মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার মাদরাসার মুহতামিমের বিরুদ্ধে ছাত্রকে বলাৎকারের অভিযোগ উঠেছে। শনিবার (৮ অক্টোবর) বেলা ৩টার দিকে রাজৈর থানায় মামলা দায়ের করেছে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর বাবা। এদিকে ঘটনার ঘটার পরে মাদরাসার ম্যানেজিং কমিটির কাছে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করে চলে যান অভিযুক্ত মুহতামিম।
তবে তিনি সম্প্রতি স্বপদে পুনরায় ফিরে আসার পায়তারা করায় ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে ম্যানেজিং কমিটি ও স্থানীয়রা। তার শাস্তির দাবিতে জেলা প্রশাসকের কাছেও লিখিত অভিযোগ করেছেন ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি।
মামলার এজাহার ও ভুক্তভোগীর অভিযোগে জানা যায়, রাজৈর উপজেলার পৌরসভা ভবন সংলগ্ন এলাকায় ‘জামিয়া আরাবিয়া দারুল উলুম মাদরাসার মুহতামিম মুফতি রেজাউল ইসলাম বিভিন্ন সময়ে বিশেষ জামাত (দহম) এর এক ছাত্রকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে বলাৎকার করার চেষ্টা করেন। গেলো কুরবানি ঈদের পরে ওই ছাত্রকে তার নিজের রুমে নিয়ে জোরপূর্বক বলাৎকার করেন। পরবর্তীতে ওই ছাত্র তার পরিবারকে বিষয়টি জানায়। তখন ভুক্তভোগীর পরিবার ম্যানেজিং কমিটিকে বিষয়টি জানায়। ম্যানেজিং কমিটি অভিযুক্ত শিক্ষককে কারণ দর্শাতে বললে তিনি শারীরিক অসুস্থতার অজুহাত দেখিয়ে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করে তার নিজ বাড়ি ফরিদপুর চলে যায়। পরে ভুক্তভোগী পরিবার লোকলজ্জার ভয়ে থানা-পুলিশ করেনি। কিন্তু সম্প্রতি ওই শিক্ষক ম্যানেজিং কমিটির কিছু সদস্যকে ম্যানেজ করে পুনরায় স্বপদে বহালের চেষ্টা করেন। বিষয়টি জানাজানি হলে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর পিতা মুহতামিমের বিরুদ্ধে রাজৈর থানায় মামলা দায়ের করেছেন।
মামলার বাদী জানান, ‘বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। আমার পরিবারের ইজ্জতের ভয়ে ঘটনার সময় কিছু বলিনি। কারণ অভিযুক্ত শিক্ষক মাদরাসা থেকে পদত্যাগ করে চলে গেছেন। এর চেয়ে আর কি শাস্তি দিবো। কিন্তু আবার তিনি স্বপদে বহাল হতে চেষ্টা করছেন। তিনি সুযোগ পেলে আবারও কোনো ছেলেকে শারীরিক নির্যাতন করবে। তাই তার শাস্তির দাবিতে থানায় মামলা দায়ের করেছি। আশা করি, তার কঠোর বিচার হবে।’
পুনরায় অভিযুক্ত শিক্ষক মাদরাসায় আসায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পরে রাজৈর থানা পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। মামলা গ্রহণ করে দোষীর শাস্তির আশ্বাস দেন রাজৈর থানার ওসি মো. আলমগীর হোসেন। তিনি বলেন, ‘বলাৎকারের অভিযোগ দিয়েছে ভুক্তভোগীর বাবা। অভিযোগটি আমলে নিয়ে তদন্ত শুরু করেছি। দোষী হলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর বর্তমানে মাদরাসার পরিস্থিতি উত্তপ্ত হওয়ায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা আছে।’
মাদরাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি তৈয়ব আলী ফকির বলেন, ‘মুহতামিমকে ঘটনার বিষয় বলার পরে তিনি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করে চলে গেছেন। ফলে আমরা আর পদক্ষেপ নেয়া হয় নাই। কিন্তু বর্তমানে তিনি পুনরায় মাদরাসায় স্বপদে আসার জন্যে ম্যানেজিং কমিটির কয়েকজনকে খাতির করে আসার পায়তারা করছেন। ফলে তার বিচার চেয়ে জেলা প্রশাসক, থানা পুলিশের কাছে অভিযোগ দিয়েছি। তাকে আর আমরা মাদরাসায় চাই না। তার বিরুদ্ধে এর আগেও একাধিক শিক্ষার্থীকে বলাৎকার করার অভিযোগ রয়েছে।’
তবে অভিযুক্ত মুহতামিম মুফতি রেজাউল ইসলামকে মাদরাসায় গিয়ে পাওয়া যায়নি। তার মুঠোফোনে একাধিকার বার ফোন করলেও তিনি রিসিভ না করায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি’।
সুত্রঃ চ্যানেল 24