চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস-সংলগ্ন জোবরা গ্রামে গত শনিবার রাত ১২টার দিকে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা শুরু করেন স্থানীয় লোকজন। ওই সময় একটি ভবনের দ্বিতীয় তলায় জানালার পাশে দাঁড়িয়ে ফেসবুকে লাইভ করছিলেন কয়েকজন ছাত্রী। স্থানীয় লোকজন ওই ছাত্রীদের লাইভ করতে দেখে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন। পরে তাঁদের ‘ধর্ষণের’ হুমকিও দেওয়া হয়। ঘটনাটি জানাজানি হয় আজ বুধবার।
দ্বিতীয় তলায় থাকা ছাত্রীরা ঘটনার পর ভবন ছেড়ে অন্য জায়গায় সরে গেছেন। ঘটনার বিষয়ে এক ছাত্রী প্রথম আলোকে বলেন, দ্বিতীয় তলায় তাঁরা কয়েকজন ভাড়া থাকতেন। শনিবার রাতে তাঁদের বাসার নিচেই শিক্ষার্থীদের বেধড়ক মারধর শুরু করেন স্থানীয় লোকজন। এ ঘটনা ফেসবুকে লাইভ করা হচ্ছিল। পরে স্থানীয় লোকজন বিষয়টি দেখে ফেলেন। তাঁরা দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকতে চেয়েছিলেন, কিন্তু পারেননি। পরে ধর্ষণের হুমকি দেন ওই ব্যক্তিরা।
সেদিন রাতে সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছার পর ওই ছাত্রীরা সেখান থেকে সরে যান। ওই ছাত্রী জানান, তাঁরা নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। ভবনের ছবি তুলে রেখেছেন স্থানীয় লোকজন। ইতিমধ্যে ঘটনাটি প্রক্টরিয়াল বডির সদস্য সাইদ বিন কামাল চৌধুরীকে জানানো হয়েছে। সাইদ বিন কামাল আজ মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনা জানার পর শতভাগ গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়েছে। তাঁরা পদক্ষেপ নিচ্ছেন। ওই ছাত্রীদের নিরাপত্তা পুরোপুরি নিশ্চিত করা হয়েছে।
নারী অঙ্গনের খোলাচিঠি
বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান পরিস্থিতিতে নারী শিক্ষার্থীদের ওপর ‘মোরাল পুলিশিং, ধর্ষণের হুমকি, সাইবার বুলিং ও প্রশাসনের অবহেলার’ প্রতিবাদ জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ও দেশবাসীর উদ্দেশে খোলাচিঠি পাঠ করেছে ‘নারী অঙ্গন’ নামের একটি সংগঠন।
আজ বিকেল চারটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের ঝুপড়িতে এই চিঠি পাঠ করা হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক ও নারী অঙ্গনের সংগঠক সুমাইয়া শিকদার খোলাচিঠি পাঠ করেন। উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সদস্য জান্নাতুল ফেরদৌস ও মাহবুবা সুলতানা।
খোলাচিঠিতে বলা হয়, ‘হাসিনার পতনের পর নতুন স্বপ্ন নিয়ে আমরা যাত্রা শুরু করলেও, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন এক বছরের মধ্যেই নারীবিদ্বেষী কার্যক্রমের মাধ্যমে নারীদের জন্য ভয়াবহ পরিবেশ তৈরি করেছে। স্বয়ং প্রক্টর নারীদের নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছেন, সান্ধ্য আইন জারি করেছেন এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে নারী শিক্ষার্থীদের বহিষ্কার করেছেন। ফলে নারী শিক্ষার্থীরা বারবার অনলাইন ও অফলাইনে নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন।’
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, গত ৩০ আগস্ট রাত ১১টা ১৫ মিনিটে খাবার খেয়ে ফেরার পথে এক নারী শিক্ষার্থীকে দারোয়ান গেটে ঢুকতে দেননি। পরে তাঁকে কিল-ঘুষি ও লাথি মারেন দারোয়ান। এর জেরে স্থানীয় সন্ত্রাসীদের হামলায় প্রায় দেড় হাজার শিক্ষার্থী আহত হন, কয়েকজন এখনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ভুক্তভোগী নারী শিক্ষার্থীর বক্তব্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য ও ধর্ষণের হুমকি দেওয়া হয়। এ ছাড়া নারী অঙ্গনের সদস্যদের ব্যক্তিগত হোয়াটসঅ্যাপে অশালীন বার্তা পাঠানো হচ্ছে এবং ভুয়া অ্যাকাউন্ট খুলে হেনস্তা করা হচ্ছে।
নারী অঙ্গন বলছে, ‘এই পরিস্থিতি আমাদের জন্য অত্যন্ত উদ্বেগজনক। ক্যাম্পাসে চলমান বর্বরতা, প্রশাসনের অবহেলা ও শিবির নেতাদের মিথ্যা প্রচারণার কারণে নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে পড়েছে।’
খোলাচিঠি পাঠের পাশাপাশি নারী অঙ্গনের পক্ষ থেকে সদস্য জান্নাতুল ফেরদৌস সাত দফা দাবি তুলে ধরেন। এর মধ্যে রয়েছে আহত শিক্ষার্থীদের সুচিকিৎসা ও চিকিৎসা ব্যয় প্রশাসনের বহন, স্থানীয় সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করে দ্রুত বিচার, ক্যাম্পাসের ভেতরে-বাইরে শতভাগ নিরাপত্তা ও আবাসন ভাতা চালু, পরিবহনে ই-কার ও চক্রাকার বাস চালু, যৌন নিপীড়নবিরোধী সেল কার্যকর করা, ১ ও ২ নম্বর গেট ও রেলক্রসিং এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তায় ব্যর্থ হওয়ায় উপাচার্য ও প্রক্টরিয়াল বডির পদত্যাগ।
তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে একগুচ্ছ পদক্ষেপ নিয়েছে। ইতিমধ্যে মামলা দায়ের করা হয়েছে। ক্যাম্পাসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা আছেন।
সুত্র: প্রথম আলো