পাকিস্তানি জঙ্গি গোষ্ঠী লস্কর-ই-তৈয়বা এবং জইশ-ই-মহম্মদ এবার বাংলাদেশে সক্রিয় কিছু উগ্রপন্থী গোষ্ঠীর সঙ্গে হাত মিলিয়ে ভারতীয় তরুণদের টার্গেট করে উগ্রবাদ ছড়ানোর চেষ্টা করছে।
কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা দপ্তর জানিয়েছ, বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভারতীয় ছাত্রদের টার্গেট
করেছে জইশ এবং লস্কর। এ এ কাজে তারা জামায়াত-এ-ইসলামি এবং এর ছাত্র সংগঠন ইসলামি ছাত্র শিবিরের সহযোগিতা পাচ্ছে। ওইসব ক্যাম্পাসে ধর্মীয় আলোচনার মাধ্যমে লস্করের প্রচারমূলক ভিডিও দেখানো হচ্ছে শুধু তা-ই নয়, কাশ্মীরে নিহত জঙ্গিদের ‘শহিদ’ বলে মহিমামণ্ডিত করে প্রচারও চলছে।
ছাত্র শিবিরের মাধ্যমে পাক মদতপুষ্ট জঙ্গি গোষ্ঠী ছাত্রাবাস, ইসলামি স্টাডি সার্কেল এবং আর্থিকভাবে দুর্বল ভারতীয় ছাত্রদের কাছে সহজেই পৌঁছে যাচ্ছে বলে খবর। বন্যা বা দুর্যোগের পর ত্রাণ সরবরাহের নাম করে উগ্র মতাদর্শ ছড়াচ্ছে তারা। গরিব ভারতীয় পড়ুয়াদের দলে টানা হচ্ছে স্কলারশিপের মাধ্যমে টাকাকড়ি ও অন্যান্য সুযোগসুবিধা দিয়ে।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে, লস্কর ও তাদের তল্পিবাহক গোষ্ঠীগুলি ঢাকার আশপাশে মাদ্রাসাগুলির মাধ্যমে ছাত্রদের কট্টরপন্থী ওয়াহাবি-সালাফি মতাদর্শে দীক্ষিত করছে। ব্রিটেন সহ বিদেশি নানা প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় ওইসব মাদ্রাসা চলছে। মাদ্রাসা শিক্ষাকে ‘জিহাদ’ হিসাবেই তারা তুলে ধরছে।
জিহাদি প্রচারের ফাঁদে পা দিয়ে যেসব ছাত্র উগ্রপন্থাকে বরণ করে নিচ্ছে, তাদের আবার ‘শিক্ষা সফর’-এর মাধ্যমে মায়ানমার বা নেপাল হয়ে পাকিস্তানে পাঠানো হচ্ছে ‘উচ্চতর প্রশিক্ষণ’ নিতে। ইতিমধ্যে ঢাকা বা চট্টগ্রাম থেকে কিছু ছাত্রকে তথাকথিত শিক্ষা সফরে পাঠানোও হয়েছে বলে খবর। গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, এই ধরনের সফরে বাংলাদেশকে এখন নিরাপদ ট্রানজিট হাব হিসাবে ব্যবহার করছে পাক জঙ্গি দলগুলির নেতারা।
বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ কার্যত জঙ্গি কার্যকলাপের মুক্তাঞ্চল হয়ে উঠেছে। ২০২৪ সালের পর সে দেশের অন্তর্বর্তী সরকার জামায়াত-এ-ইসলামির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় এবং মৌলবাদী নেতাদের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসায়। এর ফলে হিজবুত তাহরির, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম (এবিটি)-র মতো উগ্র মৌলবাদী দলগুলি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে প্রকাশ্যে কাজ করছে। শিক্ষা ব্যবস্থায় ধর্মীয় বাধ্যবাধকতা, লিঙ্গভিত্তিক শ্রেণি ব্যবস্থা চালু হওয়ায় উগ্র মতাদর্শ আরও সহজে ছড়াতে তাদের কোনও অসুবিধাই হচ্ছে না।
বাংলাদেশে ইদানীংকালে এনজিওর সক্রিয়তা অনেকটা কমে যাওয়ায় সুবিধা হয়ে গিয়েছে মৌলবাদী জঙ্গি গোষ্ঠীগুলির। এরসঙ্গে হুন্ডি ও অন্যান্য বেআইনি লেনদেনের সুযোগে মধ্যপ্রাচ্য থেকে আসা অর্থ লস্করের লোকজন তাদের কাজে লাগাচ্ছে। এসব অর্থ ‘ইসলামি ঐতিহ্য রক্ষা’ বা ‘ক্যাম্পাস জনসেবা’র নামে ঢুকছে।
সুত্র: উত্তর বাংলা সম্পদ