কলকাতার আর জি কর হাসপাতালে ইন্টার্ন চিকিৎসক মৌমিতাকে ধর্ষণ ও হত্যার প্রতিবাদে সংহতি জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও একদল শিক্ষার্থী ‘মেয়েরা রাত দখল করো’ কর্মসূচি পালন করেছে।
শুক্রবার রাত ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে মিছিল নিয়ে জড়ো হন তারা।
শুরুতে তারা কলকাতার ইন্টার্ন চিকিৎসক এবং বাংলাদেশে বিভিন্ন সময়ে ধর্ষণের শিকার নারীদের পাশাপাশি সম্প্রতি বাংলাদেশে ছাত্র নাগরিক অভ্যুত্থানে নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
সমাবেশ শেষে একটি মিছিল নিয়ে উপাচার্যের বাসভবন চত্বর থেকে পুনরায় রাজু ভাস্কর্যে আসেন তারা।
সেখানে তারা তনু ও মুনিয়াসহ দেশের প্রতিটি ধর্ষণ মামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেন।
মিছিলে শিক্ষার্থীরা ‘গুঁড়িয়ে দেব পিতৃতন্ত্র, কেঁপে উঠবে রাষ্ট্রযন্ত্র’, ‘আমাদের শুধু মোমবাতি হাতে নীরব থাকার দায়’, ‘পোশাকের বাহানায়, পার পাবে না কোন পিশাচ’, ‘প্রশ্ন যখন স্বাধীনতার, বাংলা জুড়ে ওয়েদ্দেদার’ ইত্যাদি প্ল্যাকার্ড হাতে প্রতিবাদ জানান।
সমাবেশে উপস্থিত থেকে কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা শারমিন মুরশিদ।
তিনি বলেন, “তোমরা যদি রাস্তায় থাক, তাহলে আমিও রাস্তায়। তোমরা যদি অনিরাপদ হও, তাহলে নিরাপত্তাহীনতা কীভাবে দূর করব, তা নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে। যে সরকার হয়েছে, তা তোমাদের সরকার। আমি তোমাদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে চাই।”
নারীদের নিরাপত্তায় রাষ্ট্রীয় কাঠামোকে কীভাবে কাজে লাগানো যায় সে বিষয়ে নারীদের কাছে একটি প্রস্তাবও চেয়েছেন তিনি।
সমাবেশে ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষক তানিয়া মাহমুদা তিন্নি বলেন, “ভারত এবং বাংলাদেশ স্বাধীনতার এত বছর পরেও রাষ্ট্র নারী বান্ধব হয়নি। প্রীতিলতার মত নারী যোদ্ধারা যারা পুরুষের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করেছে তারা কী এই স্বাধীনতা চেয়েছিলেন?
” দীর্ঘ সময় বাংলাদেশে নারী প্রধানমন্ত্রী থাকলেও তারা তৃণমূলের নারীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে আমাদের প্রত্যাশা নতুন বাংলাদেশ চাই যেখানে নারীদের সমান অধিকারের আইন বিদ্যমান থাকবে।”
মেয়েরা নিজেদের রক্ষা করতে পারে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েদের হলে হলে দেরি করে ঢুকলে হল প্রশাসন চরিত্র হননের চেষ্টা করে থাকেন। আমরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা অর্জন করতে এসেছি চরিত্রের সার্টিফিকেট নয়।
“আপনারা আমাদের রক্ষা করতে হবে না। পুরুষরা রক্ষা করতে হবে না। আমরা নিজেরাই নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জানি। আমরাই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব।”
নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আনিয়া ফাহমিন বলেন, “বাংলাদেশে অসংখ্য ধর্ষণের ঘটনার মামলাই হয় না। অনেক ঘটনার মামলা হলেও সেটার কোনো বিচার হয় না। এমনও হয় যে অনেক ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল না হলে কেউ জানতেও পারে না।
“আমরা চাই, এমন ঘটনা যেন না হয় বা হলেও যেন ভুক্তভোগী নারী যেন তার বিচার পায়। আর্জি করের ঘটনা থেকে আমাদের উপলব্ধি হয়েছে যে আমাদের দেশেও বছরের পর বছর ধরে ঘটে আসছে। ধর্ষণের ঘটনা সামনে আসলেও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি সামনে আসে না।”
সমাবেশে একটি অবস্থানপত্র পাঠ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান।
এতে তিনি ১৩ দফা দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- তনু-মুনিয়াসহ প্রতিটি ধর্ষণ ও হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার করা; নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলা ১৮০ দিনের মধ্যেই নিষ্পত্তি করা; ধর্ম, গোত্র, বর্ণের ঊর্ধ্বে গিয়ে প্রতিটি লিঙ্গের মানুষের সম্পত্তিতে সমানাধিকার দেওয়া; সন্তানের অভিভাবকত্ব আইন পরিবর্তন করে নারীকে সন্তানের অভিভাবকত্ব দেওয়া।
২০০৯ সালের হাই কোর্টের নীতিমালা অনুযায়ী প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কর্মস্থলে যৌন নিপীড়নবিরোধী কমিটি এবং সেল তৈরি ও কার্যকর করা; নারী এবং লিঙ্গ বৈচিত্র্যের মানুষের জন্য সমান সুযোগ এবং নিরাপদ কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা; প্রতিটি ভিন্ন ভিন্ন লৈঙ্গিক পরিচয়ের মানুষের রাষ্ট্রীয় পরিচয়পত্রে তার লৈঙ্গিক পরিচয়ের স্বীকৃতি দেওয়া; আন্তর্জাতিক চুক্তি মেনে রাষ্ট্রীয় সব পর্যায়ে নারীর ৩৩ শতাংশ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করাও দাবিও তোলা হয় কর্মসূচিতে।
সুত্রঃ বিডিনিউজ.২৪.কম