মাহসা আমিনির দ্বিতীয় মৃত্যু বার্ষিকীর আগেই আরও একবার হিজাব-বিধি অমান্য করার রাস্তায় হাঁটছেন ইরানের নারীরা। সম্প্রতি ইরানের রাস্তায় হিজাব ছাড়া বহু নারীকেই অবাধে ঘুরতে দেখা গেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের নানা ছবি ও ভিডিওতেও মাথায় আবরণ দৃশ্যমান ছিল না। যদিও কোনো সরকারি কর্মকর্তা এ ধরনের ঘটনার কথা স্বীকার করেনি।
২০২২ সালের ১৬ অক্টোবর ঠিকমতো হিজাব না পরার ‘অপরাধে’ মাহসা আমিনি নামের ২২ বছরের এক তরুণীকে গ্রেপ্তার করে ইরানের নীতিপুলিশ। ২৪ ঘণ্টা যেতে না যেতেই পুলিশি হেফাজতে রহস্যজনক মৃত্যু হয় তার। মাহসার উপরে অত্যাচারের অভিযোগ উঠে পুলিশের বিরুদ্ধে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে হিজাব-বিরোধী আন্দোলন শুরু হয় ইরানের নানা প্রান্তে।
সাবেক ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লা খমেনি এবং বর্তমান ধর্মীয় নেতা আলি খামেনির ফতোয়া উড়িয়ে ইরানের মেয়েরা ঘোষণা করেন, দেশ জুড়ে হিজাব পরার বাধ্যতামূলক নিয়ম তারা মানবেন না। সরকারি ক্র্যাকডাউনের জেরে ৫০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত এবং ২২,০০০ জনকে আটক করা হয়। গত মে মাসে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় ইরানের কট্টরপন্থী সাবেক প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির মৃত্যুর পর মাসুদ পেজেশকিয়ান ইরানের নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই হিজাব-বিধিতে শিথিলতা এসেছে।
নতুন সংস্কারবাদী প্রেসিডেন্ট নীতিপুলিশ কর্তৃক নারীদের হয়রানি বন্ধ করার প্রতিশ্রুতিতে প্রচারণা চালাচ্ছেন। কিন্তু দেশটির চূড়ান্ত কর্তৃত্ব রয়ে গেছে ৮৫বছর বয়সী সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির হাতে , যিনি অতীতে বলেছিলেন “হিজাব না পরা ধর্মীয়ভাবে এবং রাজনৈতিকভাবে নিষিদ্ধ।”
কিছু পর্যবেক্ষক বলছেন, মুসলিম নারীদের জন্য, মাথা ঢেকে রাখা সৃষ্টিকর্তার সামনে ধার্মিকতা এবং তাদের পরিবারের বাইরে পুরুষদের সামনে শালীনতা মেনে চলার একটি চিহ্ন। ইরানে, হিজাব পরিধান দীর্ঘকাল ধরে একটি রাজনৈতিক প্রতীকও ছিল৷ ইতিমধ্যে, সরকার ব্যক্তিগত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে চিহ্নিত করেছে যেখানে নারীদের হিজাব ছাড়াই দেখা যায়।
নজরদারি ক্যামেরার মাধ্যমে হিজাবহীন নারীদের খুঁজে বের করা হচ্ছে যারা গাড়ির মধ্যে তাদের মাথা অনাবৃত রাখছেন। তাদেরকে জরিমানা করা হচ্ছে এবং গাড়ি জব্দ করা হচ্ছে । জাতিসংঘ বলেছে, দেশটির সরকার ২০২৪ সালের তেহরান আন্তর্জাতিক বইমেলা এবং কিশ দ্বীপে মাথা অনাবৃত রাখা নারীদের পর্যবেক্ষণের জন্য এরিয়াল ড্রোন ব্যবহার করার মতন ঘটনাও ঘটিয়েছে। তবুও কেউ কেউ মনে করেন জুলাই মাসে পেজেশকিয়ানের নির্বাচন, হিজাব নিয়ে উত্তেজনা কমাতে সাহায্য করেছে । হামিদ জারিনজুই নামের একজন বই বিক্রেতা বলছেন – ‘পেজেশকিয়ান দায়িত্ব নেওয়ার পরে দেশে অনেকটাই শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ফিরে এসেছে। ‘
সূত্র : দ্য উইক, মানবজমিন