সম্প্রতি একের পর এক নারীর ওপর সহিংসতার ঘটনা সামনে আসছে। মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ছয় মাসের পর্যালোচনায় দেখা যায়, এ সময় যৌন হয়রানিকেন্দ্রিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন ১৪৬ জন নারী-পুরুষ, যাদের মধ্যে হামলার শিকার হয়েছেন ১১৩ নারী ও ৩৩ জন পুরুষ। ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ২৫০ জন নারী। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ১৪ জনকে, ধর্ষণের পর আত্মহত্যা করেছেন তিনজন নারী।
নারীর প্রতি নৃশংসতার ঘটনা আগেও ছিল। এখনও আছে। ইদানীং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কারণেই হোক বা যে কোনো কারণে একের পর এক সহিংসতার ঘটনা সামনে আসছে। যেখানে আক্রান্ত ব্যক্তি প্রায় সব ক্ষেত্রেই নারী। নারীকে যারা ভোগ্যপণ্য মনে করে, তারাই এ ধরনের ঘটনা ঘটায়। এ চিন্তাধারা সমাজ থেকে দূর করতে হবে।
বিচারব্যবস্থার দীর্ঘসূত্রতা রয়েছে। তবে তা দ্রুত করলেই যে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে এমন নয়। গোটা ব্যবস্থার মধ্যেই ঝামেলা– সঠিক বিচার, ন্যায় বিচার করতে হবে। আবার মেডিকেল রিপোর্ট, ফরেনসিক রিপোর্ট, ডিএনএ রিপোর্ট– এগুলো হতে অনেক সময় লাগায়; অথচ এত সময় লাগার কথা নয়। ধর্ষণ আর ঘুষ এ দুটোর বেলায় সাক্ষী থাকে না। সেই ক্ষেত্রে আদালতের ওই বিবেচনাটুকু থাকতে হবে।
নারী নির্যাতন, ধর্ষণের বিরুদ্ধে টেলিভিশনে সচেতনতামূলক প্রচারণা থাকা উচিত। আমাদের সামাজিক সচেতনতাও কম। সামাজিকভাবে ধর্ষককে যতটা দোষী মনে করা হয়, তার চেয়ে ধর্ষণের শিকার মানুষটিকে বেশি অপরাধী মনে করা হয়। এ ক্ষেত্রে আমার প্রস্তাবনা হলো, প্রত্যেক মেয়েকে স্কুলে বাধ্যতামূলক জুডো-কারাতে শিক্ষা দেওয়া হোক। এর আগেও এ নিয়ে কথা বলেছি। তবে এখন এটা মোক্ষম সময়। এর মধ্য দিয়ে মেয়েরা পারিবারিক নির্যাতন থেকেও বাঁচবে। রাস্তাঘাটে ছিনতাই, হয়রানি থেকেও নিজেকে রক্ষা করতে পারবে।
তবে সামাজিক আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই। সামাজিক আন্দোলনের ফলেই পারিবারিক নির্যাতনের ঘটনা অনেক কমেছে। এ জন্যই মেয়েরা এখন সাহস করে ডিভোর্স দিতে পারে। একা থাকে বা একক মা হিসেবেও থাকে। এ পরিবর্তনের মূলে রয়েছে সামাজিক আন্দোলন। তবে সমাজে ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য বেড়েই চলেছে। মধ্যবিত্তের নাভিশ্বাস। এটা অস্বীকার করার কোনো জো নেই। এর ফলে সমাজে অস্থিরতা বিরাজ করছে। এ অবস্থা সামাজিক আন্দোলনের জন্য সহায়ক নয়। এমন অস্থির সময়ে সামাজিক আন্দোলন সেভাবে দৃশ্যমান থাকে না। ফলে সহিংসতার ঘটনা বাড়তে বাধ্য। সমাজের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে পড়লে তার প্রভাব বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেখা দেয়। নারীর প্রতি সহিংসতা তারই একটি প্রকাশ মাত্র।
সুত্রঃ সমকাল