গ্রামটির চারপাশে তখনো ভোরের স্নিগ্ধ আলো ঠিকমতো নামেনি। কুয়াশার মতো একটা অজানা শঙ্কা যেন বাতাসে মিশে ছিল। গ্রামের মানুষ তখনো জানত না, আর কিছুক্ষণের মধ্যেই তাদের প্রিয় মসজিদের এক কোণা থেকে ভেসে আসবে এক মর্মান্তিক খবরের ঢেউ — যা ভেঙে দেবে শত গল্প, ভাঙবে কত শত মায়ের চোখের ঘুম।
এক শিশুরা, প্রতিদিনের মতোই কোরআন শিখতে গিয়েছিল সেই মসজিদের মক্তবে। দরজা খুলতেই হঠাৎ তারা দেখে — দোতলার এক কোণায় অজানা ভঙ্গিতে পড়ে আছে তাদের সাথীর নিথর দেহ, গায়ে রক্তের দাগ। মুহূর্তেই তাদের ছোট্ট মুখে আতঙ্ক জমে যায়, একে একে চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে কান্নার শব্দ আর ফিসফাস।
কেউ বলছে — “সেই তো, কালও বিকেলে খেলতে দেখেছিলাম।”
কেউ বলছে — “কে এমন করতে পারে!”
অন্য কেউ ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে শুধু তাকিয়ে আছে মসজিদের মেঝের দিকে।
খবর ছড়িয়ে পড়তে দেরি হলো না। গ্রামের মানুষ ছুটে এল। চারপাশে জটলা, কান্না আর চুপচাপ কিছু চোখ — যে চোখে ছিল বিস্ময়, ভয় আর রাগ।
কেউ বিশ্বাস করতে পারছিল না যে, এই পবিত্র স্থানের আশেপাশে এমন ভয়াবহতা লুকিয়ে থাকতে পারে! শিশুটির শরীরে একাধিক আঘাতের চিহ্ন, যা বলে দিচ্ছে — সে নিখোঁজ ছিল না শুধু, তাকে গোপনে আঘাত করা হয়েছিল। গ্রামের গল্পে শোনা সেই পুরনো ভয়ের কথা যেন নতুন রূপে ফিরে এল — “রাতের অন্ধকারে অদৃশ্য ছায়ারা কি তবে এখনও আসে?” নাকি ধর্ষন । ছোট্ট এই শিশুর কি অপরাধ ছিল। মসজিদের মুল্য দেশটাতে নেই শুধু আছে যাযাবরতা।
স্থানীয়রা একে অপরকে সাবধান করছে — “শিশুদের একা বাইরে পাঠাবে না”, “অপরিচিত কারো ডাক শুনলে কাছে যাবে না”, কেউ বলছে “সব জায়গায় সিসিটিভি লাগাতে হবে”।
সেই দিন মসজিদের দোতলায় পড়ে থাকা শিশুর লাশ যেন একটা সতর্কবার্তা হয়ে গেল পুরো গ্রামের জন্য — কেউ যেন আর উদাসীন না থাকে, কেউ যেন আর অজান্তে হারিয়ে না যায়।
এখনও গ্রামের মানুষ ফিসফিস করে বলছে — “এই গল্প যেন আর কোনো ঘরে না ফিরে, আর কোনো মায়ের বুক খালি না হয়…”
তারা চায় দোষীরা ধরা পড়ুক, শাস্তি হোক দৃষ্টান্তমূলক — যেন গ্রামের গলি আর মসজিদের কোণায় আর কোনো লাশ নয়, শুধু ভোরের আজান আর শিশুদের কোরআনের মিষ্টি আওয়াজ ভেসে আসে…
এভাবেই এক মর্মান্তিক ঘটনা গ্রামের গল্প হয়ে ছড়িয়ে গেল — মানুষের মনে জেগে থাকুক সতর্কতা আর দায়িত্ববোধ, যেন এই গল্প আর কোনোদিন সত্যি না হয়।
