বাংলাদেশে তালেবান মানসিকতা ও সরকারের নীরব বিশ্বাসঘাতকতা
বাংলাদেশের সমাজ এখন এক বিপজ্জনক স্রোতে ভাসছে—একদিকে ধর্মের নামে গজিয়ে ওঠা উগ্রপন্থা, অন্যদিকে সরকারের ভয়ঙ্কর নীরবতা। এই দুইয়ের মেলবন্ধন আমাদের স্বাধীনতা, সংস্কৃতি ও মানবিক মূল্যবোধের মূলে আঘাত করছে।
ধর্ম নয়, ধর্মব্যবসা চলছে
ধর্মের নাম করে একদল মানুষ এখন জনমত নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। তারা আল্লাহর নাম ব্যবহার করে মানুষকে ভয় দেখায়, ভিন্ন মত দমন করে, আর নারীদের স্বাধীনতাকে পাপ হিসেবে প্রচার করে।
তারা বলে, নারীর কাজ ঘরে, কলম হাতে নয়; তারা বলে গান, কবিতা, চিত্রকলা—সব “হারাম”। অথচ এই মানসিকতা ইসলামের নয়, বরং মধ্যযুগীয় তালেবান মনোভাবের প্রতিফলন।
সবচেয়ে ভয়ঙ্কর বিষয় হলো—এই বিকৃত ধারার প্রচার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে, মাদ্রাসায়, এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়েও ঢুকে পড়েছে। আর সরকার? তারা চোখ বন্ধ করে আছে, যেন কিছুই হচ্ছে না।
অন্তর্বর্তী সরকারের উদাসীনতা ও ভয়
অন্তর্বর্তী সরকার আজ এমনভাবে “ধর্মীয় সংবেদনশীলতা” রক্ষার কথা বলছে, যেন দেশে মুক্ত চিন্তা করা অপরাধ!
যখন ধর্মীয় বক্তারা টেলিভিশনে বসে নারীদের গালাগাল করে, বা যখন কোনো তরুণ কবি “ধর্ম অবমাননার” নামে হুমকি পায়—তখন সরকারের পক্ষ থেকে শোনা যায় একটাই কথা: “তদন্ত চলছে”।
কিন্তু তদন্তের নামে সময়ক্ষেপণ মানে আসলে উগ্রপন্থীদের সাহস দেওয়া।
এই নীরবতা, এই ভীরুতা—এক ধরনের বিশ্বাসঘাতকতা, জনগণের প্রতি।
ডানপন্থী রাজনীতির দ্বিমুখী চরিত্র
বাংলাদেশের ডানপন্থী দলগুলো আজ “ধর্মরক্ষার” নামে নিজেদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ গড়ছে।
তারা জানে—মানুষের দরিদ্রতা, অশিক্ষা আর ভয়ের সুযোগ নিয়ে ধর্মকে ব্যবহার করা সহজ।
তাদের বক্তব্যে আছে ঘৃণা, নারীবিদ্বেষ আর জাতীয়তাবাদের বিকৃত স্লোগান। তারা চায় বাংলাদেশকে এমন এক জায়গায় নিয়ে যেতে, যেখানে চিন্তা করা অপরাধ, প্রশ্ন করা পাপ, আর ভিন্নমত বিদ্রোহ।
তারা তালেবানের ভাষায় কথা বলে, কিন্তু আধুনিক পোশাক পরে—এই দ্বিচারিতা সবচেয়ে ভয়ংকর।
দেশ যখন অন্ধকারের কিনারায়
মাদ্রাসা থেকে শুরু করে রাজপথ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে রাজনৈতিক বক্তৃতা—সবখানেই উগ্রতার বীজ বোনা হচ্ছে।
এই প্রবণতা যদি এখনই রোধ না করা যায়, তাহলে আগামী প্রজন্ম হয়তো এমন এক বাংলাদেশ পাবে যেখানে বই পুড়বে, গান নিষিদ্ধ হবে, নারীরা মুখ ঢেকে ঘরে বন্দী থাকবে, আর রাষ্ট্রের নাম হবে “ধর্মীয় প্রজাতন্ত্র”—যে নামের পেছনে থাকবে রক্ত ও ভয়।
আমাদের করণীয়
এখন সময় এসেছে, ভয় নয়—প্রতিরোধের।
সাহসী শিক্ষক, সাংবাদিক, শিল্পী, তরুণ—সবার দায়িত্ব ধর্মের প্রকৃত মানবিক চেতনা রক্ষা করা।
রাষ্ট্র যদি ব্যর্থ হয়, তবে সমাজকেই এগিয়ে আসতে হবে।
কারণ, মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ কোনো তালেবান রাষ্ট্র নয়; এটি সেই ভূমি, যেখানে কলম, সংস্কৃতি আর মুক্ত চিন্তাই ছিল আমাদের অস্ত্র।
শেষ কথা
অন্তর্বর্তী সরকার যদি সত্যিই জনগণের সরকার হতে চায়, তবে এখনই তাদের স্পষ্ট অবস্থান নিতে হবে।
উগ্রপন্থীদের প্রশ্রয় দেওয়া, ধর্মের নামে নীরব থাকা—এটাই দেশের জন্য সবচেয়ে বড় বিপদ।
