ভারতের মুর্শিদাবাদ থেকে আটক জঙ্গি আব্বাস আলিকে জেরা করে একাধিক তথ্য পাওয়া গিয়েছে। আপাতত ধৃত আব্বাস অসম এসটিএফের হেপাজতে রয়েছে। ম্যারাথন জেরায় উঠে আসছে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। আর সে ব্যাপারে তদন্তের সূত্রে জানা যাচ্ছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী থেকে পলাতক সৈয়দ জিয়াউল হক ওরফে মেজর জিয়ার নাম। এই মেজর জিয়া কয়েকমাস আগে মুর্শিদাবাদের সীমান্ত এলাকার এক খারিজি মাদ্রাসায় জিহাদি ভাষণও দিয়ে গিয়েছেন।
বাংলাদেশের সমস্ত জঙ্গি সংগঠনকে একছাতার তলায় আনার কাজ করছে ওই মেজর জিয়া। পাক গুপ্তচর সংস্থা নিয়ন্ত্রিত ইউনাইটেড জেহাদ কাউন্সিলের নির্দেশে আনসারুল্লা বাংলা টিমের (এবিটি) নিয়ন্ত্রণে সব জঙ্গি-জেহাদি সংগঠনগুলিকে আনার কাজ এখন তার কাঁধে।
২০১১ সালে তৎকালীন সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে সেনা অভ্যুত্থানের ব্যর্থ চেষ্টার পর থেকেই গা-ঢাকা দেয় মেজর জিয়া। এসটিএফ সূত্রে জানা গিয়েছে, উত্তর দিনাজপুর জেলা, দক্ষিণ দিনাজপুর, মালদা সহ একাধিক জেলায় বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া কোনও অংশে ঘাঁটি গেড়ে সংগঠনে নিয়োগ হওয়া নতুনদের মগজধোলাই করছে ওই কুখ্যাত জঙ্গি। বাংলাদেশের ব্লগার অভিজিৎ রায়, ফয়সাল আরেফিন ও দীপন রায়কে খুনের ঘটনায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মেজর জিয়া এপার বাংলায় যে সক্রিয় হয়েছে, তা জানা যায় একের পর এক জঙ্গি গ্রেপ্তার করে তাদের হেপাজতে নেওয়ার পর। তাদের কাছ থেকে নানা ধরনের চাঞ্চল্যকর তথ্য এসেছে।
সূত্রের খবর, মেজর জিয়া এবিটি প্রধান রহমানির সঙ্গে সম্প্রতি বৈঠক করে বাংলাদেশে। সেখানেই সিদ্ধান্ত হয়, এবিটিকে সামনে রেখেই সীমান্তের এপার-ওপারের সমস্ত জঙ্গি সংগঠনকে একত্রিত করতে হবে। বাংলাদেশ সীমানা লাগোয়া অঞ্চল বেছে নিয়ে সেখানে মেজর জিয়া ঘাঁটি গেড়েছে বলে গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে। মুর্শিদাবাদের হরিহরপাড়া থেকে জঙ্গি আব্বাস আলিকে গ্রেপ্তার করার পাশাপাশি তাকে এসটিএফ নিজেদের হেফাজতে নিয়ে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করে একাধিক চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে। মেজর জিয়া মুর্শিদাবাদে এসে তার সঙ্গে বৈঠক করে গিয়েছে। সেখানে হাজির ছিল আরও এক কুখ্যাত মিনারুল শেখ। মুর্শিদাবাদকে সামনে রেখে বিভিন্ন জেলায় কত স্লিপার সেল তৈরি করা দরকার, এক একটির সদস্য সংখ্যা কত হবে এবং কী ধরনের প্রশিক্ষণ চলবে, তার নকশা তৈরি করে দিয়েছে মেজর জিয়া। তার সঙ্গে থাকছে কলকাতা ও রাজ্য পুলিশের ওয়ান্টেড লিস্টে থাকা জঙ্গি তথা মেজরের ডান হাত বলে পরিচিত বাংলাদেশি তরুণ স্বপন ও নয়ন গাজি।
তদন্তের সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, দুজন শাগরেদের সঙ্গে জিয়া সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে যোগাযোগ রাখে। জিয়ার বিভিন্ন নির্দেশ এই দুজনের মাধ্যমে অনুচরদের কাছে পৌঁছায়। পাকিস্তানের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে চলা জিয়া অর্থ ও আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবস্থা করে এবিটির জন্য। আব্বাসকে জেরা করে উত্তরবঙ্গের সীমান্ত লাগোয়া কোন জেলায় সে রয়েছে তা জানার চেষ্টা করছে তদন্তকারী এসটিএফ। একইসঙ্গে তাকে জেরা করে গোপন ডেরাগুলির খোঁজ জেনে সেখানে হানা দিতে চাইছেন তদন্তকারীরা।
সুত্র: উত্তরবঙ্গ সংবাদ