কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলায় যৌতুকের জন্য এক গৃহবধূকে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনাটি ঘটিয়েছে নির্যাতনের শিকার গৃহবধূর শ্বশুর-শাশুড়ি ও ননদ। খবর পেয়ে গৃহবধূকে বুধবার রাত ১১টার দিকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেছে পুলিশ।
এর আগে বুধবার (২৬ অক্টোবর) বিকালে উপজেলার ধামতী গ্রামের (উত্তরপাড়া) কোরেরপাড় দুলাল মিয়ার বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার (২৭ অক্টোবর) বিকালে নির্যাতনের শিকার গৃহবধূর শাশুড়ি জুলেখা বেগমকে আটক করেছে পুলিশ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, বাবার বাড়ি থেকে এক লাখ টাকা এনে দিতে বুধবার বিকালে গৃহবধূকে চাপ দেন শ্বশুরবাড়ির লোকজন। এতে রাজি না হওয়ায় শ্বশুর, শাশুড়ি ও ননদরা মিলে দুটি নারকেল গাছের সঙ্গে দুই হাত বেঁধে তার ওপর নির্যাতন চালানো হয়। পরে স্থানীয়দের চাপে হাতের বাঁধ খুলে দিলেও ঘরে আটকে রাতে আবারও নির্যাতন করা হয়। খবর পেয়ে স্বজনরা গৃহবধূকে উদ্ধারে ওই বাড়িতে গেলেও ঢুকতে দেয়নি। পরে পুলিশ নিয়ে রাত ১১টায় তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন নির্যাতনের শিকার গৃহবধূ জ্যোৎস্না জানান, প্রায় ১৬ বছর আগে ধামতী গ্রামের দুলাল মিয়ার ছেলে হেলালের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। বিয়ের সময় এক লাখ ৫০ হাজার টাকা যৌতুক দেওয়া হয়। বিয়ের পর তার বাবা মারা যান। এরই মধ্যে তাদের সংসারে দুই ছেলে ও দুই মেয়ের জন্ম হয়। ১২ বছর আগে স্বামী ওমান যাওয়ার সময় আরও দুই লাখ টাকার জন্য চাপ দিলে ভাইয়েরা এক লাখ টাকা দেন। এক বছর আগে স্বামী দেশে ফিরে আরও এক লাখ টাকার জন্য চাপ দেন।
তিনি আরও জানান, কয়েক মাস আগে স্বামী বিদেশে চলে যাওয়ার পর শ্বশুর দুলাল মিয়া, শাশুড়ি জুলেখা বেগম, দুই ননদ মৌসুমী ও পাখী প্রতিনিয়ত নির্যাতন চালাতে থাকেন। বুধবার বাবার বাড়ি থেকে এক লাখ টাকা এনে দিতে অমানবিক নির্যাতন চালান শ্বশুর, শাশুড়ি ও ননদরা। একপর্যায়ে দুই হাত দুটি নারকেল গাছে বেঁধে নির্যাতন চালান। রাতে ঘরে নিয়েও মারধর করেন তারা।
জ্যোৎস্নার মা ফরিদা বেগম বলেন, ‘মেয়েকে বহুবার বাড়ি নিয়ে যেতে চেয়েছি। কিন্তু চার সন্তানের মায়ায় আসেনি। যৌতুক নিয়ে গত ১৬ বছরে ১০-১২ বার সালিশ হয়েছে, ছেলের পক্ষ সালিশের রায় মেনে পরে আবার নির্যাতন চালায়। এখন আর কেউ সালিশ করতে আসে না। আমরা গরিব মানুষ, বারবার এত যৌতুক কোথায় থেকে দেবো? আমার চার ছেলে দিনমজুর। মেয়েকে বারবার নির্যাতনের বিচার চাই আমি।’
দেবিদ্বার থানার ওসি কমল কৃষ্ণ বলেন, সকালে শাশুড়ি জুলেখা বেগমকে আটক করা হয়েছে। মামলা প্রক্রিয়াধীন। ঘটনায় জড়িত বাকিদেরও আটক করা হবে
সুত্রঃ বাংলা ট্রিবিউন