আফগানিস্তান, পাকিস্তান এবং পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরে নারীদের ‘শিক্ষার সুযোগের শোচনীয় অবস্থার’ দিকে নজর দিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জম্মু ও কাশ্মীরের নারীরা। ভারতীয় সংবাদ সংস্থা এএনআই-এর বরাত দিয়ে জি-৫ ডটকম এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে।
রাজনৈতিক আধিপত্যের উপায় হিসেবে ধর্মীয় রক্ষণশীলতা অবলম্বন করা এবং ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষায় নারীদের অধিকারকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য তারা পাকিস্তানি নেতৃত্বকে তিরস্কার করেন।
তারা আরও বলেন, ‘পাকিস্তানের জনসংখ্যার একটি বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মাদ্রাসার মাধ্যমে শুধুমাত্র ধর্মীয় শিক্ষার প্রবেশগম্যতা রয়েছে। গোঁড়ামী ধারণা দিয়ে শিক্ষাকে বেঁধে রাখা যায় না এবং শিক্ষার্থীদের বিদ্যমান জ্ঞানের বিশাল বিস্তৃতির অধিকার রয়েছে।’
আফগানিস্তানে নারী শিক্ষার প্রসঙ্গ টেনে তারা বলেন, ‘তালেবানরা আফগানিস্তান দখল নেয়ার পর থেকে সেখানে মেয়েদের জন্য সমস্ত স্কুল এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।’
আন্তর্জাতিক সমর্থনের অধীনে আফগানিস্তানের হাজার হাজার নারী ও তাদের পরিবার দুই দশক শান্তিতে ছিল, তারা আশা দেখেছিল যে কোনো ধরনের ভয়-আতঙ্ক ছাড়াই তারা শিক্ষা লাভের সুযোগ পাবে, কিন্তু তালেবান আসার পর সব কিছু বদলে গেছে।
২০২১ সালের ১৫ই আগস্টের ভূ-রাজনৈতিক সমঝোতা চোখের পলকে সব কিছু বদলে দিয়েছে। এর ফলে দেশটির জনসংখ্যার অর্ধেকের ওপর যে প্রভাব পড়বে সে বিষয়টি তখন ভাবা হয়নি। আফগান নারীদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করে তারা আরও বলেন, আফগান নারী ও পুরুষদের দুর্দশার দায় যদি আফগানদের একারই হয়, তাহলে তাদের অনেক আগেই একা ছেড়ে দেয়া উচিত ছিল।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি তারা বলেন, ‘শুধু খাদ্য ও আশ্রয় নয়, শিক্ষা, বিশেষ করে মেয়েদের জন্য, মানবিক ত্রাণ প্রচেষ্টার অন্তর্ভুক্ত হওয়া নিশ্চিত করা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দায়িত্ব। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আফগান নারীদের শিক্ষার বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে, সেটি যতটা গুরুত্ব পাওয়ার যোগ্য।’
এই নারীরা আরও বলেন, পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর এবং গিলগিট-বালতিস্তান আজ দুঃখজনকভাবে শিক্ষাক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছে, তাদের বোনদের আধুনিক ও ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে।
তারা আরও বলেন, ‘পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর এবং গিলগিট-বালতিস্তানে আধুনিক স্কুল এবং কলেজের অনুপস্থিতি আমাদের বোনদের সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত করেছে, যা আমরা ভারতে গ্রহণ করতে এসেছি। শুধু জম্মু ও কাশ্মীরে নয়, ভারতের যেকোনো জায়গায় আমাদের পছন্দের যেকোনো প্রতিষ্ঠানে প্রবেশাধিকার আছে।’
তারা আরও বলেছেন, খাইবার পাখতুনখোয়াতে পরিস্থিতি ভালো নয় যেখানে সমস্ত মধ্যপন্থী এবং প্রগতিশীল রাজনৈতিক শক্তিকে বলি দেওয়া হয়েছে।
প্রদেশটি তালিবানাইজেশনের একটি স্তর দেখেছে যা এমনকি আফগানিস্তানেও নেই। পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরে মেয়ে শিশুর শিক্ষার সম্ভাবনা দুটি শব্দে বর্ণনা করা যেতে পারে- সেটি হলো ‘মালালা ইউসুফজাই।’
পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরে আমাদের বোনেরা আফগানিস্তানের মতোই অন্ধকার ভবিষ্যতের মুখোমুখি। বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে বিষয়টি বস্তুনিষ্ঠ ও অরাজনৈতিকভাবে উত্থাপন করতে বলেছেন তারা। সেই সঙ্গে ‘গুরুতর’ মানবাধিকার সমস্যার সমাধান চেয়েছেন।
সূত্র: জি৫, মানবজমিন