বাংলাদেশের মৌলভীবাজারে একজন বাক প্রতিবন্ধী তরুণীকে ধর্ষণ চেষ্টার অপরাধ সালিশ করে ২৫ হাজার টাকায় মীমাংসার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সালিশকারীদের একজন বলছেন, মেয়েটির যে ‘মানহানি’ হয়েছে, সেটি বিবেচনায় অভিযুক্ত ব্যক্তিকে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। সেটি পরিশোধের জন্য সেই ব্যক্তিকে পাঁচ মাস সময়ও দেয়া হয়েছে।
রোববার দুপুরে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার পৃথিমপাশা ইউনিয়নে ওই ঘটনা ঘটে। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর রাতে সালিশে বসে ওই সিদ্ধান্ত নেন স্থানীয়রা।
মেয়েটির প্রতিবেশী ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ মেম্বার নেহার বেগম বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ”মেয়েটির মা আমার বাসায় কাজ করে। তার বাবা নেই। গতকাল দুপুরে প্রতিবেশী একজন মা বাড়িতে না থাকায় মেয়েটিকে ধর্ষণের চেষ্টা করেছে বলে মেয়েটি আমাকে বলেছে।”
রাতে বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর স্থানীয়রা সালিশে বসেন। সেখানে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। সেই টাকা পরিশোধের জন্য তাকে পাঁচ মাস সময়ও দেয়া হয়।
সালিশকারীদের একজন তৈয়ব আলী বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ”অভিযোগ পাওয়ার পর এলাকার ময়-মুরুব্বি সবাই মিলে সেখানে বসছিল। তখন ওদের বলা হয়েছিল, আপনারা যদি আইনের আশ্রয় নিতে চান, তাহলে আইনের আশ্রয় নিতে পারেন। বা যদি বলেন এলাকায় শেষ করতে, তাইলে এলাকায় শেষ করা যায়। তার (মেয়েটির) যে মানহানি হয়েছে, সেই মানহানি বাবদ তাকে ২৫ হাজার টাকা দেয়া হবে। উভয় পক্ষের সম্মতিতে এটা সিদ্ধান্ত হয়েছে।”
এই টাকা দেয়ার জন্য অভিযুক্ত ব্যক্তিতে পাঁচ মাস সময় দেয়া হয়েছে বলেও তিনি জানান।
বাংলাদেশের মৌলভীবাজারে একজন বাক প্রতিবন্ধী তরুণীকে ধর্ষণ চেষ্টার অপরাধ সালিশ করে ২৫ হাজার টাকায় মীমাংসার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গত বছর ২১শে অক্টোবর যেখানে বাংলাদেশে উচ্চ আদালতের আদেশ রয়েছে যে, ধর্ষণের ঘটনা মীমাংসায় সালিশ ফৌজদারি অপরাধ হিসাবে গণ্য করা হবে না কেন জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।
সেখানে তারা কীভাবে এ ধরণের সালিশ করলেন, জানতে চাইলে তিনি বলছেন, ”আমরা তো তাদের বলছি, আপনারা আইনের আশ্রয় নেন, সমস্যা নেই। ভিকটিম আইনের আশ্রয় না নেয়, কেউ তো তাদের ধরে নিয়ে আইনের আশ্রয় দিতে পারবে না।”
সেই সময় ১০০ টাকার স্ট্যাম্পে ওই তরুণী ও সালিশকারীদের স্বাক্ষর রাখা হয়েছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।
ভিকটিম মেয়েটির পরিবারের কারও সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। অভিযুক্ত ব্যক্তির মোবাইল নম্বরটিও বন্ধ পাওয়া গেছে।
এই বিষয়ে কুলাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বিনয় ভূষণ রায় বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ”আমাদের কাছে কেউ কোন অভিযোগ করেনি। তবে এই ধরনের একটা ঘটনা ঘটেছে শুনে আমাদের একটা টিমকে ঘটনাস্থলে পাঠিয়েছি।”
ধর্ষণ চেষ্টা বা এই ধরণের সালিশে জড়িত কেউ থাকলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও তিনি জানিয়েছেন।
সুত্র: বিবিসি বাংলা
6 comments
অসহায় ও দূর্বল মানুষের সমাজে ন্যায় বিচার পাওয়ার কি কোন অধিকার নেই
থানা-পুলিশ ও ধর্ষণের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইন থাকা সত্ত্বে ও স্থানীয় মাত্ববর তাদের (আসামীদের) বাঁচাতে এই সালিশ বিচারের আয়োজন করেছে। আর ধরনের বিচারের নামে প্রহসন বাংলাদেশের সবজাগায়ই হয়ে থাকে।
আইনের শাসন যেখানে নেই সেখাণে তো এই ধরনের বিচার হবেই
নারী অধিকার নিয়ে যারা সোচ্চার তারা কই তারা কি এসব খবর দেখে না প্ত্রিকায়
সরকারের জবাবদিহিতা না থাকলে দেশে এ ধরেনের আইন ও বিচার বর্হিভুত ঘটনা ঘটবেই
স্থানীয়ে নেতাদের আইনের আওতায় আনা উচিত যাতে ভবিষ্যতে এধরনের আইন বর্হিভূত কাজ তার না করে