‘যৌন হয়রানির যে বিচার আমি চাচ্ছি, তা পাওয়ার প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে আমারই বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক জুনায়েদ হালিম। তিনি অভিযুক্ত শিক্ষককে অন্যায়ভাবে সাপোর্ট করছেন। তিনি তাকে সাথে নিয়ে সব জায়গায় যাচ্ছে্ন। তিনি কীভাবে যাচ্ছেন? শিক্ষক আমার পিতার মতো।
কিন্তু আমি যে যৌন হয়রানির অভিযোগ করেছি তার প্রধান অন্তরায় এবং সবখানে বাধা প্রদান করছেন তিনি।’
আজ বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) দুপুর দেড়টায় গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী কাজী ফারজানা মিম। তিনি ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।
কীভাবে ঘটনার সূচনা ও তাকে হয়রানি করা হয়েছে এমন প্রশ্নের উত্তরে মিম বলেন, ‘২০২১ সালে ১৯ নভেম্বর অভিযুক্ত শিক্ষক (আবু শাহেদ ইমন) আমার সঙ্গে যৌন হয়রানি মূলক আচরণ করে।
তিনি আমাকে বন্ধুত্বের প্রস্তাব দেন। কোনো ধরনের বন্ধুত্ব জিজ্ঞেস করলে তিনি আমার সঙ্গে জোর করে বসেন। দুইমাস নিপীড়ন সহ্য করে ২০২০ সালে আমি বিভাগের চেয়ারম্যান জুনায়েদ হালিম স্যারকে অভিযোগ জানাই।’
তিনি আরো বলেন, ‘করোনার পর লকডাউন শেষে যখন ২০২১ এ বিশ্ববিদ্যালয় খুলে তখনই বিষয়টি সামনে আসে।
ইনকোর্স পরীক্ষায় আমাকে ৪০ দিয়ে ফেল করানো হয়। আর আপনারা জানেন ইনকোর্স পরীক্ষায় কোনো ইমপ্রুভমেন্ট পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ থাকে না। এরপরে আমি অভিযোগ দেই ২০২১ শে ইমন স্যার আবারও বুলিং করে আমার সঙ্গে। পরে তৎকালীন প্রক্টর স্যারকে (অধ্যাপক ড. মোস্তফা কামাল) অভিযোগপত্র দেই। যার বিচার এখনো পাইনি।’
বর্তমান ক্যাম্পাস ভীতি ও বিচার পাওয়ার আশার প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘গতকাল ভিসি ম্যাম আমার অভিযোগ নিয়েছেন এবং আমাকে আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি এসব থেকে বের হওয়ার জন্য আমাকে একটা ব্যবস্থা করে দিয়েছেন আশা করি এই ব্যবস্থা ফলপ্রসূ হবে। গতকালের পর থেকে আমার কাছে আর কোনো হুমকি আসেনি। তাই আমি আপনাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। আশা করছি আমি আজকে থেকে ফাইরুজ অবন্তিকার আত্মহত্যার ঘটনার আন্দোলন চালিয়ে যেতে পারব।’
এদিকে শিক্ষার্থীকে যৌন নিপীড়নের দায়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগের প্রভাষক আবু শাহেদ ইমনকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এর সঙ্গে শিক্ষার্থীকে অসহযোগিতা করার জন্য বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. জুনায়েদ হালিমকে চেয়ারম্যান পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) বিকালে এক জরুরি সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। সিন্ডিকেট সভা শেষে উক্ত সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম।
উপাচার্য বলেন, ‘যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধ সেলের দেওয়া রিপোর্টে যৌন হয়রানি ও মানসিক নির্যাতন প্রমাণিত হওয়ায় বিজ্ঞ সিন্ডিকেট এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শিক্ষকের বিরুদ্ধে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর দায়ের করা অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা থাকায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আমি এখানে উপাচার্য হয়ে আসার পর আরেকটি তদন্ত বোর্ড গঠন করে দিয়েছি। আশা করি খুব শিগগিরই সেই রিপোর্ট আমরা হাতে পাব।’
সুত্রঃ কালেরকন্ঠ