এক দশকেরও বেশি সময় ধরে চলা এক দুঃস্বপ্ন, যা সারা বিশ্বকে হতবাক করেছিল, সেই মাজান ধর্ষণ মামলার চূড়ান্ত বিচার প্রক্রিয়া অনুষ্ঠিত হয় ফ্রান্সের নিমস কোর্ট অব আপিলে। এ মামলার মূল ভুক্তভোগী ৭২ বছর বয়সী জিজেল পেলিকো এখন ফ্রান্সের এক নতুন নারীবাদী প্রতীক। তিনি তাঁর ন্যায়বিচার পাওয়ার জন্য কঠিন পথ পাড়ি দিয়েছেন। ঘটনার সূত্রপাত জিজেল পেলিকোর সাবেক স্বামীর জঘন্য অপরাধ থেকে। তাঁর স্বামী প্রায় এক দশক ধরে জিজেলকে নিয়মিতভাবে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অচেতন করতেন। এরপর ডার্ক ওয়েবের মাধ্যমে অজ্ঞাতপরিচয় পুরুষদের বাড়িতে ডেকে ওই অচেতন অবস্থায় থাকা স্ত্রীকে ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের ব্যবস্থা করতেন। এই ভয়ংকর ঘটনা সারা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। অ্যাভিগননে অনুষ্ঠিত প্রথম বিচারে মোট ৫১ জন পুরুষ দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে ১৭ জন আপিল করেন। শেষ পর্যন্ত ১৬ জনই নিজেদের আপিল প্রত্যাহার করে নেন। ফলে এ আপিল শুনানিতে মাত্র একজন পুরুষ, যার নাম হুসামেত্তিন ডোগান সম্প্রতি তাঁর বিরুদ্ধে বিচার চলেছে। আপিল শুনানি চলেছে ৬ থেকে ৯ অক্টোবর পর্যন্ত। এর মধ্যে ৮ অক্টোবর ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও আবেগঘন দিন। ওই দিন জিজেল পেলিকো এবং একমাত্র অভিযুক্ত হুসামেত্তিন ডোগানের মধ্যে সরাসরি মুখোমুখি সাক্ষ্য গ্রহণ হয়। জিজেল আদালতে দাঁড়িয়ে একমাত্র অভিযুক্তের দিকে তাকিয়ে দৃঢ়কণ্ঠে বলেন, ‘‘আমি তোমাকে ‘কখনোই’ সম্মতি দিইনি।’’ অভিযুক্ত ডোগান ধর্ষণের অভিযোগ অস্বীকার করেন। এই মুখোমুখি সাক্ষ্য গ্রহণ আরও তীব্র হয়, যখন জিজেলের সাবেক স্বামী কর্তৃক গোপনে ধারণ করা ভিডিওগুলো আদালতে প্রদর্শিত হওয়ার কথা সামনে আসে। এ প্রমাণগুলো জিজেলের বিরুদ্ধে হওয়া অত্যাচারের ভয়াবহতা প্রমাণ করে। জিজেলের সঙ্গে পুরো সময় ছিলেন তাঁর ছেলে ফ্লোরিয়ান পেলিকো।
৯ অক্টোবর অভিযুক্ত হুসামেত্তিন ডোগানের আইনজীবী, সিলভি মেনভিয়েল আদালতে তাঁর বক্তব্য পেশ করেন। নিমস কোর্ট অব আপিলের জুরি এবং বিচারকদের সমন্বয়ে গঠিত প্যানেল অভিযুক্ত হুসামেত্তিন ডোগানকে ধর্ষণের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করেছেন। প্রথম রায়ে তাকে ৯ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। আপিল আদালত সেই সাজা বাড়িয়ে ১০ বছরের কারাদণ্ড ঘোষণা করেন।
এই বিচার শুধু একজন নারীর প্রতি হওয়া ভয়ানক অন্যায়ের প্রতিকার নয়, এটি সম্মতির গুরুত্ব এবং বিচারব্যবস্থায় ভুক্তভোগীর অধিকারেরও এক শক্তিশালী প্রতীক।
সুত্র: সমকাল