নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাহরীরকে ‘জঙ্গি’ উল্লেখ করে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মো. ময়নুল ইসলাম।
গত ৫ অগাস্ট সরকার পতনের পর নিষিদ্ধ সংগঠনটির প্রকাশ্যে চলে আসা এবং প্রকাশ্যে নানা কর্মসূচি পালনের মধ্যে শনিবার চট্টগ্রাম সফরে গিয়ে পুলিশ প্রধান এ কথা বলেন। মহানগর পুলিশ কমিশনারের সম্মেলন কক্ষে চট্টগ্রামের শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন তিনি।
একজন গণমাধ্যমকর্মী চট্টগ্রামে হিযবুত তাহরীরের তৎপরতার উদাহরণ দিয়ে এ বিষয়ে পুলিশের পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে চাইলে পুলিশ প্রধান বলেন, হিযবুত তাহরীর জঙ্গি সংগঠন। সে ব্যাপারে আমাদের মামলা হয়েছে। আমাদের গ্রেফতার অভিযান চলছে, চলবে। জঙ্গির ক্ষেত্রে আমরা আইনি ব্যবস্থা নিচ্ছি।
অনেক তরুণ না জেনে এই সংগঠনের সঙ্গে জড়াচ্ছে- সেই সংবাদ কর্মীর এমন মন্তব্যের পর তিনি বলেন, যারা কিশোর বা যারা এটাতে জড়িয়ে পড়ছে বা আকৃষ্ট হচ্ছে, সেক্ষেত্রে আমাদের সমাজের অনেক কিছু করণীয় আছে।
৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দিনই ঢাকায় মিছিল করে সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। এরপর আরও নানা দাবিতে মিছিলের পাশাপাশি ঢাকায় গোলটেবিল বৈঠকও করেছে সংগঠনটি। চট্টগ্রামেও পালন করছে নানা কর্মসূচি।
সন্ত্রাসবিরোধী যে আইনে হিযবুত তাহরীরকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে, সেই আইনটি বাতিলের দাবি জানাচ্ছে তারা।
গত ৫ সেপ্টেম্বরেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আবেদন করার কথাও জানিয়েছে সংগঠনটি। তবে সরকারের তরফ থেকে কোনও বক্তব্য আসেনি।
জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ দেশের শত্রু উল্লেখ করে আইজিপি বলেন, জঙ্গিবাদী ও সন্ত্রাসবাদী কার্যক্রম দেশের শত্রু। যারা জঙ্গিবাদে জড়িয়েছে, সন্ত্রাসবাদে জড়িত হয়েছে তাদেরকে আইনের আওতায় আনার জন্য আমরা তৎপর আছি।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর জঙ্গি তৎপরতার অভিযোগে আটক বেশ কয়েকজনের জামিন পাওয়া নিয়ে আইজিপি বলেন, যারা জামিন পেয়েছে, যদি কোনও কারণে আবার দেখি জঙ্গিবাদে ফিরেছে, সন্ত্রাসবাদী কার্যক্রম করছে, সেখানে আমরা কিন্তু তাকে আবার আইনের আওতায় আনবো।
জামিন একটি আইনি অধিকার মন্তব্য করে পুলিশপ্রধান বলেন, আমাদের সার্ভিলেন্স সবসময় আছে। কোনও ধরনের অপরাধ কাজে বা অপতৎপরতায় জঙ্গি বা সন্ত্রাসীদের জড়িত হওয়ার সুযোগ নেই। পুলিশের সব ইউনিট কাজ শুরু করেছে। সরকার পতনের খবরে থানায় থানায় আক্রমণের পর নিষ্ক্রিয় হয়ে যাওয়া পুলিশ আবার সক্রিয় হয়েছে।
আইজিপি বলেন, আন্দোলনের ফলে পুলিশ বাহিনী নতুন সময়ে পদার্পণ করেছে, এখন সবাই কিন্তু আন্তরিক। আজকের মিটিংয়ের উদ্দেশ্য ছিল, আমরা কী করে পূর্ণ উদ্যমে মানুষের সেবায় ঝাঁপিয়ে পড়তে পারি; সবাই নিজ দায়িত্ব পালনে অত্যন্ত উদগ্রীব। দায়িত্ব গ্রহণের পর আমার মূল লক্ষ্য ছিল পুলিশের সকল ইউনিটকে অপারেশনাল করা, যে সদস্যরা মনোবল হারিয়েছে বিভিন্নভাবে ট্রমাটাইজড হয়েছে, তাদের মনোবল ফিরিয়ে আনা, তাদেরকে কাজের পরিবেশ করে দেওয়া, তাদেরকে কাজে ফেরানো। ইতোমধ্যে সকল ইউনিটের অপারেশনাল কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
আন্দোলনে ছাত্র-জনতা ও পুলিশের মৃত্যুর প্রতিটি ঘটনার তদন্ত এবং বিচারের আশ্বাস দিয়ে আইজিপি বলেন, জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন কাজ করছে। সরকার অত্যন্ত আন্তরিক সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের বিষয়ে।
সম্প্রীতি বিনষ্টের সুযোগ নেই
বিভিন্ন জায়গায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে কিছু ক্ষুদ্র গোষ্ঠী তৎপর বলে মন্তব্য করে আইজিপি বলেন, আমরা চাই, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারী কোনও ঘটনা ঘটবে না। এ দেশ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, মুসলমান সবার। এ দেশের প্রতিটা বিষয়ে সবার সমান অধিকার। এটা সংবিধান স্বীকৃত এবং আইনি কাঠামোর মধ্যে যে কোনো অপতৎপরতা আমরা রুখে দিতে চাই।
দুর্গোৎসবে পরিপূর্ণ নিরাপত্তার আশ্বাস দিয়ে পুলিশ প্রধান বলেন, কেউ যাতে বিশৃঙ্খলা করতে না পারে। কেউ যদি করতে চায় তাকে আমরা আইনের আওতায় নেবো। কোনও ধরনের কোনো সুযোগ নেই।
পার্বত্য চট্টগ্রামে সংঘাত প্রসঙ্গে ময়নুল ইসলাম বলেন, তিন জন উপদেষ্টাসহ সেখানে গিয়েছিলাম। পাহাড়ি-বাঙালি পাশাপাশি থাকলে ভুল বোঝাবুঝি হতে পারে। সেটাকে ইস্যু করে কোনও একটি পক্ষ চেষ্টা করেছে এটাকে উসকে দিতে। বিভিন্ন প্রচারণার মাধ্যমে নানা রকম গুজব ছড়িয়েছে। সাইবার প্যাট্রলিংয়ের মাধ্যমে জানতে পারছি কারা এসব রটনা, গুজব, মিসইনফরমেশন ও ডিজইনফরমেশন কারা করার চেষ্টা করছে। সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
সরকার পতনের পর মানুষের হাতে আইন তুলে নেওয়ার প্রবণতার মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রামে প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যার প্রসঙ্গেও কথা বলেন আইজিপি।
ময়নুল ইসলাম বলেন, প্রতিটি ক্ষেত্রে আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনায় ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, নাম-ধাম সবার পাওয়া গেছে। বাকিদের গ্রেফতারে প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। একটা বিষয় স্পষ্ট করতে চাই, ‘মব জাস্টিসের’ নামে কেউ আইন হাতে তুলে নেবেন না। যে অপরাধ আপনি করলেন, সে অপরাধে কাউকে ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই। আপনাকে আইনের আওতায় আসতেই হবে।
সুত্রঃ বাংলা ট্রিবিউন