বাংলাদেশ সরকার মানে রাষ্ট্র যেমন তেমন চলুক তার লক্ষে তাকে পৌছতে হবে । লাশের গন্ধে দেশটা যদি মহমহ হয়ে যায় অনাহারে যদি মারা যায় সেদিকে তাদের না তাকাল চলে । সরকারের নিজের প্রয়োজনে যে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারে জনগনের জন্য নয়। অথচ একটা জাতি একটা তাকিয়ে থাকে সরকারের দিকে।
আমাদের জেনারেশনের অনেকেই তাদের প্রথম(এবং এখন পর্যন্ত একমাত্র) ভোট দিয়ে আপনাদের ক্ষমতায় আনছিলো এই আশায় যে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে আপনারা দেশকে আগায়ে নিয়ে যাবেন সকল কুসংস্কার ও সাম্প্রদায়িকতাকে পিছনে ফেলে।
অথচ এতোগুলা বছর পর আমরা কি দেখলাম?
আপনারা দেশকে তুলে দিছেন ব্যবসায়ীদের হাতে, আপনাদের দল এবং অঙ্গসংগঠনগুলাও হয়ে উঠছে এক একটা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। আমলাদের সুযোগ করে দিছেন হাজার কোটি টাকা সরায়ে নেয়ার, দেশ এবং দেশের বাইরে সম্পদের পাহাড় গড়ে এরা আমাদের দেশটাকে দরিদ্র থেকে হতদরিদ্র করেছে।
কর্মী ও নেতা বাছাই করাতে আপনাদের দলের যেখানে হওয়ার কথা ছিলো সতর্ক এবং সিস্টেমেটিক, সেখানে আপনারা হইছেন উল্টা। আপনাদের রিক্রুটমেন্টের না ছিলো কোনো নিয়ম, না ছিলো নীতি; এর ফল কি হইছে? সারাজীবন যাদের বিরোধীদলের রাজনীতি করতে দেখা গেছে তারা হয়ে গেছে থানা/জেলা পর্যায়ের সংগঠনের হর্তাকর্তা। আর প্রকৃত নেতা এবং কর্মী, যারা বছরের পর বছর দলকে ভালোবেসে, সংগঠনকে ভালোবেসে কাজ করছে; তারা হয়ে গেছে সাইডলাইনড। আপনারা আপনাদের নিজেদের অনেক মানুষকে সেখানেই হারায়ে ফেলছেন, আপনকে বাদ দিয়ে পরকে আগলাইছেন।
আপনাদের যেখানে হওয়ার কথা ছিলো অসাম্প্রদায়িক, সেখানে আপনারা করছেন মোল্লাতোষণ। যার জন্য আজ অসংখ্য সাম্প্রদায়িক দিয়ে দেশ ভরা। আজ থেকে ১৫/২০ বছর আগেও দেশে এতো উগ্র সাম্প্রদায়িকতা ছিলো না বা থাকলেও প্রকাশ্যে আসতো না, যেটা এখন দেখা যায়। এতো বছর ক্ষমতায় থেকেও সাম্প্রদায়িক শক্তিকে নিউট্রালাইজ করা যায়নি বরং তারা আরো বেশি সক্রিয় এবং দৃশ্যমান; এর দায় কাদের?
শিক্ষাব্যবস্থাকে আপনারা পুরাপুরি ধ্বংস করে দিছেন নানান এক্সপেরিমেন্ট করতে যেয়ে। শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড, সেটাকেই যখন আপনি ভেঙ্গে ফেলবেন তখন শিক্ষাব্যবস্থা গার্বেজ তৈরি করবে এতে তো অবাক হওয়ার কিছু নাই। দেশে এখন ঘরে ঘরে মেধাবী অথচ এদের খুব কম সংখকেরই নূন্যতম অ্যানালিটিক্যাল এবং প্রাগমেটিক থিংকিং এ্যাবিলিটি আছে কারণ আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা সেটা তৈরির সুযোগ দেয় না।
স্বাধীনতা সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আর জাতির পিতাকে যেখানে ইচ্ছা যেভাবে ইচ্ছা ব্যবহার করে এদের আপনারা হালকা করেছেন। যে আপনাদের দায়িত্ব ছিলো এই জিনিসগুলা সম্পর্কে মানুষকে অবহিত করা, স্কুল/কলেজের পাঠ্যক্রমে এইগুলাকে এমনভাবে আনা যেনো প্রতিটা বাচ্চা এগুলা জেনে এবং বুঝে বড় হয়; সেখানে এইগুলা এখন হয়ে গেছে হাসি তামাশার ব্যাপার। যে কোনো সংঘাতেই দেখা লাগে ‘আমি মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি কিন্তু অমক/তমক দেখেছি’র মতো ইতরস্য পোস্ট, এ্যাজ ইফ মুক্তিযুদ্ধ ছিলো ইট পাটকেল ছোড়ার মতো কোনো ঘটনা। যে “রাজাকার” হওয়ার কথা ছিলো প্রবল অপমান ও ঘৃণার শব্দ, সেই শব্দকে যথেচ্ছ ট্যাগিংয়ে ব্যবহার করে তাকে হালকা করেছেন। মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু এইগুলাকে অতিব্যবহার করে হালকা করার দায় কি আপনারা এড়াতে পারেন?
যেই আপনারা বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় আসছিলেন, সেই আপনারাই আজ সবচেয়ে বেশি জনবিচ্ছিন্ন। যেই আপনাদের হওয়ার কথা ছিলো অভিভাবক, সেই আপনারা হতে চাচ্ছেন প্রভু। আর আপনাদের এই প্রভু হওয়া, জনবিচ্ছিন্ন হওয়ার সুযোগ খুব ভালোভাবে নিচ্ছে স্বাধীনতার বিরুদ্ধ শক্তি, আপনাদের ভাঙ্গাচোরা শিক্ষাব্যবস্থা থেকে বের হওয়া মাথামোটাদের তারা দাড় করায়ে দিচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে। না জানার চেয়ে ভুল জানা বেশি ভয়ংকর, আপনারা সেই ভুল জানার/বোঝার সুযোগ করে দিচ্ছেন দিনের পর দিন; এর ভয়াবহ ফলাফল আমরা দেখতে পাবো সামনে। তখনকার পরিস্থিতির জন্য আপনাদের আজকের করা কাজের দায় কি এড়াতে পারবেন?
আপনাদের যারা একসময় ভালোবাসছে তারাই আজ আপনাদের বিপক্ষে কথা বলছে। ভালো করে তাকায়ে দেখেন; এরা আপনাদেরই লোক ছিলো বা এখনো আছে, এরা বিরুদ্ধপক্ষের কেউ না। এরা যা বলতেছে সেটা বলতেছে অনেকবছর ধরে তৈরি হওয়া হতাশা থেকে। এরা সবকিছু চোখের সামনে দেখতেছে, বুঝতেছে এইগুলা অথচ কিছুই করতে পারছে না।
এই দু:খ রাখার জায়গা কই?