ঐতিহাসিক লাল কেল্লার কাছে গাড়ি বিস্ফোরণস্থলে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। ফাইল ছবি
বাবরি মসজিদ ভাঙার ৩৩ বছর পূর্তির দিন, ৬ ডিসেম্বর ভারতের রাজধানী ও এর আশপাশে সন্ত্রাসী চক্র ৬টি বড় ধরনের বিস্ফোরণের ছক কষেছিল—কয়েকদিন আগে লাল কেল্লার কাছে গাড়ি বিস্ফোরণ তদন্তে এমন আতঙ্কজনক পরিকল্পনার কথা বেরিয়ে এসেছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
সন্ত্রাসীদের এ চক্রটি পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মোহাম্মদের সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে সন্দেহ করা হচ্ছে; এ ইউনিটটিতে একাধিক চিকিৎসকের উপস্থিতি তদন্ত কর্মকর্তাদের বিস্মিতও করেছে বলে জানিয়েছে এনডিটিভি।
১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর অযোধ্যায় উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা কয়েকশ বছরের পুরনো বাবরি মসজিদ গুঁড়িয়ে দেয়। দিল্লি বিস্ফোরণের সঙ্গে যোগসাজশ আছে সন্দেহে যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তারা ‘বাবরি মসজিদ ভাঙার প্রতিশোধ নিতেই’ ৬ ডিসেম্বর হামলার পরিকল্পনার কথা স্বীকারও করেছে, বলছেন কর্মকর্তারা।
জিজ্ঞাসাবাদের তথ্যের বরাত দিয়ে ভারতের শীর্ষ গোয়েন্দা সূত্রগুলো এনডিটিভিকে বলেছে, সন্দেহভাজন এ সন্ত্রাসী চক্রটি রাজধানী ও এর আশপাশে ধারাবাহিক বিস্ফোরণ ঘটাতে কয়েক ধাপে পরিকল্পনা সাজিয়েছিল।
এসব পরিকল্পনার মধ্যে ছিল জইশ-ই-মোহাম্মদ ও আনসার গাজওয়াত-উল-হিন্দের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি সন্ত্রাসী সেল বানানো, স্বয়ংক্রিয় বিস্ফোরক পদার্থ (আইইডি) বানানোর কাঁচামাল যোগাড়, বিষাক্ত রাসায়নিক আইইডি বানানো, সম্ভাব্য হামলাস্থলে রেকি করে, বানানো বোমাগুলো সেলের নির্দিষ্ট সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা এবং সমন্বিতভাবে দিল্লির ৬-৭টি এলাকায় বিস্ফোরণ ঘটানো।
তদন্ত কর্মকর্তারা বলছেন, সন্ত্রাসীদের পরিকল্পনা ছিল চলতি বছরের অগাস্টেই হামলা চালানো, কিন্তু শেষপর্যন্ত তা বাস্তবায়িত না হওয়ায় নতুন তারিখ ঠিক হয়। এবার তারা বেছে নেয়, বাবরি মসজিদ ভাঙার দিন, ৬ ডিসেম্বরকে।
কট্টর হিন্দুত্ববাদীদের অনেকের বিশ্বাস, ষোড়শ শতকে বানানো বাবরি মসজিদটি রামের জন্মস্থানে নির্মিত হয়েছে। তাদেরই একটি অংশ ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর মসজিদটি গুঁড়িয়ে দেয়। এরপর দীর্ঘ আইন লড়াইয়ের পর সেখানে নতুন একটি রামমন্দির নির্মিত হয়।
মন্দিরটির নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০২০ সালে, শেষ হয় এ বছর।
বছরের পর বছর ধরে জঙ্গিগোষ্ঠী জইশ-ই-মোহাম্মদ বাবরি মসজিদ ভাঙার প্রতিশোধ নেওয়ার হুমকি দিয়ে আসছে বলে ভাষ্য তদন্ত কর্মকর্তাদের। সাপ্তাহিক কলামগুলোতে জইশপ্রধান মাসুদ আজহারও নিয়মিতই অযোধ্যাকে নিশানা বানানোর কথা বলে আসছেন।
সোমবার দিল্লির লাল কেল্লা মেট্রো স্টেশনের কাছে এক ট্রাফিক সিগনালে একটি গাড়ি বিস্ফোরণের ঘটনায় ৯ জন নিহত ও ২০ জনের বেশি আহত হয়।
গাড়িটি চালাচ্ছিলেন কাশ্মীরি চিকিৎসক ড. উমর মোহাম্মদ ওরফে উমর উন-নবী, তিনি হরিয়ানার ফরিদাবাদের আল ফালাহ বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করতেন।
ওই বিস্ফোরণের কয়েক ঘণ্টা আগেই ফরিদাবাদে এক অভিযানে ২ হাজার ৯০০ কেজি বিস্ফোরক পদার্থ পাওয়া যায়। এগুলো অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ঘটনায় মুজাম্মিল শেখ ও শাহীন সাইদ নামে দুই চিকিৎসককে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে।
এই চিকিৎসকরা উচ্চশিক্ষিত পেশাজীবীদের নিয়ে বানানো জইশ-ই-মোহাম্মদের নতুন সন্ত্রাসী ইউনিটের সদস্য বলেই সন্দেহ করছেন তদন্ত কর্মকর্তারা।
এ ইউনিটের লক্ষ্য ছিল ভারতের রাজধানী ও এর আশপাশের শহরগুলোতে বড় ধরনের হামলা চালানো, সেজন্যই বিস্ফোরক ও অস্ত্রশস্ত্র জড়ো করা হচ্ছিল।
কিন্তু সহযোগীরা ধরে পড়ে যাওয়ার পর উমর আতঙ্কিত হয়ে পড়েন এবং পরে হতাশাগ্রস্ত হয়ে নিজেই লাল কেল্লার কাছে ট্রাফিক সিগনালে বিস্ফোরণ ঘটান, তদন্তে এমনটাই উঠে এসেছে বলে ভাষ্য কর্মকর্তাদের।
দিল্লির গাড়ি বিস্ফোরণকে অবশেষে ‘সন্ত্রাসী হামলা’ বলল ভারত
সুত্রঃ বিডিনিউজ.২৪.
