ভারতের একটি থাকার ভেতর এবার যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন এক নারী। দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য উড়িষ্যায় গত ১৫ সেপ্টেম্বর এ ঘটনা ঘটেছে। থানার মতো এটি সুরক্ষিত জায়গায় এমন ঘটনা ঘটায় ভারতজুড়ে বিক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, যৌন নির্যাতনের শিকার ওই নারী আইনে স্নাতক। তিনি উড়িষ্যার রাজধানী ভুবেনেশ্বরে একটি রেস্টুরেন্ট চালান। একজন সেনা কর্মকর্তার সঙ্গে তার বাগদান হয়েছে। থানায় ওই সেনা কমকর্তাও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
এদিকে উড়িষ্যা রাজ্য সরকার জানিয়েছে, অবসরপ্রাপ্ত একজন বিচারপতিকে ঘটনা তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এরইমধ্যে চার পুলিশ সদস্যকে বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া বদলি করা হয়েছে এক পুলিশ কর্মকর্তাকে।
কীভাবে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন, তা বর্ণনা করে একটি ভিডিও প্রকাশ করেছেন ওই নারী। ভিডিওটি এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
ভিডিওতে ওই নারী বলেন, রাতে রেস্টুরেন্ট বন্ধ করে ফেরার পথে রাস্তায় কিছু মানুষ তাঁকে ও তাঁর বাগদত্তাকে হেনস্তা করে। পরে তাঁরা ভারতপুর থানায় যান এবং ওই হেনস্তাকারীদের ধরতে সেখানে পুলিশ পাঠানোর অনুরোধ করেন। কিন্তু পুলিশ নেয়নি।
ওই নারী বলেন, ‘পুলিশ অভিযোগ না নিয়ে উল্টো আমাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। যখন আমি তাদের বলি যে আমি একজন আইনের স্নাতক এবং আমি জানি আমার আইনি অধিকার কতটুকু, তখন তারা আরও খেপে যায়।’
এরপর পুলিশ তাঁর বাগদত্তাকে হাজতে ঢোকায় বলে অভিযোগ করেন ওই নারী। তিনি বলেন, আমি বাধা দিতে চাইলে দুই নারী পুলিশ সদস্য আমাকে চুলের মুঠি ধরে মারধর করেন। এরপর তারা আমার দুই হাত বেঁধে একটি ঘরে আটকে রাখেন।
আটকে রাখা ওই ঘরে একজন পুলিশ কর্মকর্তা তাঁকে যৌন নির্যাতন করেন বলেও অভিযোগ করেন ওই নারী। তিনি বলেন, ‘চিৎকার বন্ধ না করলে আমাকে ধর্ষণ করা হবে বলেও হুমকি দেন তিনি।’
তবে পুলিশ দাবি করেছে, তাঁরা দুজনেই মদ্যপ অবস্থায় থানায় এসেছিলেন। বিশেষ করে ওই নারী ছিলেন খুবই মারমুখী। তিনি এক নারী পুলিশ সদস্যকে থাপ্পড়ও মেরেছেন। এরপর ওই নারীকে গ্রেপ্তার করে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তোলা হয়। আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
এ ঘটনার তিন দিন পর হাইকোর্ট তাঁকে জামিন দেন। হাইকোর্টের বিচারপতি আদিত্য কুমার মোহাপাত্রা বলেন, ‘নথিপত্র যাচাই করে মনে হচ্ছে, ওই নারীর অভিযোগ অত্যন্ত গুরুতর। তাঁকে গ্রেপ্তারের সময় আইন অনুযায়ী যেসব বিধি মানার কথা, পুলিশ তা মানেনি।
এ ঘটনায় ভারতীয় সেনাবাহিনীও আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবাদ জানিয়েছে। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে উড়িষ্যার প্রধান বিচারপতির কাছে দেওয়া চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘কোনো অভিযোগ ছাড়াই একজন সেনা কর্মকর্তাকে প্রায় ১৪ ঘণ্টা থানায় আটকে রাখা হয়েছে। এতে তার সম্মান ও সুনামহানি হয়েছে। এ ঘটনায় ভারতীয় সেনাবাহিনী চরমভাবে ক্ষুব্ধ।’
উড়িষ্যা রাজ্য সরকার বলেছে, তারা সেনাবাহিনীর প্রতি শ্রদ্ধাশীল। ঘটনাটি তদন্তে এরই মধ্যে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি চিত্তরঞ্জন দাসকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। দুই মাসের মধ্যে তিনি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবেন।
এদিকে পুলিশের অপরাধ তদন্ত শাখার কর্মকর্তা নরেন্দ্র বেহেরা বলেছেন, তারাও তদন্ত শুরু করেছেন।
এর আগে গত ৯ আগস্টে পশ্চিমবঙ্গের কলকতায় আর জি কর হাসপাতালের ভেতরে এক নারী চিকিৎসক ধর্ষণ ও হত্যার শিকার হন। এ নিয়ে ভারতজুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।
সুত্রঃ ইন্ডিপেন্ডডেন্ট