওরফে সিফাত সামির ও মো. আবু ছিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিবকে ছিনিয়ে নেন অন্য জঙ্গিরা। এ ঘটনায় ২০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, ঢাকা থেকে পালিয়ে জঙ্গিরা কিছুদিন নারায়ণগঞ্জে ছিলেন। সেখানে অভিযান চালানোর আগে সাভারে গিয়ে বসবাস শুরু করেন। পরে পুলিশের অভিযানের আগে সেখান থেকেও পালিয়ে যান তাঁরা।
সিটিটিসির প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার আসাদুজ্জামান বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, পলাতক জঙ্গিদের এখনো গ্রেপ্তার করা যায়নি। সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে একাধিক জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালানো হয়েছে। অভিযানের আগে তাঁরা আস্তানা থেকে পালিয়ে যান। তবে আস্তানা থেকে গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা স্বীকার করেছেন, পলাতক জঙ্গিরা সেখানে থাকতেন।
তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, গ্রেপ্তার এড়াতে জঙ্গিরা দাঁড়ি কেটে বেশভূষা পরিবর্তন করেছেন। ভুয়া ঠিকানা, পরিচয়পত্র বানিয়ে বাসা ভাড়া নিয়ে আস্তানা গড়ে তোলেন তাঁরা।
যেভাবে ছিনিয়ে নেওয়া হয়
২০২২ সালের ২০ নভেম্বর মোহাম্মদপুর থানায় করা সন্ত্রাসবিরোধী আইনের এক মামলায় ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালের বিচারক মজিবুর রহমানের আদালতে অভিযোগ গঠনের (চার্জ শুনানি) শুনানির দিন ছিল।
ওই দিন ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনাল থেকে আট জঙ্গিকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের হাজতখানায় নিয়ে যাচ্ছিলেন পুলিশের সদস্যরা। যখন ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (সিজেএম) আদালতের প্রধান ফটকের সামনে আসেন, তখন হাতকড়া পরা দুই জঙ্গি তাঁদের নিরাপত্তায় থাকা পুলিশের এক সদস্যকে মারধর শুরু করেন।
এরপর মুহূর্তের মধ্যেই আশপাশে থাকা জঙ্গিদের সহযোগীরাও পুলিশের ওপর হামলায় যোগ দেন। পুলিশের ওই সদস্যকে উদ্ধার করতে এগিয়ে আসেন কয়েক পুলিশ সদস্য। এ সময় তাঁদের ওপর হামলা ও স্প্রে ছিটিয়ে সিজেএম আদালতের প্রধান ফটকের উল্টো দিকের গলি দিয়ে মোটরসাইকেলে করে দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নিয়ে যান সহযোগীরা।
নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের (সাবেক আনসারুল্লাহ বাংলা টিম) এই দুই আলোচিত জঙ্গির জাগৃতি প্রকাশনীর প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপন এবং লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ড হয়েছিল।
২০ আসামি গ্রেপ্তার
জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনায় ওই রাতেই ২০ জনকে আসামি করে মামলা করেন আদালতের প্রসিকিউশন বিভাগের পুলিশ পরিদর্শক জুলহাস উদ্দিন আকন্দ। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, আনসার আল ইসলামের সামরিক শাখার নেতা সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউল হক ওরফে সাগর ওরফে বড় ভাই ওরফে মেজর জিয়ার (চাকরিচ্যুত মেজর) পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় আয়মান ওরফে মশিউর রহমান (৩৭), সাব্বিরুল হক চৌধুরী ওরফে আকাশ ওরফে কনিক (২৪), তানভীর ওরফে সামশেদ মিয়া ওরফে সাইফুল ওরফে তুষার বিশ্বাস (২৬), রিয়াজুল ইসলাম ওরফে রিয়াজ ওরফে সুমন (২৬) ও মো. ওমর ফারুক ওরফে নোমান ওরফে আলী ওরফে সাদ (২৮) পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে আসামিদের ছিনিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করেন।
এজাহারে আরও বলা হয়, এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দুটি মোটরসাইকেলে আনসার আল ইসলামের অজ্ঞাতনামা আরও পাঁচ-ছয় সদস্য অবস্থান নেন। এ ছাড়া আদালতের আশপাশে ও মূল ফটকের সামনে অবস্থান করা অজ্ঞাতনামা আরও ১০-১২ জন আনসার আল ইসলামের সদস্য ছিলেন। এরপর তাঁরা পুলিশের কাছ থেকে আসামি ছিনিয়ে নিয়ে যান।
তদন্ত সংস্থা সিটিটিসি বলছে, এ মামলায় ২০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সিটিটিসি সূত্র জানায়, গ্রেপ্তার ২০ জনের মধ্যে এজাহারনামীয় ১২ জন রয়েছেন। বাকি আটজনকে তদন্তে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার জঙ্গিদের মধ্যে হুসনা আক্তার ও বখতিয়ার রহমান আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
সুত্র: প্রথম আলো