পূর্ব বিরোধের জের ধরে বরিশালের আগৈলঝাড়ায় উপজেলার দক্ষিণ বাগধা গ্রামে এক গৃহবধূকে শিকলে বেঁধে বিবস্ত্র করে ছবি তুলে নির্যাতন চালানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনার দিন তাকে হাসপাতালেও ভর্তিতে বাধা দেয়া হয়।
|
নির্যাতনের শিকার গৃহবধূ পারভীন আক্তারের ভগ্নিপতি ইমদাদুল হক বাহাদুর জানান, রোববার বিকেলে স্বরুপকাঠীর কাটাখালী থেকে তার বাড়িতে বেড়াতে আসে পারভীনসহ শ্বশুরবাড়ির লোকজন। প্রতিপক্ষ কাশেম খানের বাড়ির পাশ দিয়ে তাদের বাড়িতে প্রবেশের সময়ে কাশেমের ছেলে ইলিয়াস খান ও তার স্ত্রী রেখা বেগম পথরোধ করে। এ নিয়ে তাদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়।
এর এক পর্যায়ে প্রতিপক্ষরা হেঁটে যাবার অপরাধে পারভীনকে মারধর শুরু করে। ইলিয়াসের পরিবারের লোকজন পারভীনকে প্রথমে রশি এবং পরে লোহার শিকল দিয়ে বাড়ির একটি আমড়া গাছের সাথে বেঁধে দু’টি তালা দিয়ে আকেট রাখে। মারধরের সময় পারভীননের শরীরের পরিধেয় বস্ত্র ছিঁড়ে গেলে প্রায় বিবস্ত্র অবস্থায় মোবাইল ফোনে ছবি তোলে ইলিয়াসের ছেলে আহাদ। মারধরের হাত থেকে পারভীনকে উদ্ধার করতে যাওয়ায় পারভীনের বোন সুমি ও ভাই শাহজালালকেও মারধর করা হয়।
শিকলে বাঁধা অবস্থায় পারভীনের ডাক-চিৎকার দিলেও প্রভাবশালীদের ভয়ে কেউ এগিয়ে না আসলেও গ্রামপুলিশ সদস্য পরেশ দাস, স্থানীয় আবুল কালাম সরদার ও আব্দুল হক ঢালী এগিয়ে আসলে তাদের প্রতিরোধের মুখে শিকলে বাঁধা পারভীনকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় ইলিয়াস। আহত পারভীনকে হাসপাতালে নিতেও বাঁধা দেয় তারা। সোমবার পারভীনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত ডা. আল আমীন হোসাইন জানান, আহত গৃহবধূ পারভীনের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
বাগধা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বাবুল ভাট্টি শিকলে বেধে গৃহবধূকে নির্যাতনের ঘটনার সাথে যারা জড়িত তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
স্থানীয় মসজিদের ইমাম ও নির্যাতিত গৃহবধূর ভগ্নিপতি ইমদাদুল হক বাহাদুর জানান, এ ঘটনায় তিনি থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
ঘটনাস্থল পরিদর্শনকারী এসআই মনিরুজ্জামান বলেন, উভয়ের সাথে পূর্ব বিরোধের জের ধরে মারধরের ঘটনা ঘটেছে। ঘটনাস্থলের ছবি উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আগৈলঝাড়া থানার ওসি গোলাম ছরোয়ার বলেন, শিকলে বেঁধে এক গৃহবধূকে নির্যাতনের খবর পেয়ে উপ-পরিদর্শক মনির হোসেনকে ঘটনাস্থল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পরিদর্শনে পাঠাই। তারা এখনো থানায় কোনো অভিযোগ করেননি। ভুক্তভোগী ওই গৃহবধূর পরিবার থেকে অভিযোগ দিলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
অভিযুক্ত ইলিয়াসের বড় ভাই সিরাজ খান গৃহবধূকে শিকলে বেঁধে মারধরের ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, বাড়িতে যাতায়াতের পথ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ইমদাদুলের সাথে বিরোধ চলছিল। রোববার ওই পথ নিয়ে যাবার সময় ইমদাদুলের পরিবারের লোকজন আমাদের সাথে বিরোধ সৃষ্টি করে। এরপর ওই গৃহবধূকে আমার ভাই ইলিয়াস গাছের সাথে বেঁধে রাখে।
উল্লেখ্য, উপজেলার বাগধা ইউনিয়নের দক্ষিণ বাগধা গ্রামের কাশেম খানের সাথে একই বাড়ির ইমদাদুল হক বাহাদুরের সাথে বাড়িতে প্রবেশের যাতায়াতের পথ নিয়ে দীর্ঘদিন বিরোধ চলে আসছে। সম্প্রতি কাশেম খান বাড়িতে ঢোকার পথে বেড়া দিয়ে ইমদাদুলসহ কয়েকটি পরিবার সদস্যদের যাতায়াতের পথ বন্ধ করে দেয়।
2 comments
মানুষ কতটা পাষাণ আর নির্দয় হলে এমন অমানবিক কাজ করতে পারে। জানিনা পৃথিবীতে আগামী আরো কত নির্যাতনের কথা শুনতে হবে।
বর্তমানে মানুষের মনে দয়া মায় উঠে গেছে তারা কিভাবে শরীরের পরিধেয় বস্ত্র ছিঁড়ে গ প্রায় বিবস্ত্র অবস্থায় মোবাইল ফোনে ছবি তোলে।