শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে শেরপুরের নকলা পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ে ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষক কাজী আকিলুজ্জামান আপেলকে ৭ দিনের মধ্যে সাময়িক বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
রোববার শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ওই সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ।
এ শিক্ষকের বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়া স্কুলছাত্রী, তাদের মা, দাদি ও নানিকে নিয়ে অশালীন মন্তব্য করার অভিযোগ করেছে শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষক কাজী আকিলুজ্জামান আপেল নকলা উপজেলার বানেশ্বর্দী ইউনিয়নের বানেশ্বর্দী গ্রামের কাজী বাড়ির সামছুজ্জামানের ছেলে। দীর্ঘদিন ধরে তিনি নকলা পৌর শহরের নকলা পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ে ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, গত ১৫ আগস্ট বৃহস্পতিবার সকালে বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ক্লাসে পাঠদান করছিলেন শিক্ষক আপেল। ওই সময় তিনি ক্লাসে উপস্থিত কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশগ্রহণ করা শিক্ষার্থীদের নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেন। শিক্ষকের এমন মন্তব্যে উত্তেজনায় ফেটে পড়ে ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
জানা যায়, এ ঘটনায় রোববার (১৮ আগস্ট) ক্লাস বর্জন করে শিক্ষক আপেলের বহিষ্কারের দাবিতে বিদ্যালয় মাঠে আন্দোলন শুরু করে শিক্ষার্থীরা। পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুর রব তার অফিসকক্ষে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য, শিক্ষক, ভুক্তভোগী ছাত্রীর বাবা ও কোটা সংস্কার আন্দোলন নকলা উপজেলা শাখার কয়েকজন শিক্ষার্থীকে নিয়ে জরুরি সভায় বসেন। খবর পেয়ে সেখানে হাজির হন বেশ কয়েকজন সেনা সদস্য। হাজির করা হয় শিক্ষক আপেলকে। সভায় আপেল তার কৃতকর্মের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে ভবিষ্যতে এমন কিছু করবেন না বলে উপস্থিত সবার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
কিন্তু স্কুলছাত্রীর বাবা ও কোটা সংস্কার আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা শিক্ষক আপেলকে বহিষ্কারের দাবিতে অনড় থাকেন। পরে অফিসকক্ষে সবার উপস্থিতিতে বিষয়টি সোমবার সমাধানের আশ্বাস দেন প্রধান শিক্ষক আব্দুর রব। পরে তিনি শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে সভার মুলতবি ঘোষণা করেন। কিন্তু বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফিরে না গিয়ে শিক্ষক আপেলকে বহিষ্কারের এক দফা দাবিতে বিদ্যালয় মাঠ থেকে নকলা পৌর শহরে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। শিক্ষার্থীদের তীব্র আন্দোলনের মুখে পরে প্রধান শিক্ষক আব্দুর রব শিক্ষক আপেলকে সাময়িক বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নেন।
ভুক্তভোগী স্কুলছাত্রীর বাবা বলেন, এই শিক্ষক অশালীন আচরণ করে আমার মেয়েকে যেভাবে হেনস্তা করেছে তা ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। আমি তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী সরকারি হাজী জাল মামুদ কলেজের শিক্ষার্থী রাইয়্যান আল মাহাদী বলেন, একজন নারী শিক্ষার্থীর প্রতি শিক্ষক আপেলের এমন আচরণ আমরা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারি না। আমরা তার স্থায়ী বহিষ্কারসহ দৃষ্টান্তমূলক চাই।
এ বিষয়ে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক আব্দুর রব বলেন, বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতির সঙ্গে কথা বলে অভিযুক্ত সহকারী শিক্ষক কাজী আকিলুজ্জামান আপেলকে আগামী ৭ দিনের মধ্যে সাময়িক বরখাস্তের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। পরে অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সুত্রঃ যুগান্তর