বাংলাদেশে অনলাইনে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রেকর্ড হারে কমেছে। এর পেছনে দুটি কারণ উল্লেখ করেছে মার্কিন অলাভজনক গবেষণা সংস্থা ফ্রিডম হাউস। প্রথমত, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের আওতায় ধরপাকড় জারি রেখেছে সরকারি কর্তৃপক্ষ। দ্বিতীয়ত, ক্রমেই অভিনব সব উপায়ে সরকারি নজরদারির খবর আসছে সামনে।
ফ্রিডম হাউসের ‘ফ্রিডম অন দ্য নেট ২০২১’ প্রতিবেদনে ইন্টারনেটে বাক্স্বাধীনতার সূচকে ১০০-তে বাংলাদেশকে দেওয়া হয়েছে ৪০ পয়েন্ট। গত বছর এই পয়েন্ট ছিল ৪২। সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে ২০১৯ সালে ৪৪, ২০১৮ সালে ৪৯, ২০১৭ সালে ৪৬ ও ২০১৬ সালে বাংলাদেশ পেয়েছিল ৪৪ পয়েন্ট।
প্রাপ্ত পয়েন্টের ভিত্তিতে দেশগুলোকে তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে। পয়েন্ট ১০০ থেকে ৭০-এর মধ্যে থাকলে ‘মুক্ত’, ৬৯ থেকে ৪০-এর মধ্যে থাকলে ‘আংশিক মুক্ত’ এবং ৩৯-এর নিচে হলে ‘মুক্ত নয়’। আংশিক মুক্ত শ্রেণির তলানিতে বাংলাদেশ। অবশ্য ২০১৩ সাল থেকে বরাবরই আংশিক মুক্ত দেশ হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে বাংলাদেশ।
ফ্রিডম হাউসের প্রতিবেদনটিতে বিশ্বের ৭০টি দেশের পর্যালোচনা করা হয়েছে। ইন্টারনেটে স্বাধীনতার স্তর নির্ণয়ে ৩ ধরনের মোট ২১টি প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে এতে। এই তিন ধরন হলো সেবা ব্যবহারে বাধা, কনটেন্টের সীমাবদ্ধতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘন। প্রতিবেদন তৈরিতে ২০২০ সালের ১ জুন থেকে চলতি বছরের ৩১ মে পর্যন্ত ঘটনাবলি বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। সেখানে উল্লেখ করা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলোর মধ্যে রয়েছে—
- রোহিঙ্গা শরণার্থীশিবিরে থ্রি–জি ও ফোর–জি ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করা হয়। প্রায় এক বছর পর ২০২০ সালের আগস্টে তা চালু করা হয়।
- ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের সময় গত মার্চে চলমান আন্দোলনে তিন দিনের জন্য ফেসবুক ও ফেসবুক মেসেঞ্জার বন্ধ করে দেওয়া হয়।
- চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি ও মার্চে আল–জাজিরা ও ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম হারেৎজের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলি নজরদারি সরঞ্জাম সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে নজরদারি, হ্যাকিং ও মুঠোফোন থেকে তথ্য সংগ্রহের প্রযুক্তি কিনেছে বাংলাদেশ।
- ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আটক লেখক মুশতাক আহমেদের কারাগারে মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে আইনটির বিরুদ্ধে গত ফেব্রুয়ারিতে প্রতিবাদ শুরু হয়। করোনা মোকাবিলায় সরকারের সমালোচনা করে দেওয়া ফেসবুক পোস্টের জেরে গত বছরের মে মাসে আটক হন মুশতাক।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশে ২০২০ সালের প্রথম ৯ মাসে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ৮০০–এর বেশি মামলা হয়েছে এবং সরকারের সাইবার ট্রাইব্যুনালের তথ্য অনুযায়ী ২০১৮ সালের অক্টোবরে আইনটি প্রণয়নের পর থেকে মামলা দায়ের হয়েছে প্রায় ২ হাজার।’
ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রণের নয়টি সূচকের মধ্যে সাতটি বাংলাদেশের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য বলে জানানো হয়েছে প্রতিবেদনে। এর মধ্যে রয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে বাধা, ওয়েবসাইট বন্ধ, ইন্টারনেট বন্ধ, সরকারপন্থী ভাষ্যকার, ইন্টারনেট ব্যবহারকারী আটক, ইন্টারনেট ব্যবহারকারীকে শারীরিকভাবে হেনস্তা ও কারিগরি হামলা।
বিশ্বব্যাপী টানা ১১ বছর ধরে ইন্টারনেটে স্বাধীনতা কমছে বলে জানানো হয় প্রতিবেদনে। সূচকে ৯৬ পয়েন্ট পেয়ে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে আছে আইসল্যান্ড। আর সবচেয়ে করুণ দশা চীনের, দেশটি মাত্র ১০ পয়েন্ট পেয়েছে।
সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের পেছনে রয়েছে কেবল পাকিস্তান। ২৫ পয়েন্ট পেয়ে ‘মুক্ত নয়’ তকমা জুটেছে দেশটির। ভারত ও শ্রীলঙ্কার পয়েন্ট যথাক্রমে ৪৯ ও ৫১। সার্কভুক্ত অন্য দেশগুলো প্রতিবেদনে নেই।
সুত্রঃ প্রথম আলো
5 comments
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের এত পরিশ্রমের পরও অনলাইনে পিছে পড়া দুঃখজনক
হাছু মামা বলবেন এটা সরকারে বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র বিএনপি এর জন্য দায়ী
বিরোধী মত প্রকাশে সরকারে যে কালো থাবা এই রিপোর্টই তার বহিঃপ্রকাশ মাত্র
বাংলাদেশে অনলাইনে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রেকর্ড হারে কমেছে কারণ সকল সুবিধা আছেই ঠিকইি আবার ডিজিটাল কিন্তুও আছে
চাটুকার যারা তাদের অনলাইনে মত প্রকাশের স্বাধীনতা আছে, সত্য প্রকাশ করবেন যারা তাদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল আইন ও আছে