চলতি বছরের প্রথম আট মাসে সারা দেশে ৩৫০ কন্যাশিশু ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ১৩ জনকে। হত্যার শিকার হয়েছে ৮১ কন্যাশিশু। এ ছাড়া ধর্ষণচেষ্টা, পাচার, যৌন নিপীড়ন, উত্ত্যক্ত, বাল্যবিবাহসহ নানা ধরনের নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে।
ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা বেশি
পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুসারে, এ বছরের জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত ২ হাজার ১৫৯টি শিশু নির্যাতনের অভিযোগে মামলা হয়েছে। ওই ছয় মাসে নারী ও শিশু ধর্ষণের অভিযোগে মোট ২ হাজার ৭৪৪টি মামলা হওয়ার তথ্য দেওয়া হয়। তবে এর মধ্যে কতটি কন্যাশিশু ধর্ষণের ঘটনা, সেই তথ্য আলাদাভাবে দেওয়া হয়নি।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের তথ্য অনুসারে, এ বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত ৯ মাসে ৯৯৩টি কন্যাশিশু নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছে। ১৫টি জাতীয় দৈনিক পত্রিকার তথ্য সংকলিত করে সংগঠনটি জানিয়েছে, নির্যাতনের মধ্যে ধর্ষণের ঘটনা সবচেয়ে বেশি প্রকাশিত হয়েছে। এ সময়ে ৩৫০ কন্যাশিশু ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ১৩ জনকে। হত্যার শিকার হয়েছে ৮১ কন্যাশিশু। এ ছাড়া ধর্ষণচেষ্টা, পাচার, যৌন নিপীড়ন, উত্ত্যক্ত, বাল্যবিবাহসহ নানা ধরনের নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ সংকলিত করে জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম জানিয়েছে, চলতি বছরের প্রথম আট মাসে দেশে ৩৯০ কন্যাশিশু ধর্ষণ ও দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় বেশি। ২০২৪ সালের প্রথম আট মাসে মোট ২২৪ কন্যাশিশু ধর্ষণের শিকার হয়।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ অনুসারে, ধর্ষণের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড।
ফওজিয়া মোসলেম সভাপতি, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ
মাগুরার সেই শিশু ধর্ষণের (পরে মৃত্যু) ঘটনায় দেশজুড়ে প্রতিবাদ-বিক্ষোভের মধ্যে ধর্ষণ মামলার বিচার দ্রুত করার জন্য আইনে সংশোধন আনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এ বছরের ২৫ মার্চ ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ জারি করা হয়। সংশোধনে শিশু ধর্ষণ অপরাধের বিচারে আলাদা ট্রাইব্যুনাল গঠন, ছেলেশিশুদের প্রতি যৌনকর্মকে ‘বলাৎকার’ নামে অন্তর্ভুক্ত করা, ধর্ষণের মামলায় তদন্ত ও বিচারের সময় কমানো, ‘বিয়ের প্রলোভনের মাধ্যমে যৌনকর্ম’ শিরোনামে নতুন ধারা সংযোজন করা, ধর্ষণের মামলায় ডিএনএ পরীক্ষার বাধ্যবাধকতা তুলে দেওয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
পারিবারিক সহিংসতারও শিকার হচ্ছে কন্যাশিশু। ৬ অক্টোবর লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলায় ছয় বছর বয়সী কন্যাশিশুকে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ ওঠে বাবার বিরুদ্ধে। এলাকাবাসীর দাবি, শিশুর বাবা মো. ফারুক মাদকাসক্ত ছিলেন। তিনি মেয়েকে কুপিয়ে বাড়ির পুকুরে ফেলে দেন। লক্ষ্মীপুর সদর মডেল থানার ওসি আবদুল মোন্নাফ বলেন, এ ঘটনায় শিশুটির বাবাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) কেন্দ্রের তথ্য অনুসারে, গত ৯ মাসে পারিবারিক বৃত্তে নির্যাতনের পর হত্যা করা হয়েছে ৪৭ শিশুকে। এর মধ্যে ৩৬ শিশুর বয়স ছয় বছরের নিচে। তবে এর মধ্যে কন্যাশিশুর সংখ্যা আলাদা করে নেই।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম প্রথম আলোকে বলেন, ‘শিশুর প্রতি সহিংসতার বিচার না হওয়াই এ ধরনের অপরাধ বাড়ার মূল কারণ। আমরা বারবারই দিবসগুলো পালন করি। কিন্তু কন্যাশিশুদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে আমাদের যে করণীয় আছে, সেদিকেও খেয়াল রাখা উচিত।’
টেকনাফের আফসি হত্যার ঘটনায় তার বাবা মামুনুর রশীদ কঠোর সাজা দাবি করেছেন। মেয়ের জন্মদিনে তিনি এক মর্মস্পর্শী চিঠি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করেছেন। ‘আফসির খোলাচিঠি’ শিরোনামে সেই লেখায় মেয়ের হয়ে তিনি লিখেছেন, ‘আমার আত্মা চায়, যারা আমার হাসি কেড়ে নিয়েছে, যারা আমার জীবনের আলো নিভিয়ে দিয়েছে—তাদের যেন এই দেশের আইন কঠোরতম শাস্তি দেয়।’
সুত্রঃ নিউজ বাংলা ২৪ ডট কম
