বর্তমানে খবরের কাগজে নিত্যদিনের খবরে পরিণত হয়েছে ‘নারী নির্যাতন’। নারীর অবমাননা বা নির্যাতন সমাজে ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। দেশে ধর্ষণ, দলবদ্ধ ধর্ষণ, এমনকি ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনা বেড়েই চলেছে। প্রতিদিন দেশের কোনো না কোনো স্থান থেকে ধর্ষণের ভয়াবহ বার্তা আসে। সামাজিক অবক্ষয়ের ফলে প্রায়ই নারীর ওপর চালানো হয় অমানুষিক নির্যাতন।
মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) হিসাব অনুযায়ী, ২০১৯ সালে ১ হাজার ৪১৩ নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। ২০১৮ সালে এ সংখ্যা ছিল ৭৩২। অর্থাৎ আগের বছরের তুলনায় ২০১৯ সালে ধর্ষণের ঘটনা বেড়েছে দ্বিগুণ, যা ভয়াবহ বলে উল্লেখ করেছে সংস্থাটি। ২০১৭ সালে ধর্ষণের শিকার হন ৮১৮ নারী। ২০১৯ সালে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৭৬ নারীকে। এ সময়ে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন ১০ নারী। বাংলাদেশে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনাও অহরহ ঘটে থাকে। দেশে ১ লাখ নারীর মধ্যে ১০ জনের মতো দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন। বাস্তব সংখ্যাটা হয়তো এর কয়েক গুণ। কারণ, ধর্ষণ বা যৌন হয়রানিতে অনেক ভুক্তভোগী পরিবার মেয়ের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে কিংবা অপরাধী কর্তৃক নির্যাতনের ভয়ে ঘটনা চেপে রাখে।
পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ অনুসারে, ২০২০ সালে মোট ৩ হাজার ৪৪০ নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ধর্ষণ ১ হাজার ৭৪, দলবদ্ধ ধর্ষণ ২৩৬, ধর্ষণের পর হত্যা ৩৩, ধর্ষণের কারণে ৩ জনের আত্মহত্যাসহ মোট ১ হাজার ৩৪৬ নারী ও কন্যাশিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। এ ছাড়া ২০০ জনকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে। শ্নীলতাহানির শিকার ৪৩ জন। ৭৪ জন যৌন নিপীড়নের শিকার। এসিড সন্ত্রাসের শিকার হয়েছেন ২৫ জন। এর মধ্যে এসিডদগ্ধে মৃত্যু হয়েছে ৪ জনের। অগ্নিদগ্ধের শিকার হয়েছেন ২৯ জন। এর মধ্যে ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। উত্ত্যক্তের শিকার হয়েছেন ৫৯ জন। অপহরণের শিকার হয়েছেন মোট ১২৫ জন। পাচারের শিকার হয়েছেন ১০১ জন। এর মধ্যে পতিতালয়ে বিক্রি করা হয়েছে ৪ জনকে। বিভিন্ন কারণে ৪৬৮ নারী ও শিশুকে হত্যা করা হয়েছে। এ ছাড়াও ৩৫ জনকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। যৌতুকের কারণে নির্যাতিত হয়েছেন ১১৭ জন। এর মধ্যে ৫২ জনকে হত্যা করা হয়েছে। শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ১৫৯ নারী।
ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে জাতীয় সংসদে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) বিল-২০২০ পাস হয়েছে। ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান করেও কমানো যাচ্ছে না ধর্ষণের হার। নারী প্রতিনিয়ত ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। নারীর নিরাপত্তার জন্য প্রশাসনের যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। পাশাপাশি কোনো নারী নির্যাতনের শিকার হলে অপরাধীকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে কেউ নারী নির্যাতন করার সাহস না পায়। সর্বোপরি প্রশাসনের কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি সমাজ ও পরিবারের সবাইকে এ সমস্যা সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে।
শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া
সুত্রঃ সমকাল