যশোরের ঝিকরগাছায় ৪৫ বছর বয়সী এক নারীকে মধ্যযুগীয় কায়দায় খুঁটির সঙ্গে বেঁধে মাথার চুল কেটে দিয়ে এবং মুখে কালি মেখে নির্যাতন করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে তাবিজ–কবজ (জাদু টোটকা) করে সম্পর্ক নষ্টের চেষ্টার অভিযোগ তোলা হয়েছে।
গতকাল রোববার বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত উপজেলার বেনেয়ালি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। সংঘটিত ওই ঘটনায় পুলিশ ইতোমধ্যে চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে।
ভালোবাসার টানে সাবেক পুত্রবধূর সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ায় শাশুড়ির ওপর ওই নির্যাতন চালানো হয় বলে ভিডিও ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে। নির্যাতনে নেতৃত্ব দেন ওই বধূর বর্তমান স্বামী।
বিষয়টি নিয়ে নির্যাতনের শিকার নারী ঝিকরগাছা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, ঝিকরগাছার ফজিলা খাতুনের ছেলে রায়হানের সঙ্গে পদ্মপুকুর গ্রামের মুকুল বিশ্বাসের মেয়ে বিথীর দু’বছর আগে বিয়ে হয়। সাংসারিক কারণে তাদের মধ্যে পারিবারিকভাবে বিচ্ছেদ হয়ে যায়। পরে বিথীর বিয়ে হয় বেনেয়ালী গ্রামের আব্দুল হামিদের ছেলে শিমুলের সঙ্গে।
রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে সাবেক পুত্রবধূর সঙ্গে দেখা করতে বেনেয়ালীতে যান ফজিলা খাতুন।
তিনি সাংবাদিকদের জানান, বিথীকে তিনি নিজের মেয়ের মতো ভালোবাসতেন। তার ছেলের সঙ্গে বিচ্ছেদ হওয়ার পরও সেই টান ছিল তার। বিয়ে হয়েছে শুনে তিনি বিথীকে একবার দেখতে গিয়েছিলেন।
সেখানে বিথীর বর্তমান স্বামী শিমুল, পদ্মপুকুর গ্রামের ইব্রাহিম খলিলের স্ত্রী শারমিন আক্তার রুমি, বেনেয়ালী গ্রামের মফিজুর ড্রাইভারের স্ত্রী রনি বেগম, তবিবরের স্ত্রী মাজেদা বেগম, বিথীর বর্তমান শাশুড়ি আছিরন বেগম এবং মা রহিমাসহ বেশ কয়েকজন ফজিলা বেগমকে ধরে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করেন।
সেই নির্যাতনের ভিডিও ধারণ করে তা সোস্যাল মিডিয়ায়ও প্রচার করা হয়। এরপর বিষয়টি সবার নজরে আসে।
ভিডিওতে দেখা যায়, বেশ কয়েকজন নারী-পুরুষ মিলে ফজিলা খাতুনের মাথার চুল ধরে ঝাঁকাচ্ছেন এবং এলোপাতাড়ি চড়, থাপ্পড়, কিল, ঘুসি মারছেন। একপর্যায়ে তারা ফজিলা খাতুনের মুখে কালি মাখিয়ে দেন এবং লাঠিপেটা করেন। ওই সময় নির্যাতনকারী ও অন্যদের উল্লাস ও ভিডিও ধারণ করতে দেখা যায়।
পরবর্তীতে নির্যাতনের শিকার ফজিলা খাতুনকে শিমুল তার বাড়ির পিলারের সঙ্গে বেঁধে রাখেন। একপর্যায়ে দেশি অস্ত্র দিয়ে তাকে পুলিশে সোপর্দ করার হুমকি দেন। এই নির্যাতনের কথা কোথাও জানানো হলে বড় ধরনের ক্ষতি হবে বলেও হুমকি দিয়ে তাকে ছেড়ে দেন নির্যাতনকারীরা।
এরপর ফজিলা খাতুন ঝিকরগাছা থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।
নারকীয় ওই নির্যাতনের ভিডিও সোস্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়ার পর ঝিকরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ভূপালী সরকারের নজরে আসে। তিনি তাৎক্ষণিক বিষয়টির ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ঝিকরগাছা থানার ওসি বাবলুর রহমান খানকে বলেন।
পুলিশ রোববার রাতেই অভিযান পরিচালনা করে চারজনকে গ্রেপ্তার করে। তারা হলেন- ফজিলা খাতুনের সাবেক পুত্রবধূ বিথীর স্বামী শিমুল হোসেন, পদ্মপুকুর গ্রামের ইব্রাহীম খলিলের স্ত্রী শারমিন আক্তার রুমি, বেনেয়ালী গ্রামের মফিজুর ড্রাইভারের স্ত্রী রনি বেগম ও পদ্মপুকুর গ্রামের মুকুল বিশ্বাসের স্ত্রী রহিমা।
ওসি বাবলুর রহমান খান বলেন, গ্রেপ্তারকৃতদের সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে আদালতের মাধ্যমে জেলখানায় পাঠানো হয়েছে। অন্যদের আটকেও জোরালো অভিযান পরিচালিত হচ্ছে।
সুত্র: বাংলা নিউজ ২৪.কম
