সেটা ছিল শীতের সন্ধ্যা। দশ বছরের শিশু বালিকা নিজ গ্রামের মাঠ থেকে জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ করে বাড়ি ফিরছিল। পথে ২৬ বছরের এক পুরুষ তাকে জাপটে ধরে নির্মম ও সহিংসভাবে তাকে ধর্ষণ করে ফলে তাকে ভর্তি হয়। দুই বছর হলো মৃত্যুর সংঙ্গে তার লড়াইয়ের স্মৃতি ম্লান হয়ে এসছে। কিন্তু ঐ হামালার সময়ের দূর্বিসহ স্মৃতি এখনও তাকে তাড়া করে। এতটাই ভীত যে সে এখনওে একা বাইরে যেতে পারে না।
স্কুলের যাওয়ার ছাড়া বাইরে বাইরে প্রায় বেরই হয় না। এই ঘটনা আমার পরিবারের জন্য যে লজ্জা বয়ে এনেছে তা আমাকে খুবেই পীড়া দেয়। আমি দুঃ স্বপ্ন দেখি। আমি ভাবি যে, আমার সংঙ্গে কেন এমন হতে হলো। কারণ বোঝার মতো বয়স হয়তো এখনও হয়নি। এ বিষয়ে কথা বলান সময় তার মা রাগে জ্বলে ওঠেন। অভিযুক্ত আমার মেয়েকে লক্ষ্য বানিয়েছে কারণ আমরা দলিত। সে এটা করার সাহস পেয়েছে কারণ সে উচ্চবর্ণের।
আমাদের অবশ্যই নিজেদের স্থানে থাকতে হবে কারণ সমাজে আমাদের মর্যাদা কম। সে হয়তো আমাদের মেয়েকে মেরে ফেলতো যদি আমরা কী ঘটেছে তা সময়মতো না শুনতাম। পরিবারটিকে তাদের গ্রাম ছাড়তে হয়। উচ্চ বর্ণের সম্প্রদায় যারা ধর্ষনকারীকে রক্ষা করছিলো এবং মেয়েটিকে দোষ দিচ্ছিলো। তাদের চাপ অসহনীয় হয়ে উঠেছিল। ভারতে একজন নারীর জীবন খুব কঠিন। দলিত নারী হওয়া আরো খারাপ। এই সম্প্রদায় একটি কঠোর বর্ণ প্রথার তলানীতে অবস্থিত যে কারণে তাদের অচ্ছুৎ বলে ডাকা হয়। উচ্চবর্ণের পুরুষেরা প্রায়ই ধর্ষণকে দলিত নারীদের নিপীড়ন করার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে। ভারতে ধর্ষণের ঘটনা ঘটলে প্রায়ই বিক্ষোভ হয়।
কিন্ত আক্রান্ত নারী দলিত হলে তেমন ক্ষোভ চোখে পড়ে না। সানা বানো আইনজীবী হওয়ার লক্ষ্যে পড়াশুনা করছেন এবং দলিত সম্প্রদায়ের আক্রন্তদের আইনি পরামর্শ প্রদানের মাধ্যমে সহায়তা করে থাকেন। তিনি জানান তার কাজ বিপদজনক। উচ্চবর্ণের অনেকে আমাকে ফোন করে এবং ভয়ভীতি প্রদর্শন করে। তারা আমাকে মনে করিয়ে দেয় যে, আমি একজন একা নারী এবং আমার নিজের নিরাপত্তা নিয়ে ভাবা উচিত। কিছু ঘটনার ক্ষেত্রে,তারা এমনকি আমাদের অনসরণ করে এবং ভয়ভীতি প্রদর্শন করে।
মঞ্জুলা আহমেদাবাদের একজন মানবাধিকার কর্মী। তিনি জানান দৈনিক ১০ জন দলিত নারী এবং মেয়ে ধর্ষণের খবর আসে। এটা আসলে পরিস্থিতির পূর্ণ চিত্র নয়। অধিকাংশেরই সাহায্য করার কেউ নেই। মঞ্জুলা প্রদীপ বলেন আমি মনে করি যে অভিযোগ দায়ের হয় তা কেবল ২৫ শতাংশ। ৭৫ শতাংশ ঘটনায় কোন অভিযোগ দায়ের হয় না। অভিযোগ না হওয়া একটি বড় সমস্যা এবং অভিযোগ করাও। কারণ দলিত নারীরা নিজেদের অধিকার নিয়ে সচেতন নন। আর তারা পুলিশ ষ্টেশনে যাবেই কিভাবে? সেখানে কে তাদের সাহায্য করবে? কে তাদের বলবে যে যখন আপনি ধর্ষণের শিকার হন, তখণ গোপন অঙ্গ ধোয়া যাবে না। আপনার কাপড় ফেলে দেয়ার দরকার নেই কারণ সেগুলো আপনার প্রমাণ। মঞ্জুলা জানেন, তিনি কি নিয়ে কথা বলেছেন তিনি একজন দলিত এবং নিপীড়নের শিকার নারী। তিনি বরেছেন বর্ণ এবং লিঙ্গ একসঙ্গে দলিত নারীদের বিরুদ্ধে কাজ করে। দলিত এই ভয় নিয়ে বাঁচেন যে, যদি আমি আমার অধিকারের কথা বলি আমাকে মেরে ফেলা হবে কিংবা আমাকে ধর্ষণ করা হবে বা আমাকে গ্রাম ছেড়ে চলে যেতে হবে। এবং এটাই ঘটছে প্ররো ধেশজুড়ে। বালিকা শিশুর বয়স ১২। কিন্তু ধর্ষণের শিকার এই সংগ্রামী বালিকা বুঝে গেছেন, দলিত নারী হওয়ার মানে কী। সে বলেন আমি মনে করি না, ন্যায়বিচার পাওয়া সম্ভব। কিন্তু আমরা চেষ্টা করবো। যারা চেষ্টা করে তারা ব্যর্থ হয় না।
সুত্রঃ প্রথম আলো