মোসা. তাসলিমা বেগম। লালমোহন উপজেলার কালমা ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের গাজী বাড়ির মৃত আবু তাহেরের মেয়ে। ২০২৩ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি পারিবারিকভাবে পার্শ্ববর্তী চরফ্যাশন উপজেলার রসুলপুর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের আব্দুর রবের ছেলে মামুনের সঙ্গে বিয়ে হয় তার। তবে বিয়ের কয়েক মাস পর থেকেই যৌতুকের জন্য স্বামীর বাড়ির লোকজনের নির্যাতনের শিকার হতে শুরু করেন তাসলিমা । সবশেষ গত ৭ই জানুয়ারি নির্যাতনের যেন সব সীমা অতিক্রম করে তার শাশুড়ি এবং ননদ। শাশুড়ি ধরে রাখেন তাসলিমার হাত, আর ননদ একে একে গরম লোহার রড দিয়ে দিতে থাকেন শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছ্যাঁকা। পোড়া যন্ত্রণা নিয়ে এখন হাসপাতাল বেডে শুয়ে শুয়ে কাতরাচ্ছেন তাসলিমা বেগম। তিনি অভিযোগ করে বলেন, বিয়ের পর আমি যখন চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা তখন থেকেই আমার শাশুড়ি জাহানারা বেগম ও ননদ নাসিমা বেগম যৌতুকের জন্য আমার সঙ্গে ঝামেলা করার পাশাপাশি নিয়মিত ঝগড়া করতে থাকেন। মাঝে মধ্যে মারধরও করতেন তারা। এরইমধ্যে আমার স্বামী প্রবাসে চলে যান। তবে শাশুড়ি আর ননদের এমন নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে তাদের নামে আদালতে মামলা করি। আমার ছোট একজন সন্তান রয়েছে। যার জন্য তাদের নির্যাতন সহ্য করেও সেখানে থাকার চেষ্টা করি। তবে তাদের নির্যাতন থেকে রক্ষা পেতে মামলা করায় তারা আরো ব্যাপকভাবে আমার ওপর নির্যাতন চালাতে থাকেন। এরই ধারাবাহিকতায় গত ৭ জানুয়ারি রাতে হঠাৎ করে রুমে ঢুকে শাশুড়ি আমার দুই হাত শক্ত করে ধরে রাখেন, আর গরম লোহার রড দিয়ে হাত-পাসহ শরীরের বিভিন্নস্থানে ছ্যাঁকে দিতে থাকেন আমার ননদ নাসিমা বেগম। গৃহবধূ তাসলিমা বেগম আরো বলেন, এই নির্মম নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে তাদের কাছে অসহায় আর করুণভাবে জীবন ভিক্ষার আকুতি জানাই। তারা আমার কোনো আকুতিই শুনেননি। তবে শাশুড়ি-ননদের নির্যাতনের যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে চিৎকার দিলে তা শুনে প্রতিবেশীরা ৯৯৯-এ কল দিলে পুলিশ গিয়ে তাদের হাত থেকে আমাকে রক্ষা করেন। পরে পুলিশ সেখান থেকে আমাকে এনে আমার স্বজনদের খবর দিয়ে নিয়ে তাদের সঙ্গে আমাকে বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। নিরুপায় হয়ে আমি ছোট অবুঝ বাচ্চাকে নিয়ে বাবার বাড়িতে চলে আসি। এরপর শাশুড়ি ও ননদের দেওয়া গরম লোহার রডের ছ্যাঁকার ক্ষতস্থানে তীব্র যন্ত্রণা শুরু হওয়ায় লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে ভর্তি হই। গত ৭ই জানুয়ারি রাত থেকে হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন রয়েছি। তবে যারা আমার ওপর এমন অমানবিক নির্যাতন করেছে আমি তাদের কঠিন শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। এ অভিযোগের ব্যাপারে জানতে ভাসুর মো. সুমন জানান, তাকে গরম লোহার রড দিয়ে ছ্যাঁক দেওয়ার অভিযোগটি মিথ্যা। সে নিজেই নিজের শরীরে ক্ষত করে হাসপাতালে ভর্তি আছে। এ বিষয়ে লালমোহন থানার ওসি (তদন্ত) মো. মাসুদ হাওলাদার বলেন, এমন কোনো ঘটনা সম্পর্কে আমার জানা নেই। তবে ভুক্তভোগী ওই গৃহবধূর পরিবারের পক্ষ থেকে কেউ থানায় অভিযোগ করলে শশীভূষণ থানার সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদেরকে প্রয়োজনীয় আইনি সহযোগিতা প্রদানের সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো।
সুত্রঃ মানবজমিন