‘বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যে সিদ্ধান্তটি দেখিয়েছে, সেটা তো দুই বছর আগে দেখানোর কথা ছিল। সেটা আমাকে দেখায়নি, সে বিষয়ে আমি হতাশ ছিলাম। এখন যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সাময়িক। তার মানে, তারা আবারও ক্ষমতায় আসবে। আবারও চাকরিতে বহাল হবে। তাই এটা যতক্ষণ না স্থায়ী হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত তো আমি শান্তি পাব না।’
শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগকারী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এই বক্তব্য দিয়েছেন। পুনঃপরীক্ষা কীভাবে দেবেন, তা নিয়ে সংশয় কাটেনি বলে অভিযোগ করেছেন ওই ছাত্রী। এ ছাড়া বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষকেরা তাঁকে অকৃতকার্য করেছেন বলেও অভিযোগ তুলেছেন।
সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকার আত্মহত্যার ঘটনায় যৌন হয়রানিসহ নানা নিপীড়নের বিরুদ্ধে এই শিক্ষার্থী সোচ্চার হন। সেখানে অবন্তিকার ব্যাপারে কথা বলতে গিয়ে নিজের প্রসঙ্গ টানেন তিনি। নিজের সঙ্গে ঘটে যাওয়া বিষয় নিয়ে তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ২০২১ সালে তাঁর বিভাগের এক শিক্ষক তাঁকে যৌন হয়রানি করেন। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্যের কাছে অভিযোগ করলে বিভাগের চেয়ারম্যান ও অভিযুক্ত শিক্ষক তাঁকে সেটি তুলে নিতে নানাভাবে চাপ দিয়ে আসছেন। রাজি না হওয়ায় তাঁরা তাঁকে হাত-পা কেটে হত্যা করাসহ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের হুমকি দেন।
১৮ মার্চ ওই ছাত্রী ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) কাছে নিজের জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে আবেদন করেন। বিষয়টি নিয়ে ওই ছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের কাছেও একটি আবেদন করেন।
ওই ছাত্রীর করা অভিযোগ নিয়ে আলোচনা ও তৎপরতার মধ্যে গত বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৪তম সিন্ডিকেট (বিশেষ) সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় অভিযুক্ত প্রভাষক আবু শাহেদ ইমনকে সাময়িক বরখাস্ত এবং অধ্যাপক জুনায়েদ আহমদ হালিমকে বিভাগের চেয়ারম্যানের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন সিন্ডিকেট সদস্যরা।
সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্তের বিষয়ে অভিমত জানতে ওই ছাত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি প্রথম আলোর কাছে সাময়িক নয় স্থায়ী শাস্তি দাবি করেন।
ওই ছাত্রী আরও অভিযোগ করেন, যৌন নিপীড়নের অভিযোগের বিচার চাওয়ার পর তাঁকে বিভিন্ন পরীক্ষায় অকৃতকার্য করা হয়েছে। একটি পরীক্ষায় তিনি ৪০-এ শূন্য পান। তিনি বলেন, ‘যে ম্যাডাম পরীক্ষায় শূন্য দিয়েছেন, তিনি ওই স্যারের বন্ধু ছিলেন।’ বিচার চাওয়ার কারণে ওই ম্যাডামের একটি ও বিভাগীয় প্রধানের দুটি বিষয়ে তাঁকে ইচ্ছাকৃতভাবে অকৃতকার্য দেখানো হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন ওই ছাত্রী।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যে বলেছে, ওই ছাত্রী যেন পরীক্ষা দিতে পারেন, তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তবে প্রথম আলোকে ওই ছাত্রী বলেছেন, পরীক্ষা নিয়ে সংকট এখনো কাটেনি। তিনি বলেন, ‘আমি পরীক্ষার ফলাফল পুনর্নিরীক্ষার জন্য আবেদন করেছিলাম। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এখন পর্যন্ত আমাকে নিশ্চিত করতে পারেনি, তারা কোন প্রক্রিয়ায় বা পদ্ধতিতে আমার পরীক্ষা নেবে। কারণ, অন্যান্য বিভাগের মতো আমার সাপ্লিমেন্টারি পরীক্ষা তো শুধু লিখিত নয়, আমার ব্যবহারিক পরীক্ষা রয়েছে। তাই এগুলো কীভাবে নেবে, এখনো আমাকে সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি।’
ছাত্রী বলেন, ‘আমার বাবা পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দপ্তর থেকে আমার ফলাফলগুলো নিজ চোখে দেখে গেছেন। বাবা দুঃখ প্রকাশ করে গেছেন।’
ঘটনার বিষয়ে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া প্রভাষক আবু শাহেদ ইমনের বক্তব্য জানতে দুই দিন ধরে প্রথম আলোর এই প্রতিবেদক যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন। তাঁকে মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হয় এবং পরিচয় জানিয়ে খুদে বার্তাও পাঠানো হয়। তবে ওই শিক্ষক ফোন রিসিভ করেননি, খুদে বার্তারও উত্তর দেননি।
সুত্রঃ প্রথম আলো