সংগৃহীত ছবি
গাইবান্ধায় এক নারীকে গাছে বেঁধে পিটিয়ে, মাথার চুল কেটে, শরীরে রং ঢেলে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করা হয়েছে। এমন একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
ছড়িয়ে পড়া ছবিতে দেখা গেছে, একটি আম গাছের গোড়ায় নারীকে দরি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। হাত ও কোমড় পযর্ন্ত বাঁধা। পাশে শিশুসহ লোকজন দাঁড়িয়ে আছে। তাদের পা দেখা যাচ্ছে কিন্তু তাদের চেনা যাচ্ছে না। এক পাশে জুতা পড়ে আছে। মাথায় কোনো কাপড় নেই। মাথার মাঝখানে চুল কাটা, পোশাক এলোমেলো। চোখে মুখে নির্যাতনের ছাপ। অসহায় দৃষ্টিতে একদিকে তাকিয়ে আছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওই ভাইরাল ছবিটি গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার মনোহরপুর ইউনিয়নের তালুক ঘোড়াবান্ধা গ্রামের দুলা মিয়ার স্ত্রীর। তার নাম শহিদা বেগম (৪০)। তিন সন্তানের জননী।
শুক্রবার দুপুরে ওই গ্রামের স্থানীয় ও ভুক্তভোগী নারীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভুক্তভোগী নারীকে দীর্ঘদিন ধরে প্রভাবশালী প্রতিবেশী ইউনুস মিয়া ও তার লোকজন হেয় করতে নানা ভাবে হয়রানি করে আসছে।
ভুক্তভোগী বলেন, আমি প্রতিবাদ করতে পারি না। কারণ আমার কোনো ছেলে সন্তান নেই। তিন মেয়ের মধ্যে দুইজন ঢাকায় থাকে। এক মেয়ে ও স্বামীকে নিয়ে আমার সংসার। প্রায়ই ইউনুস মিয়ার লোকজন আমাকে মারপিট করে। রবিবার দুপুরে অন্তত ৭/৮ জন লোক আমাকে গাছের সাথে বেঁধে মারপিট করে, এসময় তারা আমার মাথার চুল কেটে দেয়। পরে জুতার মালা পড়িয়ে দেয়। বাড়ি ঘরে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট করে।
তিনি আরও বলেন, আমার শরীরে এখনো আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। চিকিৎিসা নিয়েছি। আমি অজ্ঞান ছিলাম। আমার ঘরের ভেতরে গরু বিক্রির টাকা সব নিয়ে গেছে। বাড়িঘর ভাঙচুর করা হয়েছে। পূর্ব শত্রুতা ও পরকীয়ার অপবাধ দিয়ে আমাকে মারপিট করা হয়েছে। থানায় অভিযোগ দেওয়ার পর থেকে তারা আমাকে নানা ভাবে হুমকি দিচ্ছে। মামলা না করার জন্য হুমকি দিচ্ছে। ভয়ে বাড়ির বাহিরে যেতে পারছি না। তাদের ভয়ে মুখ খুলছেন না স্থানীয়রা। এ ঘটনায় হরিণাবাড়ি পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে একটি অভিযোগ দিয়েছি। এদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই আমি।
সরেজমিন ও অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গত শনিবার তালুক ঘোড়াবান্ধা (মাঝিপাড়া) গ্রামের দিনমজুর দুলা মিয়ার স্ত্রী শহিদা বেগম পাশ্ববর্তী একটি গ্রামে পোশাক তৈরি করে রবিবার সকালে নিজ বাড়িতে আসেন। এসময় ভুক্তভোগী নারীকে পরকীয়ার অপবাদ দিয়ে মারধর শুরু করে স্থানীয় ইউনুস মিয়া ও তার সহযোগীরা। এক পর্যায়ে ভুক্তভোগী শহিদাকে উঠানের একটি আম গাছের সঙ্গে দড়ি দিয়ে হাত ও পা বাঁধা হয়। সেখানে প্র্রায় আড়াই ঘণ্টা নির্যাতন চালানো হয়। কাঠ আর বাঁশের লাঠি দিয়ে তাকে মারপিট করে।
আরও জানা গেছে, এক পর্যায়ে তার মাথার চুল কেটে ও মুখে রং মেখে দেওয়া হয়। তারপর জুতার মালা পড়িয়ে দিয়ে তাকে বিবস্ত্র করে রাখা হয়। এরপর ওই নারী জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। এ খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় এক ইউপি সদস্য ওই নারীর হাত ও পায়ের বাঁধন খুলে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠান।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আসাদুজ্জামান মজনু বলেন, ‘খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই নারীকে উদ্ধার করা হয়। পরে তাদের আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক স্কুল শিক্ষক বলেন, ‘দিনদুপুরে একজন গৃহবধূ সাথে তারা যে ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে, তা মধ্যযুগীয় কায়দাকে হার মানায়। এটি পাশবিক নির্যাতনের ঘটনা। অথচ জড়িতদের কিছুই হলো না। ভুক্তভোগি নারী গরীব মানুষ। এই যুগে চুল কেটে প্রকাশ্যে নারীকে পিঠানো হয়। কিন্তু দোষীরা এলাকায় বেশ প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের শাস্তি হয় না। দেশে কি গরীব মানুষের বিচার নাই? এ ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি যেন হয় তার ব্যবস্থা করা দরকার।’
অভিযোগের বিষয়ে ইউনুস মিয়ার বাড়িতে গিয়ে তার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তিনি সাংবাদিকের সাথে কোনো কথা বলেনি। এসময় তার লোকজন উল্টো সাংবাদিকের ছবি ও ভিডিও চিত্র ধারণ করেন।
এ বিষয়ে পলাশবাড়ী থানার আওতাধীন হরিণাবাড়ি পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের এসআই সবুজার আলী বলেন, ‘অভিযোগের প্রেক্ষিতে ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রাথমিক তদন্তে ওই নারীকে নির্যাতনের সত্যতা পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নিতে ওই পরিবারকে থানায় মামলা করতে বলা হয়েছে।’
সুত্রঃ দেশ রূপান্তর