দেশে প্রায় সব ক্ষেত্রেই নারীর সক্রিয়তা যেমন বাড়ছে তেমনই নানাভাবে সহিংসতার শিকারও হচ্ছেন তারা। উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে নারী নির্যাতন। কিন্তু নারী নির্যাতন মামলার বিচার ১৮০ দিনে শেষ করার কথা থাকলেও তা ৫ বছরেও শেষ হয় না। আদালতের তথ্যানুযায়ী, ২০২২ সালের তুলনায় ঢাকায় ২০২৩ সালে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলার সংখ্যা বেড়েছে। ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ৬ মার্চ পর্যন্ত এ আইনে মামলা হয়েছে ৭৩০টি। এর মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে ৩৭৬টি মামলার। এছাড়া তদন্তাধীন মামলা রয়েছে ৩৫৪টি।
দেশে অহরহ ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। কিন্তু কিভাবে আইনি ব্যবস্থা নিতে হয় তা অনেকে জানেন না। আবার অনেকে বিষয়টি গোপন রাখতে চান এবং উলটো হয়রানিতে পড়ার আশঙ্কার আইনি ব্যবস্থা নিতে চান না। ২০২০ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর সুপ্রিমকোর্টের জারি করা পরিপত্রে বলা হয়, ট্রাইব্যুনাল যদি ১৮০ দিনের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি করতে ব্যর্থ হয় তাহলে কারণ সংবলিত প্রতিবেদন ৩০ দিনের মধ্যে সুপ্রিমকোর্টে দাখিল করবেন। আইনটি যথাযথভাবে অনুসরণ করতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক, পাবলিক প্রসিকিউটর ও তদন্ত কর্মকর্তাদের (পুলিশ) প্রতি নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে নারী অধিকারকর্মীদের দাবি, এমন নজির খুব একটা নেই। বেশিরভাগ মামলা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ হয় না। সুপ্রিমকোর্টের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশে এখন পর্যন্ত নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে বিচারাধীন মামলা দেড় লাখের বেশি। সেগুলোর মধ্যে পাঁচ বছরের বেশি সময় বিচারাধীন ২৫ শতাংশ মামলা। এর বাইরেও উচ্চ আদালতের আদেশে হাজার খানেক মামলার বিচার স্থগিত আছে।
ঢাকা আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু যুগান্তরকে বলেন, এসব মামলায় সাক্ষী যদি ঠিকভাবে সাক্ষ্য দিতে না পারেন সেক্ষেত্রে আসামিরা খালাস পেয়ে যান। অনেক ক্ষেত্রে আবার আপস হয়ে যায়। যারা আপোস করেন তাদের নিরুৎসাহিত করা উচিত। না হলে অপরাধীরা সুযোগ পেয়ে যাবে।
সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশন নামের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রকাশিত ‘বাংলাদেশে সাইবার অপরাধ প্রবণতা-২০২৩’ শিরোনামের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন ইউনিটে ৩০ এপ্রিল ২০২৩ পর্যন্ত ৩৪ হাজার ৬০৫ অভিযোগ জমা পড়ে। জরিপের তথ্য অনুযায়ী, ভুক্তভোগীদের মধ্যে অভিযোগকারীর সংখ্যা দিন দিন কমছে।
মহিলা পরিষদের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে নির্যাতনের শিকার ২৪০ নারী ও কন্যাশিশু। ফেব্রুয়ারিতে ২৩২ জন, মার্চে ২৪৯, এপ্রিলে ২৩৩, মে মাসে ৩০১, জুনে ৩২৯, জুলাইয়ে ২৯৮ ও আগস্টে ২৭৩ নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের শিকার হয়। সেপ্টেম্বরে সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৩৯ জনে। অক্টোবরে ২১১ ও নভেম্বরে ১৯১ জন শিশু, কিশোরী ও নারী ধর্ষণসহ বিভিন্ন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
মহিলা পরিষদের চেয়ারম্যান ড. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, দেশে যে পরিমাণ যৌন হয়রানি ও নির্যাতন হয় তার মধ্যে মাত্র ৩ শতাংশ বিচারের আওতায় আসে। তারপরও তারা বিচার পান না। অনেক অসম্পূর্ণতা থাকলেও আইনগুলো আমাদের পক্ষে আছে। কিন্তু আইনের বাস্তবায়ন হয় না। এখানে আইনের শাসনের অভাব আছে সমাজে, রাষ্ট্রে-সেই জায়গাটা বিশ্লেষণ হয় না। সেই জায়গাতে আমাদের গুরুত্ব দেওয়া দরকার। বিচারের সুফলটা যদি আনতে পারি এবং ভুক্তভোগীদের কাছে পৌঁছাতে পারি তাহলে আমরা এ সমস্যার সমাধান করতে পারব।
সুত্রঃদৈনিক যুগান্তর