খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় অনেকটা বাধ্য হয়ে মো. মাইন উদ্দিন (৯) নামে এক শিশুকে শিকল দিয়ে বেঁধে রেখেছে তার বাবা-মা।
গত দুই বছরের বেশি সময় ধরে শিকলে বাঁধা অবস্থাতেই খাওয়া-দাওয়াসহ সবকিছু চলে তার।
যে বয়সে ছুটে বেড়ানোর কথা সে বয়সে শিকলে বন্দি হয়ে দিন কাটছে তার।
শিকলে বাঁধা শিশু মো. মাইন উদ্দিন খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলার বেলছড়ি ইউনিয়নের অযোধ্যা মোড়ের চা দোকানি মো. আলম মিয়া ও ফাতেমা বেগম দম্পতির ছেলে।
জানা গেছে, জন্মের ১৮ মাস বয়সে জ্বর হয়েছিল মো. মাইন উদ্দিনের। এসময় বিভিন্ন কবিরাজের পানি পড়া, ঝাড়-ফুকে জ্বর সারলেও শরীরে খিঁচুনি হতে থাকে।
অবস্থার অবনতি হলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দীর্ঘদিন চিকিৎসা করানো হয়। চিকিৎসা করাতে গিয়ে অনেকটা নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন পাঁচ সন্তানের জনক মো. আলম মিয়া।
জানতে চাইলে চা দোকানী মো. আলম মিয়া বলেন, চা দোকানের আয় দিয়েই চলে আমার ছেলের চিকিৎসা আর সাত সদস্যের পরিবারের ভরণ-পোষণ। ছেলের প্রতিবন্ধি ভাতার অর্থ ছাড়া আর কোনো সরকারী সাহায্য জোটেনি।
অসুস্থ ছেলের চিকিৎসায় সরকার ও জনপ্রতিনিধিদদের সহযোগিতা কামনা করে তিনি।
শিশু মাইন উদ্দিনের বাবা আরও জানান, চিকিৎসা শেষে বাড়িতে নিয়ে আসার পর থেকেই অস্বাভাবিক আচরণ করতে থাকে মাইন উদ্দিন। অকারণেই প্রতিবেশী শিশুদের মারধর করে। আবার মাঝে মাঝে বাড়ি থেকে হারিয়েও যায়।
এরপরপরই মানসিক প্রতিবন্ধি সন্দেহে প্রতিবেশীদের পরামর্শে গত দুই বছরের বেশী সময় ধরে মাইন উদ্দিনকে শিকলে বেঁধে রেখেছেন তারা।
ইতিমধ্যে শিশুটির নামে প্রতিবন্ধি ভাতার কার্ড দেওয়া হয়েছে জানিয়ে বেলছড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. রহমত উল্লাহ জানান, ভবিষ্যতেও শিশুটির চিকিৎসাসহ সার্বিক বিষয়ে পরিষদের পক্ষ থেকে যতটুকু সম্ভব সহযোগিতা দেয়া হবে।
এবিষয়ে জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেসিডেন্ট ডা. পরাগ দে বলেন, অপচিকিৎসার কারনেই এমনটা হয়েছে। চিকিৎসায় শিশু মো. মাইন উদ্দন সুস্থ হয়ে উঠতে পারে বলেও মন্তব্য করে তিনি।
মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিজ তৃলা দেব বলেন, ইতিমধ্যে মো. মাইন উদ্দিনের নামে সুবর্ণ কার্ড ও প্রতিবন্ধি ভাতা বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে। তার বাবা যদি আবেদন করেন তবে অনুদানের ব্যবস্থা করা হবে।
সুত্রঃ যুগান্তর