কুমিল্লায় আলোচিত তনু হত্যা মামলাঃ তনুকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয় বলে অভিযোগ৷ তনু সেনানিবাসায় সন্ধ্যায় প্রাইভেট পড়াতে গিয়েছিলেন৷ রাতে তার লাশ উদ্ধার করা হয়৷ তনু ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় তনুর বাবা কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অফিস সহায়ক ইয়ার হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি মডেল থানায় হত্যা মামলা করেন।
২০১৬ সালের ২০ মার্চ কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ছাত্রী ও নাট্যকর্মী তনুর মরদেহ কুমিল্লা সেনানিবাসের জঙ্গল উদ্ধার হয়। তনু সেনানিবাসের একটি বাসায় প্রাইভেট পড়াতে যেতেন। সেই বাসার পার্শ্ববর্তী জঙ্গল থেকে তার মরদেহ পাওয়া যায়। তনুর বাবা বাদী হয়ে কোতোয়ালী থানায় মামলা করেন । পুলিশ ধারণা ছির তনুকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। তনু হত্যার বিচারের দাবিতে সারাদেশে কলেজের শিক্ষার্থী, বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন জোরালো প্রতিবাদের ঝড় ওঠে৷
তনুর মরদেহে দুই দফায় ময়না তদন্ত হয়, প্রথম ময়না তদন্তের প্রতিবেদনে ধর্ষণের কোনও আলামত পাওয়া যায়নি এবং তনু কেন মারা গেছে তাও সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলা হয় নি। ২য় দফায় কবর থেকে মরদেহ তুলে ময়না তদন্ত হয়েছে।
পুলিশ, সিআইডি পর এখন এর তদন্ত করছে পিবিআই। ২০১৬ সালে তদন্তকারী সংস্থা সিআইডি নিহত তনুর শরীর থেকে নেওয়া নমুনার ডিএনএ পরীক্ষা করে ধর্ষণের আলামত পাওয়ার কথা জানায়। সে সময় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির কুমিল্লার বিশেষ পুলিশ সুপার নাজমুল করিম খান বিবিসি বাংলাকে বলেছিলেন, “ডিএনএ পরীক্ষার রিপোর্টে মোট চারজনের ডিএনএ প্রোফাইলের কথা বলা হয়েছে।”
“এর মধ্যে একটি প্রোফাইল তনুর রক্তের, যেটি তাঁর দাঁত থেকে করা ডিএনএ প্রোফাইলের সঙ্গে মিলে গেছে”। তিনটি প্রোফাইল তিনজন পুরুষের, যাতে তিনজনের স্পার্মাটোজোয়া বা বীর্যের আলামত পাওয়া যায় বলে সিআইডি সন্দেহ করছেন। হত্যার আগে তনুকে ধর্ষণ করা হয়েছিল
২০২০ সালের ২১শে অক্টোবর মামলাটি সিআইডি থেকে পিবিআই-এর কাছে স্থানান্তর করা হয়। স্থানান্তরের প্রায় আড়াই বছর পর গত বছরের আগস্টে সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ঠিক করেও নেয়া হয়নি সাক্ষ্য।
পিবিআইয়ের তদন্ত কর্মকর্তা জানান, “ইনভেস্টিগেশন চলছে আরও সাক্ষ্য নেয়ার প্রয়োজন আছে। তদন্ত পর্যায়ে বিস্তারিত বলা যাবে না”। অর্থাৎ আট বছর পরও এ ঘটনার তদন্ত শেষ হয় নি।
বাংলাদেশে নারীর প্রতি সহিংসতা এবং অপরাধে প্রচলিক আইনের পাশপাশি আলাদা আইন আছে- নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন৷ হত্যা, ধর্ষণের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইন তো আছেই৷ তারপরও কেন বিচার হচ্ছে না? এর জবাবে ড. মিজানুর রহমান বলেন, “আইনকে হতে হয় জীবন্ত৷ আইন প্রয়োগ না হলে, আইনে বিচার না হলে সেই আইন গুরুত্ব হারিয়ে ফেলে৷ আমরা দেখছি নারীর প্রতি সহিংসতার বিচার তেমন হয় না৷ এর কারণ হতে পারে কোনো গোষ্ঠীর কারণে আইন সঠিক পথে চলছে না৷”
