গতকাল ১৪ আগস্ট রাতে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তে রাত জেগে রাজপথ দখল করে নিলো মেয়েরা। আরজিকর মেডিক্যাল কলেজের নারী চিকিৎসককে ধর্ষণ-খুনের ঘটনায় এবার ১৫ আগস্ট ৭৮তম স্বাধীনতা দিবসের আগের দিন মাঝরাতে নারী-স্বাধীনতার স্লোগান তুলে অরাজনৈতিক জমায়েতের ডাক দেওয়া হয়। কলকাতা থেকে জেলা, রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে রাত ১১টা ৫৫ মিনিটে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানান বিভিন্ন বয়সের নারীরা । ‘জাস্টিস ফর আরজিকর’ দাবিতে, নারীদের এই প্রতিবাদ-আন্দোলনের স্লোগান ছিল ‘মেয়েরা রাত দখল করো, The Night Is Ours’।
নারীদের ডাকা আন্দোলনে পুরুষেরাও শামিল হন। প্রকৃতপক্ষে এ যেন জনতার গর্জন। কোনও ঢিলেমি নয়, আরজি করের ঘটনায় দ্রুত বিচার দিতে হবে, দোষীকে কঠোরতম শাস্তি দিতে হবে। এই দাবিতেই সরব বাংলার নারীশক্তি। এই ‘রাত দখলের’ প্রথম ডাক দেন প্রেসিডেন্সি কলেজের এক প্রাক্তনী রিমঝিম সিনহা। রাজনৈতিক রঙ ছেড়ে শুধুমাত্র নারী সুরক্ষার কথা ভেবে এই জমায়েতে শামিল হওয়ার বার্তা ছিল। তাতেই সাড়া দেয় গোটা রাজ্য।
বেহালা, গড়িয়া, যাদবপুর, কলেজ স্ট্রিট, সখেরবাজার, দমদম, নিউটাউন, সল্টলেকসহ একাধিক জায়গায় হয়েছে এই জমায়েত।
বিজ্ঞাপন
পাশাপাশি নৈহাটি, ব্যারাকপুর, খড়দহ, হাওড়া, লিলুয়া, হুগলিসহ বিভিন্ন জেলার বহু জায়গায় এই জমায়েত করা হয়েছে। দোষীদের কঠোর শাস্তির দাবিতে আন্দোলন চলছে। অধিকাংশই ধৃতের ফাঁসি চাইছে। খোদ পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও ফাঁসির দাবি তুলেছেন। রাজ্যের তো বটেই, গোটা দেশের প্রায় সব মেডিক্যাল কলেজের জুনিয়র ডাক্তাররা আন্দোলন করছেন আরজি কর ইস্যুতে। তার মধ্যেই স্বাধীনতা দিবসের সন্ধিক্ষণে রাত দখলের এই জমায়েত।
এদিকে মধ্যরাতে কলকাতা শহরে মেয়েদের ‘রাত দখলের’ কর্মসূচির মধ্যেই তুলকালাম পরিস্থিতি তৈরি হয় খোদ আরজি কর হাসপাতালে। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের গেট ভেঙে ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করার অভিযোগ ওঠে কিছু বহিরাগতের বিরুদ্ধে। খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে আসে পুলিশ। কিন্তু কারা ভাঙচুর চালালেন, তা স্পষ্ট নয়।
স্থানীয় সূত্রে খবর, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়েছে কয়েকজন পুলিশকর্মীও জখম হয়েছেন। এই ঘটনায় তৃণমূল নেতা শান্তনু সেন বলেন, ‘যা হল, তা অত্যন্ত নিন্দনীয়। আমরা সকলেই চাই, আরজি করের ঘটনায় দোষীর শাস্তি হোক। কিন্তু আন্দোলনের নামে যদি কোনও রোগীকে ফিরে যেতে হয়, তা কখনোই কাম্য নয়। আবার এভাবে ভাঙচুরের ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না।’
কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে আর জি করে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনার তদন্তে নেমেছে সিবিআই। তদন্তভার হস্তান্তরের পরই কোমর বেঁধে তদন্তে নেমেছে তারা। বুধবারই আর জি করে পৌঁছে যায় তদন্তকারীদের দল। ইতিমধ্যে ২০ জনের দল গঠন করেছে সিবিআই। রয়েছেন উচ্চ পদমর্যাদার আধিকারিকরা।
জয়েন্ট ডিরেক্টর পদমর্যাদার অফিসার রয়েছেন এই টিমে। রয়েছেন ডিআইজি পদ মর্যাদার অফিসারও। এছাড়া সেন্ট্রাল ফরেন্সিকের ৫ জন দিল্লি থেকে এসেছেন। পুরো বিষয়ে নজর রাখছেন একজন অ্যাডিশনাল ডিরেক্টর পদ মর্যাদার অফিসার। তদন্তের পুরো বিষয়টি মনিটরিং করা হচ্ছে দিল্লি থেকে।
সুত্রঃ মানবজমিন