সমাজে অভিভাবকত্ব, উত্তরাধিকার আইনে বৈষম্য রেখে নারীদের অধিকারবঞ্চিত করা হচ্ছে। অধিকার আদায়ের বিষয়গুলোতে নারীদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সমতল, পাহাড়, দলিত, হিজড়া, কৃষক, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি—প্রত্যেকের অধিকার আদায়ের বিষয়ে জোর দিয়ে অন্তর্ভুক্তিমূলক সমতার সমাজ গড়ে তুলতে হবে।
আজ সোমবার ‘সংলাপ: সবাই মিলে সমতা’ শিরোনামের এক সংলাপে এ কথা বলেন বক্তারা। রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা একশনএইড বাংলাদেশ এ সংলাপের আয়োজন করে। সংলাপে উপস্থিত ছিলেন উন্নয়নকর্মী, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক, অভিনয়শিল্পী, উদ্যোক্তা, কৃষক, যুবক, শিশু ও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা।
সংলাপে বক্তারা বলেন, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এই সময়ে নারীর অধিকারের বিষয়গুলো নতুন করে তুলে ধরার সুযোগ তৈরি হয়েছে। দাবিগুলো বাস্তবায়নের পথে এগিয়ে নিতে অন্তর্বর্তী সরকারকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রান্তিক মানুষের জীবন, নারীর আইনি-সামাজিক অধিকারের পাশাপাশি পাহাড়ে সংঘাত এবং ‘মব ট্রায়াল’ প্রসঙ্গও সংলাপে উঠে আসে।
একশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ ফারাহ্ কবির সংলাপ সঞ্চালনা করেন। তিনি বলেন, ভারতে উত্তরাধিকার আইনে নারী-পুরুষের সমতা দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশেও এই সমতা দেওয়া সম্ভব। অধিকার আদায়ের বিষয়গুলোতে নারীদের এখন ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
ফারাহ্ কবির আরও বলেন, মানুষের দুর্বল জায়গাগুলোকে কেন্দ্র করে কিছু স্বার্থান্বেষী মহল নানা কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। কারণ, প্রশাসনিক কাঠামোগুলো নড়বড়ে হয়ে গেছে। জনগণের শক্তিকে ব্যবহার করে অন্যায়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে, যাতে কারও প্রতি কোনো অন্যায় না হয়।
এ সময় অভিনয়শিল্পী আজমেরী হক বাঁধন সন্তানের অভিভাবকত্ব নিয়ে নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, আইন করে নারীদের নিয়মতান্ত্রিকভাবে অধিকারবঞ্চিত করা হয়। উত্তরাধিকার, অভিভাবকত্ব আইনে বৈষম্য দূর করা হলে সমাজে নারীর প্রতি বিদ্যমান বৈষম্য অনেকখানি কমে যাবে। নারীদের এখন অধিকারের বিষয়গুলো জোর গলায় চাইতে হবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নিশিতা জামান বলেন, এখনো অনেক বৈষম্য রয়ে গেছে। তাই আন্দোলনে সরকার পতনের পর মুক্তির স্বাদ পাওয়া গেলেও এখনো তা উদ্যাপন করা যাচ্ছে না। উত্তরাধিকার আইনসহ যেসব বৈষম্যের কথা উঠে এসেছে, তা আলোচনার দরকার। যখন নির্বাচিত সরকার আসবে, তখন তারা যেন বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখে।
পাহাড়ে চলমান সংঘাত নিয়ে শিক্ষার্থী পুছাইনু মারমা বলেন, পাহাড়ের জনগণ অধিকার নিয়ে কথা বললে তাঁদের বিচ্ছিন্নতাবাদী তকমা লাগিয়ে দেওয়া হয়। পাহাড়ের মানুষ সহিংসতা চান না, মিলেমিশে থাকতে চান। ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি করা হলে এ রকম সংঘাত হবে না। তাঁর মতে, পরিস্থিতি এমন যে আগে বেঁচে থাকার অধিকার দেওয়া হোক।
দলিত সম্প্রদায়ের খিলন রবিদাস বলেন, অন্যদের মতো সবার সঙ্গে মিলেমিশে চলার অধিকারটুকুও তাঁরা পান না। নতুন সরকারের কাছে তিনি এসব বৈষম্যের বিলোপ চান। নারীদের জন্য কৃষি কার্ড প্রচলনের দাবি করেন সুনামগঞ্জের কৃষক আনোয়ারা বেগম। তিনি বলেন, নারী কৃষিশ্রমিকেরা এখন মজুরিবৈষম্যের শিকার। পুরুষেরা দিনে ৫০০ টাকা মজুরি পেলেও নারীরা পান ৩০০ টাকা।
সুত্রঃ প্রথম আলো