সহকর্মী এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ তুলেছেন ভারতীয় বিমানবাহিনীর একজন নারী ফ্লাইং অফিসার। এ নিয়ে জম্মু ও কাশ্মীরের বুদগাম থানায় একটি মামলা করেছেন তিনি। ওই নারী কর্মকর্তা যাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন, তিনি ভারতীয় বিমানবাহিনীর একজন উইং কমান্ডার। ঘটনাটি এক বছর আগের। ওই নারী ও অভিযুক্ত কর্মকর্তা শ্রীনগরে ভারতীয় বিমানবাহিনীতে কর্মরত।
বিমানবাহিনীর ওই নারী কর্মকর্তা অভিযোগ করেন, এক বছর ধরে তিনি যৌন হয়রানি, নিপীড়ন ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানালেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
থানায় লিখিত অভিযোগে নারী কর্মকর্তা বলেন, ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর অফিসার্স মেসে এক পার্টিতে তাঁর ঊর্ধ্বতন ওই কর্মকর্তা জানতে চান, তিনি কোনো উপহার পেয়েছেন কি না। উপহার পাননি জানালে ওই কর্মকর্তা তাঁকে বলেন, উপহার তাঁর কক্ষে আছে। এরপর ওই কক্ষে নিয়ে যান। তিনি সেখানে যাওয়ার পর পরিবারের অন্য লোকজন কোথায় জানতে চাইলে কর্মকর্তা জানান, তাঁরা বাড়িতে নেই।
সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ওই নারী ফ্লাইং অফিসার বলেন, ‘নিজের কক্ষে নিয়ে যাওয়ার পর ওই কর্মকর্তা আমাকে ধর্ষণ করেন। আমি তাঁকে বাধা দেওয়ার সব রকম চেষ্টা চালাই। একপর্যায়ে আমি তাঁকে ধাক্কা দিয়ে কক্ষ থেকে বের হয়ে আসতে সমর্থ্য হই। বের হয়ে আসার সময় ওই কর্মকর্তা আমাকে বলেন, আসছে শুক্রবার তাঁর বাড়িতে পরিবারের কেউ থাকবে না। তখন আবার তাঁদের দেখা হবে।’
ঊর্ধ্বতন ওই কর্মকর্তা তাঁর সঙ্গে যা করেছেন, এ নিয়ে অভিযোগ জানাতে কিছুদিন সময় লেগেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ভয়ে ছিলাম। বুঝতে পারছিলাম না আমার কী করা উচিত। কারণ, আমার সঙ্গে এর আগেও এ ধরনের ঘটনা ঘটলেও আমি অভিযোগ তুলতে চাইনি। ঘটনার পর ওই কর্মকর্তা আমার কার্যালয়ে এসেছিলেন। এমন আচরণ করছিলেন যেন কিছুই ঘটেনি। দেখে মনে হচ্ছিল না তিনি অনুতপ্ত।’
এ নিয়ে মানসিক যন্ত্রণায় ভুগেছেন জানিয়ে ওই নারী কর্মকর্তা আরও বলেন, বিষয়টি তিনি তাঁর আরও দুজন নারী সহকর্মীকে জানালে তাঁরা এ বিষয়ে মামলা করার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, ‘একজন অবিবাহিত নারী হিসেবে সামরিক বাহিনীতে যোগ দেওয়া এবং এ ধরনের একটি জঘন্য ঘটনার শিকার হওয়ার বিষয়টি নিয়ে আমার মধ্যে কী মানসিক যন্ত্রণা হয়েছে, তা আমি বলে বোঝাতে পারব না।’
সহকর্মীর মাধ্যমে ধর্ষণের শিকার ওই নারী কর্মকর্তা জানান, তিনি অভিযোগ করার পর কর্নেল পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তাকে ঘটনাটি তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়। এরপর চলতি বছরের জানুয়ারিতে দুই দফায় অভিযুক্ত কর্মকর্তার সঙ্গে বসে দুবার তাঁকে জবানবন্দি দিতে হয়েছে। অভিযুক্ত কর্মকর্তার উপস্থিতি নিয়ে আপত্তি জানান তিনি। তবে প্রশাসনের ব্যর্থতা ধামাচাপা দিতে পরে সে তদন্তই এগোয়নি।
এরপর তিনি বিমানবাহিনীর অভ্যন্তরীণ একটি কমিটির কাছে অভিযোগ করেন। দুই মাস পর কমিটি বৈঠক করে। মেডিকেল পরীক্ষার জন্য জোরাজুরি করলেও তা করা হয়নি অভিযোগ করে ওই নারী কর্মকর্তা বলেন, ‘একজন যৌন নিপীড়ককে সাহায্যে স্টেশন কর্তৃপক্ষের পক্ষপাত দেখে মর্মাহত হই। ওই কমিটি তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেনি। প্রত্যেকেই যৌন নিপীড়ককে সাহায্য করেছে।’
সাময়িক অব্যাহতি ও ছুটির জন্য একাধিকবার আবেদন করেও ছুটি পাননি বলে জানান ওই নারী কর্মকর্তা। বলেন, তাঁকে নয়তো অভিযুক্ত কর্মকর্তাকে বদলির অনুরোধ করেও কর্তৃপক্ষের সাড়া পাননি।
ধর্ষণের অভিযোগ করেও বিমানবাহিনীর কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোনো প্রতিকার পাননি জানিয়ে ওই নারী কর্মকর্তা আরও করে বলেন, ‘আমাকে যে যৌন নিপীড়ন করল আর যাঁরা এটা জেনেও উল্টো নিপীড়কের পক্ষ নিল, তাদের সঙ্গে বাধ্য হয়ে আমাকে চলাফেরা করতে হয়েছে। কিন্তু ওই নিপীড়কের কিছুই হয়নি। আমাকে নিয়মিতভাবে কর্তৃপক্ষের দ্বারা হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে।’
তবে থানায় মামলা হওয়ার পর ভারতীয় বিমানবাহিনী জানিয়েছে, অভিযোগের বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সহযোগিতা করছে তারা। বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে বিমানবাহিনীর পক্ষ থেকে এনডিটিভিকে বলা হয়, ‘আমরা মামলার বিষয়টি সম্পর্কে জেনেছি। এ নিয়ে বুদগাম থানার পক্ষ থেকে বিমানবাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। আমরা স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে পূর্ণ সহযোগিতা করছি।’
সুত্রঃ ইত্তেফাক