পার্বত্য চট্টগ্রামে ব্যাংক ডাকাতির ঘটনায় অংশ নেওয়া কেএনএফের সঙ্গে জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়ার সদস্য ছিল কি না, এ ব্যাপারে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে এ দুটি সংগঠন পাহাড়ে একসঙ্গে সশস্ত্র কর্মকাণ্ডে লিপ্ত। জঙ্গিরা নিজেদের সংগঠনের সদস্যদের পাশাপাশি আরো অনেককে হত্যা করেছে বলেও তথ্য পাওয়া গেছে। তাদের হাতে ভারী অস্ত্রসহ বোমা ও বোমা তৈরির বিস্ফোরক দ্রব্য রয়েছে কি না, এ ব্যাপারে গোয়েন্দা অনুসন্ধান চলছে।
র্যাব ও পুলিশ সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
র্যাব সূত্র জানায়, ২০২১ সাল থেকে বিভিন্ন সময়ে সমতলের অন্তত ৮০ জন যুবক নতুন জঙ্গি সংগঠনে যুক্ত হন। শুরু থেকে তাদের উদ্দেশ্য ছিল পাহাড়ে নিজেদের একটি শক্ত অবস্থান তৈরি, নিরাপদ সামরিক প্রশিক্ষণ, সংগঠনের প্রয়োজনে দেশে নাশকতা ও উগ্রবাদ প্রতিষ্ঠা এবং সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করে পুনরায় নিরাপদ আশ্রয়ে ফিরে যাওয়া।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী সূত্র বলছে, জঙ্গিদের সঙ্গে কেএনএফের সম্পর্ক হয় বিপুল অঙ্কের টাকার বিনিময়ে।
জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়া নামের নব্য জঙ্গি সংগঠনের রিক্রুটদের সামরিক প্রশিক্ষণ, পাহাড়ে তাদের থাকা-খাওয়া ও সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে তিন বছর মেয়াদি একটি চুক্তি হয়। এর আওতায় জঙ্গিদের প্রশিক্ষণের দায়িত্ব নেয় কেএনএফ। শারক্বিয়ার মূল নেতা শামীম মাহফুজের মধ্যস্থতায় বান্দরবান সদর উপজেলার শ্যারনপাড়ায় উভয় পক্ষের মধ্যে চুক্তি হয়। এ তথ্য জানার পর র্যাব বান্দরবানের রুমা, থানচি, রোয়াংছড়ি ও রাঙামাটি জেলার বিলাইছড়ি উপজেলার দুর্গম অঞ্চলে ধারাবাহিক অভিযান চালায়।
এতে অর্ধশতাধিক জঙ্গি সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ঘটনায় পাহাড়ে জঙ্গি নেটওয়ার্ক অনেকটাই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে বলে র্যাব জানায়।
নতুন জঙ্গি সংগঠনটিতে বর্তমানে মোট সদস্যসংখ্যা কত, তার সঠিক তথ্য নিয়ে মতপার্থক্য থাকলেও র্যাব বলছে, সংগঠনটির অনেক সদস্য এখনো অধরা। এর আগে পাহাড়ের একটি সশস্ত্র গোষ্ঠীর শিবিরে বিভিন্ন ব্যাচে সদস্যদের প্রশিক্ষণের একটি ভিডিও চিত্র ধারণ করে তারা। এরপর সামরিক পোশাকের আদলে তৈরি বিশেষ পোশাক পরে একে-২২ রাইফেল ও শটগান দিয়ে প্রশিক্ষণের দৃশ্য ধারণ করে ওই ভিডিও সামনে নিয়ে আসে তারা।
ওই ভিডিওতে অন্তত ২৩ জনকে দেখা গেছে। তাদের মধ্যে নতুন জঙ্গি সংগঠনের আমির আনিসুর রহমান ওরফে মাহমুদ, কথিত সামরিক কমান্ডার শিব্বির আহমেদ ওরফে হামিদ কারছে, দাওয়াতি শাখার প্রধান আব্দুল্লাহ মায়মুনসহ ২২ জনের নাম-পরিচয় শনাক্ত হয়।
র্যাব বলছে, জঙ্গিদের সঙ্গে কেএনএফের আদর্শিক সম্পর্ক নেই। তবে আর্থিক ও অস্ত্রের সম্পর্ক আছে।
বান্দরবান র্যাব-১৫-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন বলেন, জঙ্গি সংগঠন শারক্বিয়ার সম্প্রতি গ্রেপ্তার হওয়া সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং তাদের কাছ থেকে টাকা আদায় করার ব্যাপারে পরামর্শ দিয়েছেন চেওসিং। তাঁর বাড়িতে বসে এই পরিকল্পনা হয়। এ ছাড়া কুকি-চিনের অন্য সদস্যরা বান্দরবানে যখন আসে, তখন চেওসিং বম তাঁর বাড়িতে এবং আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে রাখতেন। রুমা-থানচির ঘটনার আগে কিছু সদস্য তাঁর বাসায় এসেছিল। হয়তো তাঁর বাসা থেকেই পরিকল্পনা হয়েছিল।
এর আগে গত বছরের ২০ অক্টোবর বান্দরবান ও রাঙামাটির দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে অভিযান চালিয়ে জামাতুল আনসারের সাত সদস্য এবং তিন পাহাড়িকে গ্রেপ্তারের পর র্যাব জানতে পারে, পাহাড়ের সশস্ত্র দল কেএনএফ বা বম পার্টির ছত্রচ্ছায়ায় পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রশিক্ষণ চলে জামাতুল আনসার সদস্যদের। এ জন্য দুই বছর আগে দুই সংগঠনের মধ্যে চুক্তিও হয়েছিল। সে অনুযায়ী প্রতি মাসে তিন লাখ টাকা দেওয়ার পাশাপাশি কেএনএফ সদস্যদের খাবার খরচ বহন করে জামাতুল আনসার।
এর আগে জামাতুল আনসার সদস্যরা পাহাড়ে তাদের মতের বাইরে যাওয়া অনেক সদস্যকে হত্যা করে। বান্দরবানের রুমায় দুর্গম পাহাড়ের খাদে কবর দেওয়া নতুন জঙ্গি সংগঠনের সদস্য আমিনুল ইসলাম ওরফে আল আমিনের লাশ উদ্ধার হয়নি। এ ছাড়া পাহাড়ে জঙ্গি হামলায় নিহত যাহের মোহাম্মদ আবদুর রহমান ওরফে জহিরের লাশও উদ্ধার হয়নি।
সার্বিক বিষয়ে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন কালের কণ্ঠকে বলেন, নতুন জঙ্গি সংগঠন দেশে বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা করে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করেছিল। তবে তাদের বেশির ভাগ সদস্য গ্রেপ্তার হয়। তাদের অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
সুত্রঃ কালেরকন্ঠ