রাজশাহীর বাঘা উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা পদ্মার চরাঞ্চলে অশিক্ষা, কুশিক্ষা, দারিদ্রতা আর সামাজিক অবক্ষয়ের কারণে বাড়ছে বাল্যবিয়ে। ফলে স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে মা হচ্ছে এখানকার শিশুরা। উপজেলা সদর থেকে নদী বেয়ে অনেক দূরের ইউনিয়ন হওয়ার কারণে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল না। ফলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার উপস্থিতি সেখানে কম। আর এই সুযোগটিকে কাজে লাগাচ্ছে অনেক পিতা-মাতা।
পদ্মার কোলঘেঁষে সীমান্ত সংলগ্ন বাঘার বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল। এখানে শিক্ষার হার একেবারে নিম্নগামী। প্রাইমারির গণ্ডি পেরুতে পারে না অধিকাংশ কন্যাশিশু। প্রক্ষান্তরে ছেলে শিশুদেরও একই অবস্থা। এখানে বাল্যবিয়ে যেন কোন ব্যাপরই না। সরকারিভাবে ১৮ বছর বয়সের আগে মেয়েদের বিয়ের ব্যাপারে কঠোর বিধিনিষেধ থাকলেও চারাঞ্চলে এগুলো মানা হয় না। তের-চোদ্দ বছরের বয়স হলেই এখানকার মেয়েদের বিয়ে দেওয়া হয়। এরপর চরম স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যেই তারা মা হয়। এর ফলে অনেকই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।
সরেজিমন খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চরাঞ্চলের অধিকাংশ পরিবারে কম-বেশি বাল্য বিয়ের ঘটনা রয়েছে। প্রাইমারির গন্ডি পেরিয়ে ষষ্ট কিংবা সপ্তম শ্রেণিতে উঠলেই মেয়েদের বিয়ে দেওয়া হয়। অনেক শিশুর ক্ষেত্রে প্রাইমারী গন্ডিও পেরুয় না। নানা কারণে এ অঞ্চলের অধিবাসীদের মধ্যে কুসংস্কার আঁকড়ে ধরে আছে।
চরাঞ্চলের নাজমুল ইসলাম নামে এক বাসিন্দা বলেন, মেয়ে বড় হলে বিয়ে দেওয়ার সমস্যা। যেহেতু মেয়েকে বিয়ে দিতেই হবে, সেহেতু আগে দেয়াই ভালো। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, স্বাস্থ্য বিবেচনা করে তো কেউ বিয়ে দেয় না। যুগ-যুগ ধরে এখানে এই অবস্থা চলে আসছে। তাই আমরাও করে আসছি।
চকরাজাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক লাইলী বেগম ও মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, চরাঞ্চলে বাল্যবিয়ের কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে মা হওয়ার প্রবণতা আগের চেয়ে কিছুটা কমেছিল। করোনার কারণে দেড় বছর ধরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় অনেক শিক্ষার্থীরা ঝরে গেছে। এ জন্য পিতা-মাতাকে এককভাবে দায়ি করা যাবে না। কারণ অনেক শিক্ষর্থী প্রণয়ঘটিত কারণে একে অপরকে ভালবেসেও বিয়ে করছে।
এ বিষয়ে গাইনি চিকিৎসকরা বলেন, আঠারোর আগে শারিরীক মানসিক কোন দিক দিয়েই একটি মেয়ে বিয়ে এবং গর্ভধারণের জন্য প্রস্তুত হয় না। সন্তানধারণের জন্য শরীরের প্রস্তুতি প্রয়োজন। প্রথম পিরিয়ডের পর ধীরে ধীরে তার শরীর ডেভলপ করবে। এই ডেভলপমেন্টের জন্য একটা সময় দিতে হয়। পনের থেকে আঠার বছর পর্যন্ত এই শরীর গঠন চলতে থাকে। আঠারো বছরের আগে যদি মেয়েদের বিয়ে দেওয়া হয় তখন তার প্রপার গ্রোথ হয় না। এক্ষেত্রে গর্ভধারণ করলে প্রিম্যাচিওর ডেলিভারির শঙ্কা থাকে। যেটি শিশুর মৃত্যু ঝুঁকি তৈরি করে। চিকিৎসকদের মতে, বাল্যবিবাহ মেয়েদের স্বাস্থ্য সমস্যার পাশা-পাশি শিশু মৃত্যুরও অন্যতম কারণ।
সার্বিক বিষয়ে বাঘা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পাপিয়া সুলতানা বলেন, একজন শিশুর পেট থেকে আরেকজন শিশুর জন্ম হবে এটা কাম্য নয়। সরকারি ভাবে ১৮ বছরের কম বয়সী মেয়েদের বিয়ে দিতে বারণ এটা জানেন না এমন কোন মানুষ নেই। তারপরেও অতি গোপনে শুধু বাঘার চরাঞ্চল নয়, দেশের বিভিন্ন এলাকাতে এর কম-বেশি প্রভাব রয়েছে। এ জন্য অশিক্ষা, কুশিক্ষা, দারিদ্রতা আর সামাজিক অবক্ষয়ের কারণ অন্যতম বলে তিনি মন্তব্য করেন।
নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, এটি প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজন জনসচেতনা। তিনি এ বিষয়ে সুশীল সমাজ, জনপ্রতিনিধি, এলাকার অভিজ্ঞ মহল, ইমাম এবং শিকক্ষদের বাল্যবিয়ের কুফল সম্পর্কে বেশি-বেশি করে বক্তব্য উপস্থাপনের আহ্বার জানান।
সুত্র:ইত্তেফাক
4 comments
দেড় বছর ধরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় অনেক শিক্ষার্থীরা বাড়িতে থাকা এবং লকডাউনে পরিবারের আয় কমে যাওয়ায় বাল্যবিবাহ বেড়েছে
নারী শিশুর অধিকার আদায়ের জন্য সরকারের সাথে সাথে বেসরকারী সংস্থার এগিয়ে আসতে হবে জোড়ালোভাবে
শুধু আঞ্চলিকভেধে নয় সারা বাংলাদেশে এই কুসংস্কার রয়েছে যে মেয়ে এইট লাইনে উঠলেই চিন্তার পরিবর্তন হতে শুরু করে পরিবারের
বাল্যবিবাহ বাংলাদেশে অনেক কমে গেছে তারপর ও এটা বিদ্যামান তাই আরো সচেতনমুলক প্রচার প্রচারণা চালাতে হবে মিডিয়াতে