বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন নিপীড়নের শিকার হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯০ শতাংশ ছাত্রীই অভিযোগ করেন না। গবেষণা প্রতিবেদনের এই পরিসংখ্যান দেখে ধাক্কা লেগেছিল। এটি কেবল একটি পরিসংখ্যান নয়, একটি ভীতিকর বার্তা। ঘটনার একটু ভেতরে গেলেই তা উপলব্ধি করা যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন এটা যে কী মানসিক ট্রমা, তা ভুক্তভোগী ছাড়া কেউ বুঝবে না। শিক্ষকের বিরুদ্ধে নারী শিক্ষার্থীকে পরীক্ষায় বেশি বা কম নম্বর দেওয়ায়, শিক্ষা সফরে হয়রানি, বাজে শব্দ ব্যবহার ও অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি বিষয়গুলো যৌন নিপীড়ন। ১০ শতাংশ ছাত্রী জানান, নির্যাতনের ৩০ শতাংশ বাজে মন্তব্য ও ৬০ শতাংশ সাইবার হয়রানি। নিপীড়নের ঘটনায় মাত্র ১০ শতাংশ ছাত্রী অভিযোগ করেছিলেন। এর মধ্যে ৫ শতাংশ বিভাগের শিক্ষকদের কাছে এবং বাকি ৫ শতাংশ সেলে। ৯২ শতাংশ জানান, ন্যায়বিচার না পাওয়া ও চরিত্র হননের ভয়ে তাঁরা সেলে অভিযোগ করে না।
সম্প্রতি বাকৃবি কৃষি-অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক হারুন আর রশিদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত মালয়েশিয়ান নারী শিক্ষার্থী যৌন নির্যাতনের অভিযোগ করেন। ময়মনসিংহে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) শিক্ষার্থীকে যৌন নির্যাতনের প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। যৌন নিপীড়নের ক্ষত নারীর পথের গতি কমিয়ে দেয়। বিচারহীনতা তাতে শেষ পেরেক ঠুকে দেয়। কুষ্টিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুলপরী খাতুনের মতো প্রতিবাদ করার মনের জোরও সব নারীর নেই।
শিক্ষক হলেন জাতির আলোকবর্তিকাবাহী এবং মানবজাতির ভবিষ্যৎ রূপকার। ঘুণে ধরা সমাজব্যবস্থা ভেঙে শিক্ষকেরাই পারেন নতুন সমাজ গড়তে। শিক্ষকদের বলা হয় জীবনের চরিত্র গঠনের প্রথম গুরু, মানুষ গড়ার শ্রেষ্ঠ কারিগর। তাঁদের অসাধারণ পাণ্ডিত্য, চারিত্রিক মাধুর্য ও স্নেহময় মধুর ব্যবহারের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কাছে হয়ে ওঠেন আদর্শের প্রতীক। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কিছু শিক্ষকের চরিত্র স্খলনের যে কিচ্ছা-কাহিনি শোনা যাচ্ছে, তা গোটা শিক্ষকসমাজের জন্য লজ্জার। শিক্ষকদের নারীবিদ্বেষী মনোভাবের অভ্যাস কত দিনে পরিবর্তন আসবে, সেটা কারও জানা নেই।
