অভিযুক্ত তানজিম খান তাজ নিরব। ছবি: সংগৃহীত।
রাজশাহীতে বিয়ের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় এক নারী চিকিৎসককে নিজ বাসা থেকে অপহরণ করে তুলে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম তানজিম খান তাজ নিরব (৩০)। অপহরণের শিকার চিকিৎসকের নাম শাকিরা তাসনিম দোলা (২৬)।
সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) ভোরে রাজশাহী নগরীর চন্দ্রিমা এলাকার বাসা থেকে শাকিরাকে অপহরণ করেন তানজিমসহ কয়েকজন।
জানা যায়, তানজিম খান তাজ নিরব বাড়ি পাবনার সাথিয়া থানার বামনডাঙ্গা গ্রামের আবু হানিফের ছেলে। ডিম ব্যবসায়ী তানজিম নিজেকে ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয় দিতেন। তিনি রাজশাহীতেই বসবাস করেন।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, তানজিম নিজেকে ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয় দিয়ে চার বছর ধরে শাকিরার সঙ্গে প্রেম করে আসছিলেন। সম্প্রতি তিনি শাকিরাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। পরে শাকিরার পরিবার জানতে পারে, তানজিম ওরফে নিরব ম্যাজিস্ট্রেট নন। তার প্রকৃত পরিচয় জানতে পেরে বিয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয় শাকিরার পরিবার। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে শাকিরাকে অপহরণের পরিকল্পনা করেন তানজিম খান।
অপহৃত এই নারী চিকিৎসকের সন্ধান পায়নি পুলিশ। তবে অপহরণের জন্য ব্যবহৃত মাইক্রোবাসটি শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। চাঞ্চল্যকর এই ঘটনায় পরিবারের পক্ষে অপহৃতের বাবা রাজশাহী মেট্টোপলিটন পুলিশের চন্দ্রিমা থানায় একজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। তবে পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
ভুক্তভোগীর পারিবারিক সূত্র জানায়, সোমবার ফজরের আজানের পর শাকিরার বাবা আবু তাহের খুরশিদ বকুল নামাজের জন্য মসজিদের উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হন। তিনি পাঁচতলা বাড়ির প্রধান ফটকে তালা দিয়ে চাবি নিয়ে বের হন। তিনি বাড়ি থেকে বের হওয়ার পরই দুর্বৃত্তরা তাকে জিম্মি করে চাবি কেড়ে নেয়। এরপর বাড়ির দোতলায় উঠে তারা চিকিৎসক শাকিরাকে টেনে নামাতে শুরু করে। এ সময় বাঁধা দিতে এগিয়ে আসলে চিকিৎসক শাকিরার মা রেহেনা পারভীন শিউলিকে দুর্বৃত্তরা দেয়ালের সঙ্গে মাথা ঠুকে এবং তার মাথায় তালা দিয়ে আঘাত করে। এরপর তাকে বিছানায় ফেলে গলা চিপে হত্যার চেষ্টা করে। এসময় দুর্বৃত্তরা বাবা-মেয়েকে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়।
বাবা ও মেয়েকে গাড়িতে তোলার পর মুখ বেঁধে ইনজেকশন পুশ করা হয়। চিকিৎসকের বাবা আবু তাহের খুরশিদ বকুলের চেতনা ফিরলে তাকে সিরাজগঞ্জের সলঙ্গা থানা এলাকার মহাসড়কের পাশে নামিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। তবে চিকিৎসক শাকিরাকে নিয়ে যায় অপহরণকারীরা। চিকিৎসকের বাবা আবু তাহের খুরশিদ বকুল সলঙ্গা থানা-পুলিশের মাধ্যমে স্বজনদের কাছে ফিরে আসেন।
পুলিশ জানায়, রাজশাহীর ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ থেকে সদ্য ডেন্টাল বিডিএস শেষ করা চিকিৎসক, অপহৃত শাকিরা তাসনিম দোলা শহরের চন্দ্রিমা আবাসিক এলাকার নিজেদের বাসায় পরিবারের সঙ্গেই থাকতেন। সোমবার ভোরে ঐ বাসা থেকে বাবা তাকে অপহরণ করে তুলে নেওয়ার সময় তার মাকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে দুর্বৃত্তরা।
পুলিশ আরও জানায়, চিকিৎসক শাকিরাকে অপহরণে ব্যবহৃত মাইক্রোবাসটি শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। মাইক্রোবাসের রেজিস্ট্রেশন নম্বর জানা গেছে। এ ঘটনায় চিকিৎসকের বাবা আবু তাহের খুরশিদ বকুল বাদী হয়ে সোমবার দিবাগত রাতে আরএমপির চন্দ্রিমা থানায় মামলা করেছেন। মামলায় আসামি হিসেবে তানভীর খান তাজ রওশন আলম সহ অজ্ঞাত তিনজন সহযোগীকে আসামি করা হয়েছে।
আরএমপির নগরীর চন্দ্রিমা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মতিয়ার রহমান বলেন, ‘তানভীর খান একটা টাউট লোক। তিনিই অপহরণের মূলহোতা। তার অবস্থান জানার এবং অপহৃত নারী চিকিৎসককে উদ্ধারের জন্য সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চলছে। আশা করছি শিগগিরই একটা ভালো রেজাল্ট আসবে।’
এদিকে আরএমপির মুখপাত্র অতিরিক্ত উপ-কমিশনার সাবিনা ইয়াসমিন জানান, অপহৃত নারী চিকিৎসককে উদ্ধারে সর্বাত্মক তৎপরতা চালানো হচ্ছে। অপহরণকারী ও অপহৃতের সন্ধানের সব ধরণের চেষ্টা চলছে।
সুত্রঃ প্রথম আলো