নওগাঁর মহাদেবপুরে এক হিন্দু শিক্ষিকার কথিত ‘হিজাব বিদ্বেষ’ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়ানো গুজব-রহস্যের জট খুলতে শুরু করেছে। স্থানীয় সচেতন মহল বলছে, ত্রিমুখী দ্বন্দের জেরে বিদ্যালয়ে ঘটে যাওয়া তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকার প্রভাশালী চক্র ফেসবুকে উসকানিমূলক পোস্ট দিয়ে হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতি বিনষ্টসহ নিজেদের ফায়দা লোটার পাঁয়তারা করছে। তবে প্রশাসন, পুলিশ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ এলাকার সচেতন মহলের প্রচেষ্টায় তাদের সে আশা এ যাত্রায় হালে পানি পায়নি।
জানা গেছে, গত ৬ এপ্রিল বুধবার ওই বিদ্যালয়ে জাতীয় সংগীত শেষে পিটির লাইনে দাঁড়ানো অবস্থায় স্কুলের নির্ধারিত পোশাক না পরায় দুজন শিক্ষক কয়েকজন শিক্ষার্থীকে বেত্রাঘাত করেন। তাদের মধ্যে হিন্দু ছাত্রী ও ছেলে শিক্ষার্থীও ছিল। ওই দিন রাতে স্থানীয় একটি চক্র শিক্ষার্থীদের বেত্রাঘাতের ঘটনাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে ‘হিজাব পরায় হিন্দু শিক্ষিকা কর্তৃক মুসলিম ছাত্রীদের মারপিটের’ কথিত অভিযোগ তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দেয়। এ নিয়ে এলাকায় ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়। পরদিন বৃহস্পতিবার দুপুরে স্থানীয় ওই চক্রের সদস্যরা স্কুলে গিয়ে ভাঙচুর করে। ভাঙচুরের কয়েক সেকেন্ডের একটি ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হলে বিষয়টি প্রশাসনের নজরে আসে।
একই দিন বিকালে স্থানীয় অপর এক ফেসবুক আইডি থেকে দুই ছাত্রীর লাইভ ভিডিও প্রচারিত হলে বিষয়টি টক অব দ্য কান্ট্রিতে পরিণত হয়। ওই লাইভ ভিডিওতে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী উম্মে সুমাইয়া ও অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী সাদিয়া আফরিন সহকারী প্রধান শিক্ষক আমোদিনী পালের বিরুদ্ধে হিজাব ধরে টানাটানি ও মারপিটের অভিযোগ করে। তাদের অভিভাবকদেরও দাবি
ছিল, হিজাব পরার কারণেই মেয়েদের মেরেছেন ওই শিক্ষিকা। পরে থানা পুলিশের মধ্যস্থতায় গভীর রাতে ভিডিওটি প্রত্যাহার করে নেন ওই আইডির অ্যাডমিন। এই প্রতিবেদকসহ স্থানীয় সাংবাদিকরা গতকাল শনিবার দুপুরে অভিযোগ তোলা দুই শিক্ষার্থীর বক্তব্য জানতে তাদের বাড়িতে গিয়েও কাউকে পায়নি। উভয়ের বসতঘর ছিল তালাবদ্ধ।
এদিকে হিজাব বিতর্কের পেছনে ওই বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির দ্ব›দ্বকে দায়ী করেছেন স্থানীয়রা। এ প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটি ও হিসাব নিয়ে কয়েক মাস ধরে ত্রিমুখী দ্ব›দ্ব চলছিল বলেও জানিয়েছেন তারা। সরজমিন তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ধরণী কান্ত বর্মণ অবসরে যাচ্ছেন আগামী ১০ মে। গত ১০ বছরে তিনি অন্তত ১০ জন শিক্ষক নিয়োগে কোটি টাকার বেশি বাণিজ্য করেছেন। এ নিয়ে দুদকে মামলা চলমান রয়েছে।
সম্প্রতি রাইগাঁ কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ আব্দুল মতিনকে ওই বিদ্যালয়ের সভাপতি করার জন্য প্রস্তাব দেন স্থানীয় শিক্ষা সচেতন ব্যক্তিরা। কিন্তু নিজের অনিয়ম-দুর্নীতি ধামাচাপা দিতে এলাকার বিএনপি নেতা হিসেবে পরিচিত মাহমুদুল হাসান মামুনকে সভাপতি করে গোপনে গোপনে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড থেকে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি অনুমোদন করে নেন ধরণী কান্ত বর্মণ। সহকারী প্রধান শিক্ষক আমোদিনী পাল যেন প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে না পারেন এ জন্য ওই চক্রটি অপতৎপরতা চালাচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।
তারা আরো জানান, বর্তমান প্রধান শিক্ষক ধরণী কান্ত বর্মণ এবং ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মাহমুদুল হাসান মামুন সরকারি বিধি লঙ্ঘন করে একই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রবিউল ইসলামকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। এ নিয়ে স্থানীয় শিক্ষা সচেতন ব্যক্তিদের সঙ্গে চলছে ত্রিমুখী দ্ব›দ্ব। যার ভুক্তভোগী সহকারী প্রধান শিক্ষক আমোদিনী পাল।
ওই বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী টমি পাল, দীপা রানী, কাকলী রানী পাল ও ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী কবিতা রানীসহ অন্য প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীরা জানায়, ওই দিন ইউনিফর্ম পরে না আসায় আমোদিনী পাল ও বদিউল আলম তাদের কয়েকজনকে একটু শাসন করেন। তবে সেখানে হিজাব নিয়ে কোনো কথা ওঠেনি।
সহকারী প্রধান শিক্ষক আমোদিনী পাল জানান, একটি প্রভাবশালী মহল সাম্প্রদায়িক উসকানিমূলক পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা করছে। তিনি হিজাব বা ধর্মীয় বিষয়ে কিছুই বলেননি। কমিটি ও প্রতিষ্ঠানের সমস্যা আড়াল করতে তাকে বিনা দোষে অপরাধী করার চেষ্টা চলছে। প্রশাসনের তদন্তে প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটন হবে বলেও দাবি করেন তিনি।
শিক্ষার্থীদের বেত্রাঘাত করার বিষয়ে জানতে চাইলে সহকারী শিক্ষক বদিউল আলম সাংবাদিকদের কাছে বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।
প্রধান শিক্ষক ধরণী কান্ত জানান, ঘটনার দিন তিনি স্কুলের কাজে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে ছিলেন।
এদিকে মহাদেবপুর থানার ওসি আজম উদ্দিন মাহমুদ জানান, ওই শিক্ষিকার বাড়ি ও বিদ্যালয়ে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। নওগাঁর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহাদেবপুর সার্কেল এ টি এম মাইনুল ইসলাম জানান, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশি তৎপরতা ও গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত রয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ধর্মীয় ইস্যু নিয়ে গুজব ছড়ানো ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা হবে কিনা- এমন প্রশ্নের সদুত্তর মেলেনি এ পুলিশ কর্মকর্তার কাছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিজানুর রহমান মিলন জানান, ওই শিক্ষিকাকে সাত দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিস দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে গুজব ছড়ানো ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার প্রস্তুতি চলছে।
সুত্রঃ ভোরের কাগজ
5 comments
হিজাব নাকি চক্রান্তে শিক্ষিকা আমোদিনী পালকে নিয়ে টানা হেঁচড়া কেন ? ঘটনার নেপথ্যে কারা তাদের ধরা হোক
These are just divisions, violence, and the salvation of individual interests of ordinary people.
হিজাব নাকি চক্রান্ত করে শিক্ষিকা আমোদিনী পালকে ফাঁসানোর জন্য, তাকে নিয়ে টানা হেঁচড়া ? ঘটনার নেপথ্যে কারা তাদের চিহ্নিত করে বিচার করা হোক
বাংলাদেশ খুব তাড়াতাড়ি পুনরায় পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হবে। তার নমুনা মাত্র
Eta ke ami bolbo Hindhuphoebia. Puro Bangladesh ke Hinduphoebic kora hoyche. Soja kotha holo je sudhu Hindu der i marto aar muslim chatro der marto na, tahole eta amader kaan e asto na. Amar mote shob chatro ke ek bhabe dekha uchit. It is more about targeting minority and when Hindus complain they are branded communal. What a travesty