জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সান্ধ্যকালীন কোর্সের ছাত্র নাজিমুদ্দিন সামাদ সিলেট শাখা বঙ্গবন্ধু যুব পরিষদের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক এবং গণজাগরণ মঞ্চের সক্রিয় কর্মী ছিলেন।
আট বছর আগে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্র, ব্লগার নাজিমুদ্দিন সামাদকে হত্যার ঘটনায় চাকরিচ্যুত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক জিয়াসহ চারজনের বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছে আদালত।
ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমান সোমবার আসামিদের অব্যাহতির আবেদন নাকচ করে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। এ মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরুর জন্য ৬ আগস্ট দিন রেখেছেন তিনি।
জিয়া ছাড়া অভিযুক্ত অপর ৩ আসামি হলেন- রশিদুন নবী ভূইয়া ওরফে রায়হান, মো. শেখ আব্দুল্লাহ ও আকরাম হোসেন।
তবে এ মামলায় নাম আসা মোজাম্মেল হুসাইন ওরফে সায়মন, মো. আরাফাত রহমান, ওয়ালিউল্লাহ ওরফে ওলি ওরফে তাহের ওরফে তাহসিন, সাব্বিরুল হক চৌধুরী ওরফে আকাশ ওরফে কনিক ও মাওলানা জুনেদ আহাম্মেদ ওরফে সাব্বির ওরফে জুনায়েদকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন বিচারক।
অভিযুক্ত আসামিদের মধ্যে সৈয়দ জিয়াউল হক জিয়াসহ নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সামরিক কমান্ডার বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভাষ্য। ছয় মামলায় মৃত্যুদণ্ডের রায় মাথায় নিয়ে তিনি পলাতক রয়েছেন।আরেক আসামি আকরাম হোসেনও পলাতক।
কারাগারে থাকা দুই আসামি রায়হান ও শেখ আবদুল্লাহকে এদিন এজলাসে তোলা হয়। নিয়ম অনুযায়ী অভিযোগ পড়ে শুনিয়ে জানতে চাওয়া হয় তারা দোষী না নির্দোষ। এ সময় দুই জনই নিজেদের নির্দোষ দাবী করে ন্যায়বিচার চান বলে জানান আসামিপক্ষের আইনজীবী মো. নজরুল ইসলাম জানান।
এ আদালতের ভারপ্রাপ্ত পাবলিক প্রসিকিউটর মো. গোলাম ছারোয়ার খান জাকির বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আসামি রায়হান ও শেখ আবদুল্লাহ হাকিমের কাছে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে হত্যাকাণ্ডে নিজেদের পাশাপাশি মেজর জিয়া ও আকরামের সংশ্লিষ্টতার তথ্য দেন। কিন্তু তারা অব্যাহতি পাওয়া পাঁচ আসামির কথা বলেননি।
“এ মামলার অভিযোগপত্রের সাক্ষীরাও ১৬১ ধারায় দেওয়া জবানবন্দিতে তদন্ত কর্মকর্তার কাছে ওই পাঁচজনের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে কিছু বলেননি। সে কারণে তাদের অব্যাহতি দেন বিচারক।”
আসামি পক্ষের অন্যতম আইনজীবী মো. নজরুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি রায়হান, আরাফাত রহমান ও মোজাম্মেল হুসাইন সায়মনের পক্ষে অব্যাহতি চেয়েছিলাম। অব্যাহতির শুনানিতে আমি বলেছি, কোনো অভিযোগ না থাকা সত্ত্বেও তাদের নাম অভিযোগপত্রে দেওয়া হয়েছে। তাদের কথা এজাহারে ছিল না। কোনো সাক্ষী তদন্ত কর্মকর্তার কাছে দেওয়া জবানবন্দিতে তাদের নাম বলেনি। এদের অনেক নাম রয়েছে। পুলিশের তদন্ত কর্মকর্তা সেই সুযোগ নিয়ে নিজে নতুন নাম বসিয়ে তাদের অভিযোগপত্রে আসামির তালিকায় যুক্ত করেছে।”
কী ঘটেছিল?
দেশে ব্লগার লেখক, প্রকাশক, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টদের উপর জঙ্গি হামলার ধারাবাহিকতায় ২০১৬ সালের ৬ এপ্রিল রাতে হামলার শিকার হন নাজিমুদ্দিন সামাদ।
সিলেট শাখা বঙ্গবন্ধু যুব পরিষদের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক এবং গণজাগরণ মঞ্চের সক্রিয় কর্মী ছিলেন এই তরুণ। ফেইসবুকে ধর্মান্ধতা ও সমসাময়িক রাজনীতি নিয়ে সমালোচনামূলক লেখালেখিতেও সক্রিয় ছিলেন।
সেদিন সান্ধ্যকালীন কোর্সের ক্লাস শেষে ক্যাম্পাস থেকে গেণ্ডারিয়ার মেসে ফিরছিলেন নাজিম। পথে লক্ষ্মীবাজারের একরামপুর মোড়ে তাকে ছুরি মেরে ও গুলি করে হত্যা করা হয়।
আল-কায়েদার ভারতীয় উপমহাদেশ শাখা একিউআইএস এর বাংলাদেশ শাখা আনসার আল-ইসলাম ওই হত্যাকাণ্ড ঘটায় বলে তখন খবর দিয়েছিল ‘সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ’। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বরাবরের মতই বলেছিল, এটা দেশীয় উগ্রবাদীদের কাজ।
ওই ঘটনায় পরদিন সূত্রাপুর থানার এসআই মো. নুরুল ইসলাম বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেন। চার বছর পর ২০২০ সালের ২০ অগাস্ট নয়জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট। সেখানে প্রধান আসামি করা হয় সেনাবাহিনীতে অভ্যুত্থানের চেষ্টা চালিয়ে চাকরি হারানা সৈয়দ জিয়াউল হককে।
ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমান ২০২২ সালের ১৭ জানুয়ারি পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্র গ্রহণ করেন। সেই সঙ্গে পলাতক আসামিদের বিরুদ্ধে জারি করেন গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ।
পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করতে না পারায় ওই বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি পলাতক পাঁচজনের সম্পত্তি ক্রোকের আদেশ দেয় আদালত। সম্পত্তি ক্রোকের প্রতিবেদন দাখিল হলে ১০ মে আসামিদের আদালতে হাজির হতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির প্রকাশের আদেশ দেওয়া হয়।
পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর মামলাটি বিচারের জন্য প্রস্তুত হওয়ায় ২০২২ সালের ২৫ জুলাই বিচারক অভিযোগ গঠন শুনানির জন্য ১৩ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেন। কিন্তু দফায় দফায় পিছিয়ে যাওয়ায় সেই শুনানি হল দুই বছর পর।
সুত্রঃ বিডিনিউজ