নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল–ইসলামের ‘আস্তানায়’ পুলিশের অভিযান শেষ হয়েছে। সাড়ে তিন ঘণ্টার অভিযানে চারতলা ওই বাড়ির একটি কক্ষে তিনটি ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি), দুটি চাপাতি ও কিছু ছুরি পাওয়ার কথা জানিয়েছে পুলিশ। তবে এই অভিযানে কাউকে আটক করা যায়নি।
বিকেল পাঁচটায় পুলিশের বিশেষায়িত দল অ্যান্টি টেররিজম ইউনিটের (এটিইউ) পুলিশ সুপার (অপারেশনস) মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন অভিযানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন। অভিযান শেষে তিনি সাংবাদিকদের জানান, বাড়িটিতে দুজন জঙ্গি সদস্য সার্বক্ষণিক থাকতেন। তাঁদের একজন বোমা তৈরি বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ও জঙ্গি প্রশিক্ষক। কিছুদিন যাবৎ ওই বাড়িতে একজন নারী ও দুজন শিশু বসবাস শুরু করে। নেত্রকোনার ঘটনার পর জঙ্গি সদস্যদের গ্রেপ্তারে পুলিশের তৎপরতা শুরু হলে ওই বাড়ি থেকে জঙ্গিরা পালিয়ে যান। পুলিশের ধারণা, ওই বাড়িটিতেই উদ্ধার হওয়া বোমাগুলো তৈরি করা হয়েছে। বাড়িটিতে বোমা তৈরির নানা সরঞ্জাম রয়েছে। সেগুলো উদ্ধার করা হবে। এ সময় ওই জঙ্গি সদস্যদের পরিচয় প্রকাশ করেনি পুলিশ।
এদিকে সকাল সাড়ে ১০টায় জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে রূপগঞ্জের বরপা আরিয়াবো এলাকার বাসিন্দা সৌদিপ্রবাসী জাকির হোসেনের মালিকানাধীন বাড়িটি ঘেরাও করে পুলিশ। পরে তারা পুরো বাড়ি থেকে ভাড়াটেদের সরিয়ে নেয়। নিরাপত্তার জন্য এলাকার কয়েকটি সড়ক বন্ধ করে দেওয়া হয়। দুপুরে অভিযানের আগে ভবনটির আশপাশের এলাকার বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়। এতে ভোগান্তিতে পড়েন এলাকার বাসিন্দারা।
বেলা দেড়টায় এটিইউ ও সোয়াট সদস্যরা যৌথভাবে বাড়িটিতে অভিযান শুরু করেন। বেলা সোয়া তিনটায় ভবনটির তিনতলার পূর্ব পাশের একটি ফ্ল্যাটে একটি আইইডি বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। ফ্ল্যাটের ভেতর বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটলে ওই ফ্ল্যাটের জানালা উড়ে যায়।
বিকেল পৌনে চারটা ও সাড়ে চারটায় ভবন লাগোয়া একটি মাঠে ওই কক্ষ থেকে উদ্ধার হওয়া আরও দুটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ধ্বংস করা হয়। এ সময় বোমার বিকট শব্দে পুরো এলাকা কেঁপে ওঠে।
গত ৮ ও ৯ জুন নেত্রকোনা সদর উপজেলার কাইলাটি ইউনিয়নে জঙ্গি প্রশিক্ষণকেন্দ্রে অভিযানের সঙ্গে রূপগঞ্জের এই অভিযানের সম্পর্ক রয়েছে বলে জানান ছানোয়ার হোসেন। তিনি জানান, রূপগঞ্জের চারতলা বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়া জঙ্গি সদস্যরা নেত্রকোনার ওই আস্তানায় আসা-যাওয়া করতেন। গতকাল সোমবার নেত্রকোনার ওই আস্তানা থেকে পালিয়ে যাওয়া এক নারী জঙ্গি সদস্যকে কক্সবাজার থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই নারীর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রূপগঞ্জের বরপা এলাকার বাড়িটিকে জঙ্গি আস্তানা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এ ঘটনায় রূপগঞ্জ থানায় একটি মামলা হবে বলে জানান ছানোয়ার।
বাড়ির পাশের একটি মাঠে কথা হয় বাড়িটির নিচতলার ভাড়াটে মো. শাহনেওয়াজের সঙ্গে। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘সকালে হঠাৎ করেই বাড়িটি পুলিশ ঘিরে ফেলে। পরে জানতে পারি বাড়িটিতে জঙ্গি রয়েছে।’ শাহনেওয়াজ জানান, প্রায় তিন মাস আগে ৪০-৪২ বছর বয়সী একজন ব্যক্তি ভবনটির তিনতলায় একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নেন। ফ্ল্যাটটিতে দুই ছেলে-মেয়ে ও স্ত্রীসহ তিনি থাকতেন। বিভিন্ন সময় আলাপে তাঁরা জানিয়েছিলেন, নারায়ণগঞ্জের শিমরাইল মোড় এলাকায় ওই ব্যক্তি চাকরি করেন। তিন দিন ধরে ওই ফ্ল্যাটটি তালাবদ্ধ বলে জানান তিনি।
বাড়ির মালিক জাকির হোসেনের স্ত্রী বকুলি বেগমের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাঁকে এলাকায় পাওয়া যায়নি। তাঁর ব্যবহৃত মুঠোফোনটিও বন্ধ পাওয়া যায়।
এমন ঘটনায় হতবাক ওই বাড়ির আরেক ভাড়াটে রাসেল হোসেন। প্রথম আলোকে জানান, বাসা ভাড়া নেওয়া ওই ব্যক্তি সবার সঙ্গেই হাসিমুখে কথা বলতেন। তাঁর তিন বছর ও তিন মাস বয়সী দুটি সন্তান রয়েছে। প্রতিবেশী হলেও কখনোই তাঁদের কক্ষে কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হতো না। তাঁর পাশের কক্ষেই যে এমন শক্তিশালী বোমা তৈরি হচ্ছিল, তা ঘুণাক্ষরেও কল্পনা করেননি রাসেল।
সুত্রঃ প্রথম আলো