দক্ষিণ এশিয়ার দেশ আফগানিস্তানে তালেবান ক্ষমতা দখল করায় বাংলাদেশে জঙ্গিবাদী গোষ্ঠী উত্থানের সুযোগ নিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এই প্রেক্ষাপটে সরকার ও প্রশাসনকে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থান নেওয়ার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন দেশের বিভিন্ন প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা।
গত ১৫ আগস্ট আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল দখল করার পর সেখানে তালেবান সরকার গঠনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে ধর্মভিত্তিক ও উগ্র সাম্প্রদায়িক জঙ্গিগোষ্ঠী তৎপর হয়ে উঠার চেষ্টা চালাতে পারে বলে বিভিন্ন প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলের নেতারা আশঙ্কা করছেন। শুধু বাংলাদেশে নয়, দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশেও এই জঙ্গিগোষ্ঠী তৎপরতা চালানোর চেষ্টা করতে পারে বলেও তাদের আশঙ্কা।
ওই দলগুলোর পাশাপাশি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা এ ধরনের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
এই রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা জানান, ৯০ এর দশকে যখন তালেবান আফগানিস্তানে ক্ষমতা দখল করে তখন বাংলাদেশে উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী তৎপরতা দেখা গেছে।
ওই সময় তালেবানরা ক্ষমতা দখলের আগে তাদের হয়ে বাংলাদেশের মৌলবাদীদের অনেকেই আফগানিস্তানে গিয়ে যুদ্ধে অংশ নেয়। এরপর দেশে ফিরে বিভিন্ন নামে উগ্র সাম্প্রদায়িক ও জঙ্গি সংগঠন গড়ে তুলে সন্ত্রাসী তৎপরতা চালাতে থাকে।
আফগানিস্তান থেকে অনেকে জঙ্গি তৎপরতার প্রশিক্ষণও নিয়ে আসে। তালেবানের নামে রাস্তায় প্রকাশ্য স্লোগানও দিতে দেখা গেছে। তালেবানের পুনরায় ক্ষমতা দখলে এখানে উগ্র সাম্প্রদায়িক জঙ্গিগোষ্ঠী আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে।
ওই নেতারা আরও জানান, তালেবানের কাবুল দখলের পর বাংলাদেশের ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর উৎসাহিত হয়ে উঠার যে আশঙ্কা রয়েছে তা পুলিশ প্রশাসনের তথ্য থেকেও স্পষ্ট হয়েছে। একজন দায়িত্বশীল পুলিশ কর্মকর্তা ইতোমধ্যে জানিয়েছেন, তালেবানের হয়ে যুদ্ধ করার জন্য বাংলাদেশের কিছু লোক আফগানিস্তানে গেছে। এই পরিস্থিতিতে সরকার, প্রশাসন, সব প্রগতিশীল রাজনৈতিক দল ও সাধারণ মানুষকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন এই রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা।
এদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যেও এ ধরনের আশঙ্কার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।
গত ১৮ আগস্ট এক অনুষ্ঠানে ওবায়দুল কাদের আফগানিস্তানের নামোল্লেখ না করে বলেন, ষড়যন্ত্র চলছে। দক্ষিণ এশিয়ার একটি দেশে রাজনৈতিক পরিবর্তনে অনেকেই স্বপ্ন দেখছেন। মনে রাখবেন রক্ত দিয়ে আমরা বাংলাদেশ স্বাধীন করেছি। যেকোনো ষড়যন্ত্রকে মোকাবিলা করতে হবে। কোনো সাম্প্রদায়িক শক্তি এখানে যাতে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে সেজন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
আফগানিস্তানের এই পরিবর্তন ও পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে কিনা জানতে চাইলে জাসদের সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বাংলানিউজকে বলেন, আফগানিস্তানে সাম্প্রদায়িক সশস্ত্র শক্তি ক্ষক্ষমতা দখল করেছে। ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক রাজনীতি গণতন্ত্র, ইসলাম ধর্ম, শান্তি এসব কিছুর বিরুদ্ধে। আফগানিস্তানের এই ঘটনা বাংলাদেশে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। কারণ এই ঘটনায় ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক জঙ্গিবাদী গোষ্ঠী উৎসাহিত হবে। এজন্য সর্বোচ্চ কতর্ক অবস্থান নেওয়া ও প্রখর নজরদারি রাখা উচিত।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বাংলানিউজকে বলেন, আফগানিস্তানে পুনরায় তালেবানি শাসন পুরো দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তার জন্য হুমকি। আফগানিস্তানে তালেবানি ক্ষমতাকে ব্যবহার করে দক্ষিণ এশিয়ায় উত্তেজনা সৃষ্টি এবং বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে তালেবানি প্রভাব ‘রপ্তানি’ করে নাশকতার সৃষ্টির অপচেষ্টা হতে পারে। এ বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার প্রগতিশীল দল, ব্যক্তি ও সাধারণ মানুষকে সতর্ক থাকতে হবে।
ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা বাংলানিউজকে বলেন, এটা সর্বজন বিদিত যে এর আগে যখন এই জঙ্গি তালেবান ক্ষমতায় ছিলো তখন আফগানিস্তান ছিলো জঙ্গিবাদী তৎপরতার ভূমি। উগ্র জঙ্গি সংগঠন আল কায়দা, এমনকি আইএসও সেখানে সেল্টার নিয়েছিলো। তাই আবারও তারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জঙ্গিবাদ রপ্তানির তৎপরতা চালাতে পারে। আমাদের দেশের একজন দায়িত্বশীল পুলিশ কর্মকর্তা বলছেন তালেবানের সঙ্গে যোগ দেওয়ার জন্য এখান থেকে কেউ কেউ আফগানিস্তানে গেছেন। অনলাইনে বোমা তৈরির প্রশিক্ষণের কথাও বলেছে। তাই সরকার, প্রশাসন, রাজনৈতিক দলকে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
এ বিষয়ে আওযামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী লে. কর্নেল (অব.) ফারুক বাংলানিউজকে বলেন, অতীতে যখন আফগানিস্তানে তালেবান ছিলো তখন আমরা দেখেছি, আমাদের দেশে রাস্তায় স্লোগন দেওয়া হয়েছে- ‘আমরা হব তালেবান, বাংলা হবে আফগান’। তখন বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় থেকে এই উগ্র সাম্প্রদায়িক, সন্ত্রাসী, জঙ্গিগোষ্ঠীকে সহযোগিতা দিয়েছিলো। আফগানিস্তানে জঙ্গিরা প্রশিক্ষণ নিয়েছিলো। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে এই জঙ্গিগোষ্ঠীকে দমন করেছে, বাড়াবাড়ি করতে দেয়নি। আমাদের দেশের জনগণ সাম্প্রদায়িক জঙ্গিগোষ্ঠীকে সমর্থন করে না। এখানে কোনো জঙ্গি তৎপরতা চালানোর চেষ্টা হলে সরকার এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর ব্যবস্থা নেবে।
Ref. Bangla News 24
2 comments
বাংলাদেশে ধর্মভিত্তিক ও উগ্র সাম্প্রদায়িক জঙ্গিগোষ্ঠী তৎপর হয়ে উঠার চেষ্টা চালাতে পারে কথাটি উড়িয়ে দেওয়া যায় না তাই আইন-শৃংখলা জোরদার করতে হবে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যেও এ ধরনের আশঙ্কার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। তারা তো এমনিতে ও আতংকিত